প্রায় পাঁচশাে বছর আগের কাহিনী। সুদূর তুর্কীস্থানের মধ্যে ছােট একটি পার্বত্য রাজ্য-নাম তার ফরগণা। তার উত্তরে দক্ষিণে পূৰ্বে দুর্ভেদ্য পাহাড় শ্রেণী-কেবলমাত্র পশ্চিমে সুন্দর সবুজ সমতল ভূমি। পাহাড়ে দেশ হলেও ফরগণা শস্য শ্যামলা। আঙ্গুর আর ডালিম, তরমুজ আর খােবানি তার মাঠে মাঠে অপৰ্য্যাপ্ত ফলে থাকত। স্রোতস্বিনী নদী উৰ্ব্বরা করে তুলেছিল সমস্ত দেশটিকে। তার তীরে তীরে মনােহর পুস্পােদ্যান। সেখানে পাশাপাশি ফুটেছে গােলাপ আর বনফুল। সবুজ ঘাসে ঢাকা মাঠের বুকে চন্দ্রাতপ রচনা করেছে পাইন আর দেবদারু। পরিশ্রান্ত তৃষ্ণার্ত পথিকের জন্য বিছানাে রয়েছে ছায়ানিবিড় আশ্রয়, সুমিষ্ট ফল আর স্বচ্ছ নদীর জল। ফরগণার বনে বনে কত পাখী আর পশুর বিচিত্র সমাবেশ। সাদা হরিণ, পাহাড়ী ছাগল আর খরগােসের ক্রীড়াভূমি এই ফরগণা। অধিবাসীদের জীবনযাত্রা ছিল সরল সহজ আর আড়ম্বরহীন। ছােট দেশ ফরগণা-আরন তার রাজা হল একটি কিশাের। চোখে তার বীরত্বের প্রতিভা, দেহে তার দুৰ্বার শক্তি। নাম জহিরুদ্দিন মহম্মদ বাবর। বয়স তার মাত্র বারাে বৎসর। পিতৃবংশ তাঁর তৈমুর লঙ থেকে উদ্ভূত-জননী ছিলেন দুর্ধর্ষ মােগল নেতা চেঙ্গীস খাঁর বংশের মেয়ে। বীরত্ব ও শৌর্যের এই দুইটি শ্রেষ্ঠ ধারা এসে মিলেছিল বাবরের দেহে। বিপদ ছিল তাঁর আবাল্য সহচর। ফরগণার ছােট সিংহাসনখানি নিয়েই শুরু হয়েছিল সেই বিপদের খেলা-তারই সঙ্গে লড়াই করে তিনি পেয়েছিলেন হিন্দুস্থানের স্বর্ণসিংহাসন। তাই তাঁর জীবনকাহিনী এত রহস্যময়-এত সুন্দর।