পশ্চিমঘাটের মাঝামাঝি অঞ্চলকেই দক্ষিণ-ভারতের মালভূমি বলা হয়ে থাকে। পূর্বঘাট ও বঙ্গোপসাগরের মধ্যে রােমণ্ডল উপকূল অবস্থিত এবং পশ্চিমঘাট ও আৱসাগরের মধ্যে মালাবার ও কোঙ্কন প্রদেশ অবস্থিত। ঐতিহাসিক দিক থেকে দক্ষিণ-ভারতের এরূপ প্রাকৃতিক বিভাগ মােটেই গুরুত্বপূর্ণ নয়। মারাঠারা পশ্চিমঘাটের উভয় অংশেই বসবাস করে। তথাপি তাদের ভাষা ও সামাজিক রীতিনীতির মধ্যে কোনরূপ প্রভেদ নেই। বিন্ধ্যপর্বত উত্তর-ভারতের আক্রমণকারীদের প্রতিহত করতে দক্ষিণ-ভারতের অধিবাসীদের যথেষ্ট সহায়ক হয়। এই অঞ্চলে উত্তর-ভারতের কোন হিন্দু বা মুসলমান নৃপতি স্থায়ীভবে আধিপত্য স্থাপন করতে ব্যর্থ হন। এই অঞ্চলেই মারাঠারা শিবাজির নেতৃত্বে এক শক্তিশালী সাম্রাজ্য স্থাপন করে মােগল সম্রাজ্যের সঙ্গে সাফল্যের সঙ্গে। শক্তি পরীক্ষায় নেমেছিল। দক্ষিণ-ভারতেই মােগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের তথা মােগল সম্রাথোর সমাধি রচিত হয়। (২) সুদূর-দক্ষিণ : কৃষ্ণা ও তুন্দ্রা নদীর দক্ষিণে অবস্থিত তামিল অঞ্চলকে সুদূর-দক্ষিণ ভারত বলা হয়। কৌদ্ধন ও মালবার অঞ্চলের বিখ্যাত নৌ-বন্দরগুলি এই অঞ্চলেই অবস্থিত। দক্ষিণ-ভারতের মালভূমি থেকে এই অঞ্চল কোনরূপ সুনির্দিষ্ট প্রাকৃতিক সীমা দ্বারা বিচ্ছিন্ন না থাকলেও এর একটি স্বতন্ত্র সন্ত রয়েছে। এই অঞ্চলেই দ্রাবিড় সভ্যতা স্বীয় প্রতিভা নিয়ে গড়ে উঠেছিল। উত্তর-ভারতের হিন্দু ও মুসলমান নৃপতিরা যুগে যুগে সুদূর-দক্ষিণ ভারতে প্রভুত্ব বিস্তারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এই অঞ্চলেই প্রাচীনকালে চের, চোল, পাণ্ড প্রভৃতি শক্তিশালী রাজ্যের উদ্ভব হয়। এই অঞ্চল থেকেই প্রাচীনকালে ভারতীয়রা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় উপনিবেশ ও সাম্রাজ্য স্থাপন করেছিল।