বিশ শতকের প্রথম দিকের কথা। ফরিদপুর জেলার গােপালগঞ্জ তখনাে মহকুমা শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আর গােপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়াও পায়নি থানা শহরের মর্যাদা। টুঙ্গিপাড়া তখনাে ছিল অজ্ঞাত-অখ্যাত একটি গণ্ডগ্রাম। কিন্তু বাংলাদেশের আর দশটি গ্রামের মতােই মনােরম প্রকৃতিতে ছাওয়া, ছায়াঘেরা, মায়াভরা, হাজার পাখ-পাখালির কলকাকলি মুখর ছিল এই শান্ত-শীতল গ্রামটি। শ্যামল প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্যে এই গ্রামেই ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ, বাংলা ১৩২৭ সনের ২০শে চৈত্র মঙ্গলবার রাত আটটার সময় শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম হয়েছিল একটি ঐতিহ্যবাহী মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারে। তার পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান ও মাতার নাম। সায়েরা খাতুন। তখন ব্রিটিশ শাসনামল। শেখ লুৎফর রহমান সরকারি চাকরিজীবী। ছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমান যখন জন্মগ্রহণ করেন, তখন তাঁর পিতা শেখ লুৎফর রহমান ছিলেন ফরিদপুর জেলার মাদারীপুর মহকুমার দেওয়ানি আদালতের সেরেস্তাদার। সেই প্রতাপশালী ইংরেজ শামনামলে একজন মুসলমানের জন্যে এটা তখন চাট্টিখানি কথা ছিল। না। কারণ মুসলমানদের মধ্যে তখনাে পর্যন্ত শিক্ষা-দীক্ষায় জাগরণ আসেনি। মুসলিম পরিবারগুলাে ছিল কুসংস্কারাচ্ছন্ন। ইংরেজি স্কুলে পড়তে গেলে পাপ হবে; এরকমই ছিল তাদের ধারণা। শিক্ষাক্ষেত্রে এই ভুল ধারণা ও অনগ্রসরতার কারণে সরকারি অফিস-আদালতে মুসলমানদের মধ্যে চাকরিজীবীর সংখ্যা ছিল খুবই নগণ্য। এতই কম ছিল যে এক অফিসে মুসলমানদের হিসেব নিতে গেলে এক হাতের আঙ্গুলের গিটা গুনেও শেষ হতাে না। এই অল্প সংখ্যক মুসলিম চাকরিজীবীর মধ্যে শেখ লুৎফর রহমান ছিলেন একজন।