Loading...

চাঁদের পাহাড় (হার্ডকভার)

স্টক:

১৪০.০০ ১১২.০০

শঙ্কর একেবারে অজ পাড়াগাঁয়ের ছেলে। এইবার সে সবে এফ. এ. পাস দিয়ে এসে গ্রামে বসেছে। কাজের মধ্যে সকালে বন্ধুবান্ধবদের বাড়ীতে গিয়ে আড্ডা দেওয়া, দুপুরে আহারান্তে লম্বা ঘুম, বিকেলে পালঘাটের বাওড়ে মাছ ধরতে যাওয়া। সারা বৈশাখ এভাবে কাটবার পরে একদিন তার মা ডেকে বললেন—শােন্ একটা কথা বলি শঙ্কর। তাের বাবার শরীর ভাল নয়। এ অবস্থায় আর তাের পড়াশুনাে হবে কি করে? | কে খরচ দেবে? এইবার একটা কিছু কাজের চেষ্টা দ্যা। মায়ের কথাটা শঙ্করকে ভাবিয়ে তুললে। সত্যিই তার বাবার শরীর আজ ক'মাস। থেকে খুব খারাপ যাচ্ছে। কলকাতার খরচ দেওয়া তাঁর পক্ষে ক্রমেই অসম্ভব হয়ে। উঠেছে। অথচ করবেই বা কি শঙ্কর? এখন কি তাকে কেউ চাকরী দেবে? চেনেই বা সে। কাকে?
Chader Pahar,Chader Pahar in boiferry,Chader Pahar buy online,Chader Pahar by Bivutivushon Bondopadhai,চাঁদের পাহাড়,চাঁদের পাহাড় বইফেরীতে,চাঁদের পাহাড় অনলাইনে কিনুন,বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর চাঁদের পাহাড়,9847019100368,Chader Pahar Ebook,Chader Pahar Ebook in BD,Chader Pahar Ebook in Dhaka,Chader Pahar Ebook in Bangladesh,Chader Pahar Ebook in boiferry,চাঁদের পাহাড় ইবুক,চাঁদের পাহাড় ইবুক বিডি,চাঁদের পাহাড় ইবুক ঢাকায়,চাঁদের পাহাড় ইবুক বাংলাদেশে
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর চাঁদের পাহাড় এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 119.00 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Chader Pahar by Bivutivushon Bondopadhaiis now available in boiferry for only 119.00 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.
ধরন হার্ডকভার | ৭৯ পাতা
প্রথম প্রকাশ 2016-02-01
প্রকাশনী মনন প্রকাশ
ISBN: 9847019100368
ভাষা বাংলা

ক্রেতার পর্যালোচনা

4
1 reviews

1-3 থেকে 3 পর্যালোচনা

  • পর্যালোচনা লিখেছেন 'Nurullah Raj'
    গানের একটা কথা আছে- এই ছোট্ট ছোট্ট পায়ে চলতে চলতে ঠিক পৌঁছে যাবো সেই চাঁদের পাহাড় দেখতে পাবো। একটা প্রকাণ্ড ভয়ানক অরণ্য! পদে পদে সেখানে মৃত্যুর ফাঁদ পাতা, আবার প্রকৃতির অবাধ সৌন্দর্যে নিজের মৃত্যুকেও তুচ্ছ মনে হয়, এমন কোনো অনুভূতি পেয়েছেন কখনো? একটিবার চোখ বন্ধ করে ভাবুন তো কেমন হতে পারে সে অনুভূতি? সুখকর নাকি ভয়ানক? এই ভয়ের মাত্রায় আরেকটা ধাপ যোগ করে দেই। পাহাড়ে ওঠা আমাদের সকলের কাছেই রোমাঞ্চকর। অনেক কষ্টে প্রায় ৪০০০ ফুট পাহাড়ের উপরে ওঠার সৌভাগ্য হলো আপনার। এতটা উপরে ওঠার পরিশ্রম তার সাথে কোন পথে যাবেন বা আরও উপরে উঠতে হবে কিনা সে অনিশ্চয়তা। চারপাশে হিংস্র জন্তুর আনাগোনা। রোমহষর্ক এক পরিবেশ।হঠাৎ মাঝরাতে জেগে উঠে দেখলেন আগ্নেয়গিরির ভয়াবহ আগুনের তুবড়ি। এমন পরিস্থিতিতে কী করবেন আপনি? যুগান্তকারী লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর "চাঁদের পাহাড়" বইটি না পড়লে জীবনের একটা দিক হয়ত বেমালুম ভুলেই যেতাম। নিজেকে এমন কিছু পরিবেশে কল্পনা করতে সত্যিই বেশ রোমাঞ্চকর মনে হয় কিন্তু যেখানে সভ্য জগতের কোনো স্পর্শ নেই। চারিদিকে শুধু হায়নার পদছাপ। আমাদের জীবনে সচরাচর কী আছে? পরিবার, বন্ধু বান্ধব,৯-৫ টা অফিস কিংবা সারাদিন স্কুল কলেজ ভার্সিটিতে দৌড়াদৌড়ি। হয়ত দু একটা ঝামেলা মাঝে সাঝে চলে আসে। কিন্তু দিনশেষে, "All over it is okay!" "ওকে" অনেকে হয়ত খুশি,অনেকে জোর করে খুশি। কিন্তু!! এই অনেকের ভীরে অল্প একটা সংখ্যা আছে, যারা "ওকে" নয়। এদের অফিসের ঝামেলা পোষায় না, নির্বিঘ্ন জীবন এদের কাছে বড্ড পানসে। নিরামিষ জীবন নয়, বরং বিপদসংকুল ভয়াবহ পথটাই এদের পরম শান্তির জায়গা। "তুমি সেই দলের মানুষ, সারা আকাশ যাদের ঘরের ছাদ, সারা পৃথিবী যাদের পায়ে চলার পথ।" এমন কোনো কথা কখনো কাউকে নিয়ে ভেবেছেন? বা নিজে এমন হতে চেয়েছেন? শংকর! আমাদের শংকর কিন্তু এমনই জীবন চেয়েছিল। বাবা মায়ের কষ্ট দেখতে পারবে না বলে পাটকলের বাবু হতে সে রাজি হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু ভাগ্যে তাকে তার আসল জায়গায় টেনে নিয়ে গিয়েছিল। তার চাঁদের পাহাড়ে। আর তার সূচনা হলো উগান্ডার মোম্বাসা থেকে সাড়ে তিনশো মাইল পশ্চিমে রেললাইন তৈরির কাজে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে। না! সবটা গল্প তো কখনোই বলব না। শংকরের গল্প করতে গেলে রাত ফুরিয়ে যাবে তবু গল্প শেষ হবে না। কতভাবে যে তার কথা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বর্ণনা করব সে আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ শংকর এমন একটা চরিত্র যাকে অনুভব করার জন্যই হয়ত এতদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলাম। চারপাশের কোলাহলে হয়ত মনের মধ্যে এই শংকরই চাপা পড়ে ছিল। যাহোক বহুত হলো এসব রসের আলাপ। এবার মূল কথায় আসি। ভারতবর্ষের একটা ছেলে ভাগ্যের ফেরে হুট করে যে এভাবে আফ্রিকার আগ্নেয় পর্বতের সামনে পড়ে যাবে তা হলফ করে বলা যায় যে সে নিজেও জানত না। আফ্রিকার রেলস্টেশনের নির্মাণ কাজ থেকে সে যখন স্টেশনমাস্টার হয়ে গেল তখন সিংহের সাথে তার বোঝাপড়াটা সম্পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু মোটেও সুখকর কাজে সে যায়নি বাপু। এমন এক স্টেশনের দায়িত্ব তার যেখানে কোনো মানুষ নেই,বাজারঘাট নেই,এমনকি খাওয়ার পানিটা পর্যন্ত শহর থেকে আসে। দিনে একটা ট্রেন খালাস করা ছাড়া তার তেমন কাজ ছিল না বটে। কিন্তু এরই মধ্যে তার রোমাঞ্চকর জীবনের শুরু হয়ে গেছে। যাতে নবমাত্রা এনে যোগ করে দিল ডিয়েগো আলভারেজ। আলভারেজ সাহসিকতায় এবং মানসিকতায় শংকরের বাবাই ছিল বটে। শংকর উনার প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন। তাই পুত্রের স্নেহে শংকরকে দেখতেন তিনি। আর তাকে নিয়েই বলিষ্ঠ নির্ভীক এই ইংরেজ বৃদ্ধের যাত্রা শুরু হয়েছিল রিখটারসভেল্ড পর্বতের উদ্দেশ্যে। হীরের খনির খোঁজে জিম কার্টারের সাথে এ পথে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু বুনিপের ঘায়েলে প্রাণটা বেঘোরে গেল জিমের। তারপর বহু বছর ওদিকে আর মুখ করেননি তিনি। আফ্রিকার জংগল! যেখানে হিংস্র জীবের পাশাপাশি বাতাসে বিষ ছড়ায় গাছপালা সেখানে একাকী ভ্রমণ! এটা সাহস নয়, দুঃসাহস! এবার শংকরকে পেয়ে সেই ভ্রমণেই হারানো বল ফিরে পেলেন আলভারেজ। তারপরের গল্পটা ভয়াবহ। স্যার বিভূতিভূষণের সেই বর্ণনা আমার মত ক্ষুদ্র একজন মানুষের পক্ষে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। আমি শুধু পারি নিজের অনুভূতি বর্ণনা করতে। চোখ বন্ধ করলেই যেনো দেখতে পাই গভীর অরণ্য। আর তার সাথে দুজন মানুষ যারা প্রায় সাড়ে ৮ হাজার ফুট পর্বতে আরোহণ করেছে হীরের সন্ধানে।না! শুধু এতটুকু বললে এর একাংশও বলা যাবে না। যেখানে বেঁচে থাকা অপেক্ষা মৃত্যুই সুখকর। কিন্তু শংকর তো আর দশটা ছেলের মত নয়। আগ্নেয়গিরির প্রজ্বলিত শিখায় মৃত্যুভয়ে না দৌড়ে তার অপরূপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে চায় তার দুচোখ!! আবার এই শংকরই পথ হারিয়ে দুবার তো প্রায় মরেই যায়। আলভারেজ তাকে রক্ষা করেন। কিন্তু হায়! জিমের মত এই আলভারেজও প্রাণ হারাল বুনিপের হাতে নৃশংসভাবে। কিন্তু এবার? আফ্রিকার এমন এক জংগলে শংকর একা। কিন্তু মনোবলে যে বাঙালি এই ছেলেকে হারানো অসম্ভব। আলভারেজের শিষ্য সে। একাই পাড়ি দিল আফ্রিকার জংগল, হারিয়ে গিয়েছিল হীরক গুহার গোলকধাঁধা। কিন্তু বুঝতে পারেনি পথ খোঁজার আশ্রয় হিসেবে হলুদ হীরেগুলোকেই নুড়ি পাথর ভেবেছে সে। এই জংগল থেকে বের না হতেই কালাহারি মরুভূমি। তৃষ্ণায় মৃত্যু এখানে চিরাচরিত। তবু দমে যাওয়ার পাত্র তো সে নয়। হয়ত সেই সংকল্পই পাদুকা হয়ে কালাহারি মরুভূমিটা পার করিয়ে দিল শংকরকে৷ মাঝে অবশ্য এক কংকালের সাথে পরিচয় ঘটে তার। হ্যা!কংকাল। এই হীরে খুঁজতে এসে আত্তিলিও গাত্তি নামের লোকটিও যে প্রাণ দিল। অনিশ্চিত বন্ধুর জন্য লিখে যাওয়া তার চিঠিটা পড়ল শংকরের হাতে। আর তাকে সমিধি দেওয়ার উপহার হিসেবে মিলল পাঁচটি বড় বড় হীরক খন্ড৷ কিন্তু একটি কংকাল কীভাবে উপহার দিতে পারে?? প্রেতাত্মার গল্প তো এটি নয়। এ গল্প আমি খোলাসা করব না৷ বই পড়েই জেনে নিন। বেচারা শংকর কালাহারির মত মরুভূমিটাও পার হয়ে গেল। কিন্তু দক্ষিণ রোডেসিয়ার প্রান্তবর্তী চিমানিমানি পর্বতমালায় গিয়ে ভাগ্য নিজের খেল দেখাল। পরাজিত করল শংকরের ইচ্ছে শক্তি আর অদম্য সাহসকে। আবার এই ভাগ্যই জীবনের দূত হয়ে ক্রুগার ন্যাশনাল পার্ক জরিপ করবার প্রতিনিধিদের ডেকে নিয়ে গেল তার কাছে। জয় হলো আমাদের শংকরের। জিম কার্টার, আত্তিলিও গাত্তি, ডিয়েগো আলভারেজ এর মত বাঘা বাঘা লোক যেখানে ভাগ্যের দুর্বিপাকে পড়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল, সেখানে বিজয়ের হাসি হাসল আমাদের বাংলার ছেলে শংকর। কী ভাবছেন? তার গল্প শেষ? না শংকর আবার আসবে। বাংলা মায়ের কোল থেকে শংকরকে আবার ডেকে নিয়ে যাবে আফ্রিকার ভয়াবহ সৌন্দর্য প্রকৃতি। বইটি কেনো পড়বেন? একটা বই কীভাবে জীবন্ত হয়ে উঠতে পারে তার প্রমাণ হলো "চাঁদের পাহাড়"। বই পড়লে কল্পনায় চরিত্রগুলোর ছবি আঁকা যায়।কিন্তু নিজের মাঝেই যখন সে চরিত্রকে আঁকতে চাইবেন তখন তা সাধারণ কোনো বইয়ের পর্যায়ে থাকে না। শংকরের মত ভয়াবহ জীবনের রোমাঞ্চ অথবা ততটা কষ্টসহিষ্ণু আমরা নই। তাই সে জীবন বাস্তবে কখনো আসবে না। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমিটাকে একটু সাইডে রেখে নিজেকে ওমন মারাত্মক পরিবেশে কল্পনা তো করতেই পারি। নাহয় এটুকু আনন্দ নিয়েই কাটিয়ে দেবো সারাজীবন। নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, এই বইটি যদি আপনি না পড়েন তবে জীবনের একটা অংশের অর্থই কখনো খুঁজে পাবেন না। তাই আনন্দের জন্য নয়, বরং আপনার ভেতরের " আমি " টাকে উপলব্ধি করার জন্যই এই বইটা পড়বেন। এ বইটি তার সাদা পাতার কালো হরফ ছাপিয়েও স্বপ্ন এঁকে দিতে পারে পাঠকের চোখে। এর চরিত্র গুলো বিশ্লেষণ করা কিংবা পুরো গল্পকে নিজের মত বর্ণনা করতে চাইলে বইটিই তার মূল্য হারাবে হয়ত। তার থেকে বরং বইয়ের পাতাগুলোয় একটিবার হাত বুলিয়ে নিন। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিজের মত করেই অনুভব করুন। এতেই সার্থক হবে শংকরের অভিযাত্রা। পরিশেষে বলব, রিভিউয়ের প্রথমে উল্লেখ করা আমার আকাঙ্ক্ষানুযায়ী চাঁদের পাহাড় চাক্ষুশভাবে দেখতে না পেলেও বইটি পড়ে যে কোন পাঠক হয়তো হারিয়ে যাবেন চাঁদের পাহাড়ে।🥰🥰
    July 05, 2022
  • পর্যালোচনা লিখেছেন 'আঁখি আক্তার'
    “মানুষের আয়ু মানুষের জীবনের ভুল মাপকাঠি।” কথাটা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর “চাঁদের পাহাড়” উপন্যাস হতে নেয়া। সত্যিই মানুষের আয়ু কখনো তার জীবনের মাপকাঠি হতে পারে না। শত বছর বেঁচে থেকেও অনেকে কিছুই করতে পারেনা,আবার অনেকে আজও আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন। অমর হওয়ার জন্য জীবনের বৈচিত্র্যতা অর্জন করতে হয়, স্বপ্ন থাকতে হয়। ♣সম্পাদনা :- বিভূতিভূষণ কোনদিনও ভারতবর্ষের বাইরে পা রাখেননি। তিনি বিভিন্ন ভ্রমণ-বিষয়ক ম্যাগাজিন ও গাইড গ্রন্থ পড়েই আফ্রিকার এমন নিখুঁত বর্ণনা দিয়েছেন। তবে এ বর্ণনা একেবারেই যথার্থ এবং আফ্রিকার রহস্যময়তাকেই যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ♣সূচনাকথন:- স্বপ্ন সবাই দেখে, কজনা’র সত্যি হয় কি করে বলি? আর সেই কজনা যদি হয় নিম্ন মধ্যবিত্ত সংসারের ছেলে, তবে তো স্বপ্ন দেখাটাই ঘোরতর অন্যায়, তাই না? কিন্তু তারপরও কিছু মানুষ স্বপ্ন দেখে বলেই স্বপ্ন বাস্তবে ধরা দেয়। উপন্যাসের নায়ক শঙ্কর তেমনি এক স্বপ্নবাজ যুবক। এক সাধারন বাঙালি যুবকের আফ্রিকা জয়ের টান টান রোমাঞ্চকর কাহিনী নিয়ে গড়ে উঠেছে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত "চাঁদের পাহাড়" উপন্যাস। ১৯৩৭ সালে লিখিত এই ভ্রমণ অভিযান আজও আমার মতো রোমাঞ্চপ্রেমী ও ভ্রমণপ্রিয় পাঠকের মনে দোলা দিয়ে যায় সব সময়। ♣প্রেক্ষাপট:-; "চাঁদের পাহাড়" বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সর্বশ্রেষ্ঠ মৌলিক অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস,যা রহস্যময় সুদূর আফ্রিকার পটভূমিতে রচিত। ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাসটিই বাংলা ভাষায় সর্বাধিক জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ন উপন্যাস। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় আজ হতে প্রায় ৮৪ বছর আগে। তবে গল্পটির প্লট তারো আগের ১৯০৯-১৯১০ সালের। ♣চরিত্র বিশ্লেষণ :- ★শঙ্কর রায় চৌধুরী: উপন্যাসের নায়ক, বাংলার এক সাধারণ গ্রাম থেকে উঠে আসা তরুণ। সে বুদ্ধিমান, সাহসী, আত্মপ্রত্যয়ী এবং রোমাঞ্চইচ্ছুক। বাইশ কি তেইশ বছর বয়স তার। ★ডিয়েগো আলভারেজ: পর্তুগিজ অভিযাত্রীক ও স্বর্ণসন্ধানী। সে শঙ্করের বন্ধু ও পরামর্শদাতা ছাড়াও হিরের অনুসন্ধানে তার সাথে যায়। তারা চাঁদের পাহাড় খুঁজতে গিয়ে রিখটারসভেলড-এর গহীনে প্রবেশ করে। ★জিম কার্টার: ব্রিটিশ অভিযাত্রীক। প্রথমবারে সেই আলভারেজের সাথে হিরের খনীর সন্ধানে বেরিয়েছিল। কার্টার চাঁদের পাহাড় খুঁজতে গিয়ে বুনিপের হাতে মারা যায়। ★আত্তিলিও গাত্তি: ইতালীয় অভিযাত্রীক। সে ১৮৭৯ সালে নয়টি হিরের খনী আবিষ্কার করে, কিন্তু পরবর্তীতে এক গুহায় (শঙ্কর পথ হারিয়েই আবিষ্কার করে গুহাটি) খাবার-পানি হারিয়ে মৃত্যুবরণ করে। ♣পাঠ-পর্যালোচনা:- এ উপন্যাসের নায়ক তরুণ শঙ্কর এক বাঙালী নিম্ন মধ্যবিত্ত যুবক,এফ.এ (বর্তমান এইচ এস সি) পাশ করা শিক্ষিত বেকার। তার সবচেয়ে বেশি পছন্দ ভূগোল ও বিভিন্ন ধরনের ম্যাপ ঘাঁটাঘাঁটি করা। বাবার অসুখ, সংসারের অভাব-অনটনের করণে অকালেই তাকে পাটকলের চাকুরিতে যোগ দিতে হয়। কিন্তু তার মন ছুটে বেড়ায় দূর-দূরান্তে রোমাঞ্চের খোঁজে পুথিবীর দূর দূর দেশে শত দুঃসাহসিক কাজের মাঝখানে। মোটকথা রক্তে তার অ্যাডভেন্ঞ্চারের ডাক, পেটের দায়ে একসময় চাকরি নিয়ে ঘটনাচক্রে মোম্বাসা রেলওয়ের কর্মচারী হিসেবে আফ্রিকায় চলে যায়। সেখানে পরিচয় হয় এক ভবঘুরে প্রসপেক্টর দিয়েগো আলভারেজের সাথে, তার মুখে শোনে এক আশ্চর্য হীরার খনি আর সেই খনির পাহারাদার এক দানবের কথা, এক সাথে দু'জন বেরিয়ে পড়ে সেই রহস্যময় কিংবদন্তীর খনির খোঁজে। এরপর রুদ্ধশ্বাস অভিযান, রোমহর্ষক ঘটনাক্রম, কষ্ট, সাহস, বীরত্ব আর বন্ধুত্বের অবিস্মরণীয় এক কাহিনি। সোনার আর হীরে উদ্ধারে মরিয়া শঙ্কর কি শেষমেশ পারল জীবন নিয়ে বেঁচে ফিরতে? চাঁদের পাহাড় গল্পের উপজীব্য বিষয় সেটাই। ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি এক বাঙালী যুবকের বেঁচে থাকার লড়াই, হার না মানা মাসের পর মাস ভ্রমণ। সঙ্গীহারা হয়েও মনোবল জিইয়ে রাখার অন্তিম সংগ্রাম। এক মারাত্মক অভিযান! ♣বইটি কেন পড়বেন:- যারা বই পড়তে ভালোবাসে বিশেষ করে দুঃসাহাসিক, রোমাঞ্চকর, অভিযাত্রিক কাহিনী তাদের জন্য “ চাঁদের পাহাড়” অত্যন্ত রোমাঞ্চর একটি উপন্যাস। আলোচ্য উপন্যাসের মাধ্যমে স্বপ্ন, স্বপ্নের সত্যতা অনুসন্ধান, ভাগ্যের বিপর্যয়, প্রকৃতির প্রতিকূলতার সাথে প্রতিনিয়ত মানুষের যে লড়াই, অবশেষে ভাগ্য ও যে সাহস, ধৈর্য্য, আত্মপ্রত্যয় ও বীরত্বেও নিকট পরাজিত হতে পারে তার উজ্জ্বল উপলব্ধি। এছাড়াও বইটি পড়ে আফ্রিকার অনেক জানা- অজানা প্রাকুতিক সৌন্দর্য, জন্তু-জানোয়ার, পাহাড়-পর্বত, মরুভূমি ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যাবে। সর্বোপরি ইচ্ছাশক্তি মানুষকে কোথায় পৌছে দিতে পারে এই বইটি তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ♣পাঠ-প্রতিক্রিয়া:- "চাঁদের পাহাড়" উপন্যাস পড়ে আমি এতটাই মুগ্ধ যে কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না । এক নিঃশ্বাসে শেষ করার মত একটি উপন্যাস এটি। বাংলা সাহিত্যে এমন অসাধারণ নিখাদ অ্যাডভেঞ্চারের বই আর কয়টা আছে আমার জানা নেই। মধ্যরাতে জ্যোৎস্নার আলোতে লেখকের অ্যাডভেঞ্চার গল্পে নিজেকেও আফ্রিকার পাহাড়, গুহা,মরুভূমিতে হারিয়ে গা শিহরিত হচ্ছিলো। আমার মতে যেই বইটি পড়বে, সে বইয়ের পাতা ছেড়ে হারিয়ে যাবে গহীন আফ্রিকায়, পদে পদে লড়বে বিপদের সাথে, সিংহের সাথে করবে যুদ্ধ, মুগ্ধ চোখে আফ্রিকার পূর্ণিমা দেখবে, দেখবে বাওবাব গাছটা যেনো সত্যিই ছাতা মেলে ধরে আছে মোহময়ী পূর্ণিমায়। রাত্রির অপার অসীম সৌন্দর্য যেন সিংহের সান্নিধ্যকেও তুচ্ছ করে, এমনি ভয়ংকর সুন্দর। শেষ পর্যন্ত শঙ্করের কি পরিনতি হয়েছিল?শুধু এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য আপনাকে এই বইটি পড়তে অনুরোধ করবোনা বরং অনুরোধ করব আরো অনেক কারনে। আমার মতে, সাহিত্যের সার্থকতা হল গল্পের চরিত্রের মাঝে পাঠককে প্রবেশ করানো। এদিক দিয়ে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় শতভাগ সফল। যিনি কখনো আফ্রিকায় যান নি, কেবলমাত্র বই পত্র পরে আর ম্যাপ ঘেঁটে অর্জিত অভিজ্ঞতা দিয়ে এক অসাধারণ লেখনির মাধ্যমে আপনাকে নিয়ে যাবে আফ্রিকার গভীরে, সাভানা আর নিঝুম অরণ্যের গোলক ধাঁধার ভেতর দিয়ে।মাঝ রাতের আকাশে তারাদের ঝকমকে সৌন্দর্য কেবল শঙ্করকে না, আপনাকেও মুগ্ধ করবে! ♣লেখক সম্পর্কে কিছু কথা:- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় "চাঁদের পাহাড়" উপন্যাসটিতে আফ্রিকার পটভূমি এত সুন্দর ও নিঁখুত বর্ণনায় রোমাঞ্চকর এক কাহিনী তুলে ধরেছেন, বড়োই বিস্ময়কর ব্যাপার। লেখকের লেখা পড়ে আমিও বিস্মিত হচ্ছি বারেবারে। লেখকের কল্পনাশক্তি প্রখর। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের বইয়ের পাতায় পাতায় ঘরের কোণ ছেড়ে ঘুরিয়ে নিয়ে আসেন সূদুর আফ্রিকায় , ধু ধু মরুভূমির এতো নিখুঁত বর্ণনা, কাহিনি, প্লট, এককথায় অসাধারণ !ভাবতে বেশ অবাক লাগে যে কোন রকম বিদেশি গল্পের ছায়া অবলম্বন না করে আফ্রিকার এই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার গল্প কিভাবে লিখেছেন লেখক? এত নিখুঁত ভাবে বর্ণনা করেছেন সবকিছু যেন একটা জীবন্ত সিনেমা। চোখ শব্দ দেখবে, আর মন তার চিত্র ফুটিয়ে নিয়ে চলবে ভয়ানক রোমাঞ্চকর অভিযানে। বইটির পাতায় পাতায় টান টান উত্তেজনা আর রুদ্ধশ্বাস অ্যাডভেঞ্চারে টইটুম্বুর । কত সুচারু, নিখুঁত, শক্তিশালী তাঁর কলম, তাঁর কল্পনাশক্তি। তার বর্ণনাশৈলী সত্যিই অতুলনীয়। বিভূতিভূষণের গল্প সত্যিই কালজয়ী। ♣বইটির বিশেষত্ব :- রিখটারস্ভেল্ড পর্বতে গিয়ে জীবনমৃত্যু নিয়ে শঙ্করকে যে রোমাঞ্চকর ছিনিমিনি খেলতে হল তার আশ্চর্য বিবরণ যে-কোনো বয়সের কল্পনাকে উত্তেজিত করবে । সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যপার হল, মানুষই পারে অসম্ভব কে সম্ভব করতে । নৈরাশ্যের নিকষ আঁধারে আশার প্রদীপ জ্বালানো কেবল মানুষের পক্ষেই সম্ভব। জীবনকে বাজি রেখে এই ছুটে চলা কেবলই কি হীরা-জহরত আর রত্ন প্রাপ্তির আশায়? না, তা নয় । এ যাত্রা মানুষের অ্যাডভেঞ্চারের তৃঞ্চা মেটাবার, এ গল্প দুঃসাহসী অভিযাত্রিদের । বিখ্যাত ভ্রমনকারীদের অভিঞ্জতা অনুসরণে আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলের ভৌগোলিক সংস্থান এবং প্রাকৃতিক দৃশ্যাদির যথাযথ বর্ণনা দিয়েছেন লেখক । এবং গল্পের পাশাপাশি হুবহু আফ্রিকান পরিবেশের যে-সব নিপুণ ছবি আঁকা হয়েছে তা বাংলা বইয়ের জগতে আদর্শ স্থানীয় ।বহয়ত বইয়ের পাতায় লেখক কে এক সময় এ যাত্রার ইতি টানতে হয় কিন্তু সে সমাপ্তিও পাঠকের মনে আরেক রোমাঞ্চের তৃঞ্চা সঞ্চার করে যায়। বিভূতিভূষণের হাতে তরুণদের জন্যে লেখা এ-বই ক্লাসিক হিসেবে পরিগনিত হবার যোগ্য । ♣সার্বিক মূল্যায়ন :- কম্পিউটার-ইন্টারনেট-মোবাইলের আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির বিস্তারের বহু বছর আগে তিনি উপন্যাসটি লিখেছিলেন কেবলই মাত্র এভেইলেবল ম্যাপ আর বইপত্র পড়ে, যা পাওয়া সম্ভব হয়েছিল হাতের কাছে কল্পনার চোখ দিয়ে তিনি যে আফ্রিকাকে দেখেছিলেন, এবং পাঠককে দেখিয়েছেন, বোধ করি বাস্তবের চোখ দিয়েও বেশিরভাগ মানুষের কখনো তা দেখা সম্ভব হয় না। এদিক থেকেই "চাঁদের পাহাড়" অন্য যেকোন বাংলা অ্যাডভেঞ্চার/কিশোর উপন্যাস থেকে এগিয়ে থাকবে চিরকাল, উরাধুরা প্লট মাথায় আসলেই সেটা লেখা যায়, কিন্তু চাইলেই বিভূতিভূষণের মত প্রকৃতির বর্ণনা আর গল্পের লেখনি দিয়ে পাঠকের সামনে সেটা নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলা যায় না, মনে আজীবনের জন্য দাগ কাটা যায় না। কিশোর বয়সে চাঁদের পাহাড়-এর স্পর্শে প্রথম যে নিখাঁদ রোমাঞ্চ অনুভব করেছিলাম, সেটা আমার পাঠকজীবনে আজন্ম এক বিশেষ স্থান নিয়ে রেখেছে। ♣পাঠকের আগ্রহ ধরে রাখার ক্ষমতা:- লেখকের গল্প বলার ধরনটা বেশ ভালো ছিল। একজন পাঠককে গল্পের শেষ অবধি চৌম্বকীয় শক্তিতে টেনে নেওয়া নিঃসন্দেহে লেখকের সিদ্ধ হস্তের বহিঃপ্রকাশ। ♣উপসংহার :- অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় যেকোন বাঙ্গালীর এই বইটা পড়া বাধ্যতামূলক আমার মতে, বিদেশী সাহিত্যের পিছনে দৌড়ানোর বহু-বহুকাল আগেই যে আমাদের বাংলা ভাষাতেও একসময়ে কী কালজয়ী অসাধারণ রোমহর্ষক মৌলিক অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস লেখা হয়েছে সেটা যে "চাঁদের পাহাড়" পড়েছে কেবল সেই অনুধাবন করতে পারবে। । পার্সোনাল রেটিং ৯.৯/১০
    July 07, 2022
  • পর্যালোচনা লিখেছেন 'আঁখি আক্তার'
    “মানুষের আয়ু মানুষের জীবনের ভুল মাপকাঠি।” কথাটা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর “চাঁদের পাহাড়” উপন্যাস হতে নেয়া। সত্যিই মানুষের আয়ু কখনো তার জীবনের মাপকাঠি হতে পারে না। শত বছর বেঁচে থেকেও অনেকে কিছুই করতে পারেনা,আবার অনেকে আজও আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন। অমর হওয়ার জন্য জীবনের বৈচিত্র্যতা অর্জন করতে হয়, স্বপ্ন থাকতে হয়। ♣বই পরিচিতি:- ♣সম্পাদনা :- বিভূতিভূষণ কোনদিনও ভারতবর্ষের বাইরে পা রাখেননি। তিনি বিভিন্ন ভ্রমণ-বিষয়ক ম্যাগাজিন ও গাইড গ্রন্থ পড়েই আফ্রিকার এমন নিখুঁত বর্ণনা দিয়েছেন। তবে এ বর্ণনা একেবারেই যথার্থ এবং আফ্রিকার রহস্যময়তাকেই যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ♣সূচনাকথন:- স্বপ্ন সবাই দেখে, কজনা’র সত্যি হয় কি করে বলি? আর সেই কজনা যদি হয় নিম্ন মধ্যবিত্ত সংসারের ছেলে, তবে তো স্বপ্ন দেখাটাই ঘোরতর অন্যায়, তাই না? কিন্তু তারপরও কিছু মানুষ স্বপ্ন দেখে বলেই স্বপ্ন বাস্তবে ধরা দেয়। উপন্যাসের নায়ক শঙ্কর তেমনি এক স্বপ্নবাজ যুবক। এক সাধারন বাঙালি যুবকের আফ্রিকা জয়ের টান টান রোমাঞ্চকর কাহিনী নিয়ে গড়ে উঠেছে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত "চাঁদের পাহাড়" উপন্যাস। ১৯৩৭ সালে লিখিত এই ভ্রমণ অভিযান আজও আমার মতো রোমাঞ্চপ্রেমী ও ভ্রমণপ্রিয় পাঠকের মনে দোলা দিয়ে যায় সব সময়। ♣প্রেক্ষাপট:-; "চাঁদের পাহাড়" বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সর্বশ্রেষ্ঠ মৌলিক অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস,যা রহস্যময় সুদূর আফ্রিকার পটভূমিতে রচিত। ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাসটিই বাংলা ভাষায় সর্বাধিক জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ন উপন্যাস। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় আজ হতে প্রায় ৮৪ বছর আগে। তবে গল্পটির প্লট তারো আগের ১৯০৯-১৯১০ সালের। ♣চরিত্র বিশ্লেষণ :- ★শঙ্কর রায় চৌধুরী: উপন্যাসের নায়ক, বাংলার এক সাধারণ গ্রাম থেকে উঠে আসা তরুণ। সে বুদ্ধিমান, সাহসী, আত্মপ্রত্যয়ী এবং রোমাঞ্চইচ্ছুক। বাইশ কি তেইশ বছর বয়স তার। ★ডিয়েগো আলভারেজ: পর্তুগিজ অভিযাত্রীক ও স্বর্ণসন্ধানী। সে শঙ্করের বন্ধু ও পরামর্শদাতা ছাড়াও হিরের অনুসন্ধানে তার সাথে যায়। তারা চাঁদের পাহাড় খুঁজতে গিয়ে রিখটারসভেলড-এর গহীনে প্রবেশ করে। ★জিম কার্টার: ব্রিটিশ অভিযাত্রীক। প্রথমবারে সেই আলভারেজের সাথে হিরের খনীর সন্ধানে বেরিয়েছিল। কার্টার চাঁদের পাহাড় খুঁজতে গিয়ে বুনিপের হাতে মারা যায়। ★আত্তিলিও গাত্তি: ইতালীয় অভিযাত্রীক। সে ১৮৭৯ সালে নয়টি হিরের খনী আবিষ্কার করে, কিন্তু পরবর্তীতে এক গুহায় (শঙ্কর পথ হারিয়েই আবিষ্কার করে গুহাটি) খাবার-পানি হারিয়ে মৃত্যুবরণ করে। ♣পাঠ-পর্যালোচনা:- এ উপন্যাসের নায়ক তরুণ শঙ্কর এক বাঙালী নিম্ন মধ্যবিত্ত যুবক,এফ.এ (বর্তমান এইচ এস সি) পাশ করা শিক্ষিত বেকার। তার সবচেয়ে বেশি পছন্দ ভূগোল ও বিভিন্ন ধরনের ম্যাপ ঘাঁটাঘাঁটি করা। বাবার অসুখ, সংসারের অভাব-অনটনের করণে অকালেই তাকে পাটকলের চাকুরিতে যোগ দিতে হয়। কিন্তু তার মন ছুটে বেড়ায় দূর-দূরান্তে রোমাঞ্চের খোঁজে পুথিবীর দূর দূর দেশে শত দুঃসাহসিক কাজের মাঝখানে। মোটকথা রক্তে তার অ্যাডভেন্ঞ্চারের ডাক, পেটের দায়ে একসময় চাকরি নিয়ে ঘটনাচক্রে মোম্বাসা রেলওয়ের কর্মচারী হিসেবে আফ্রিকায় চলে যায়। সেখানে পরিচয় হয় এক ভবঘুরে প্রসপেক্টর দিয়েগো আলভারেজের সাথে, তার মুখে শোনে এক আশ্চর্য হীরার খনি আর সেই খনির পাহারাদার এক দানবের কথা, এক সাথে দু'জন বেরিয়ে পড়ে সেই রহস্যময় কিংবদন্তীর খনির খোঁজে। এরপর রুদ্ধশ্বাস অভিযান, রোমহর্ষক ঘটনাক্রম, কষ্ট, সাহস, বীরত্ব আর বন্ধুত্বের অবিস্মরণীয় এক কাহিনি। সোনার আর হীরে উদ্ধারে মরিয়া শঙ্কর কি শেষমেশ পারল জীবন নিয়ে বেঁচে ফিরতে? চাঁদের পাহাড় গল্পের উপজীব্য বিষয় সেটাই। ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি এক বাঙালী যুবকের বেঁচে থাকার লড়াই, হার না মানা মাসের পর মাস ভ্রমণ। সঙ্গীহারা হয়েও মনোবল জিইয়ে রাখার অন্তিম সংগ্রাম। এক মারাত্মক অভিযান! ♣বইটি কেন পড়বেন:- যারা বই পড়তে ভালোবাসে বিশেষ করে দুঃসাহাসিক, রোমাঞ্চকর, অভিযাত্রিক কাহিনী তাদের জন্য “ চাঁদের পাহাড়” অত্যন্ত রোমাঞ্চর একটি উপন্যাস। আলোচ্য উপন্যাসের মাধ্যমে স্বপ্ন, স্বপ্নের সত্যতা অনুসন্ধান, ভাগ্যের বিপর্যয়, প্রকৃতির প্রতিকূলতার সাথে প্রতিনিয়ত মানুষের যে লড়াই, অবশেষে ভাগ্য ও যে সাহস, ধৈর্য্য, আত্মপ্রত্যয় ও বীরত্বেও নিকট পরাজিত হতে পারে তার উজ্জ্বল উপলব্ধি। এছাড়াও বইটি পড়ে আফ্রিকার অনেক জানা- অজানা প্রাকুতিক সৌন্দর্য, জন্তু-জানোয়ার, পাহাড়-পর্বত, মরুভূমি ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যাবে। সর্বোপরি ইচ্ছাশক্তি মানুষকে কোথায় পৌছে দিতে পারে এই বইটি তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ♣পাঠ-প্রতিক্রিয়া:- "চাঁদের পাহাড়" উপন্যাস পড়ে আমি এতটাই মুগ্ধ যে কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না । এক নিঃশ্বাসে শেষ করার মত একটি উপন্যাস এটি। বাংলা সাহিত্যে এমন অসাধারণ নিখাদ অ্যাডভেঞ্চারের বই আর কয়টা আছে আমার জানা নেই। মধ্যরাতে জ্যোৎস্নার আলোতে লেখকের অ্যাডভেঞ্চার গল্পে নিজেকেও আফ্রিকার পাহাড়, গুহা,মরুভূমিতে হারিয়ে গা শিহরিত হচ্ছিলো। আমার মতে যেই বইটি পড়বে, সে বইয়ের পাতা ছেড়ে হারিয়ে যাবে গহীন আফ্রিকায়, পদে পদে লড়বে বিপদের সাথে, সিংহের সাথে করবে যুদ্ধ, মুগ্ধ চোখে আফ্রিকার পূর্ণিমা দেখবে, দেখবে বাওবাব গাছটা যেনো সত্যিই ছাতা মেলে ধরে আছে মোহময়ী পূর্ণিমায়। রাত্রির অপার অসীম সৌন্দর্য যেন সিংহের সান্নিধ্যকেও তুচ্ছ করে, এমনি ভয়ংকর সুন্দর। শেষ পর্যন্ত শঙ্করের কি পরিনতি হয়েছিল?শুধু এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য আপনাকে এই বইটি পড়তে অনুরোধ করবোনা বরং অনুরোধ করব আরো অনেক কারনে। আমার মতে, সাহিত্যের সার্থকতা হল গল্পের চরিত্রের মাঝে পাঠককে প্রবেশ করানো। এদিক দিয়ে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় শতভাগ সফল। যিনি কখনো আফ্রিকায় যান নি, কেবলমাত্র বই পত্র পরে আর ম্যাপ ঘেঁটে অর্জিত অভিজ্ঞতা দিয়ে এক অসাধারণ লেখনির মাধ্যমে আপনাকে নিয়ে যাবে আফ্রিকার গভীরে, সাভানা আর নিঝুম অরণ্যের গোলক ধাঁধার ভেতর দিয়ে।মাঝ রাতের আকাশে তারাদের ঝকমকে সৌন্দর্য কেবল শঙ্করকে না, আপনাকেও মুগ্ধ করবে! ♣লেখক সম্পর্কে কিছু কথা:- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় "চাঁদের পাহাড়" উপন্যাসটিতে আফ্রিকার পটভূমি এত সুন্দর ও নিঁখুত বর্ণনায় রোমাঞ্চকর এক কাহিনী তুলে ধরেছেন, বড়োই বিস্ময়কর ব্যাপার। লেখকের লেখা পড়ে আমিও বিস্মিত হচ্ছি বারেবারে। লেখকের কল্পনাশক্তি প্রখর। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের বইয়ের পাতায় পাতায় ঘরের কোণ ছেড়ে ঘুরিয়ে নিয়ে আসেন সূদুর আফ্রিকায় , ধু ধু মরুভূমির এতো নিখুঁত বর্ণনা, কাহিনি, প্লট, এককথায় অসাধারণ !ভাবতে বেশ অবাক লাগে যে কোন রকম বিদেশি গল্পের ছায়া অবলম্বন না করে আফ্রিকার এই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার গল্প কিভাবে লিখেছেন লেখক? এত নিখুঁত ভাবে বর্ণনা করেছেন সবকিছু যেন একটা জীবন্ত সিনেমা। চোখ শব্দ দেখবে, আর মন তার চিত্র ফুটিয়ে নিয়ে চলবে ভয়ানক রোমাঞ্চকর অভিযানে। বইটির পাতায় পাতায় টান টান উত্তেজনা আর রুদ্ধশ্বাস অ্যাডভেঞ্চারে টইটুম্বুর । কত সুচারু, নিখুঁত, শক্তিশালী তাঁর কলম, তাঁর কল্পনাশক্তি। তার বর্ণনাশৈলী সত্যিই অতুলনীয়। বিভূতিভূষণের গল্প সত্যিই কালজয়ী। ♣বইটির বিশেষত্ব :- রিখটারস্ভেল্ড পর্বতে গিয়ে জীবনমৃত্যু নিয়ে শঙ্করকে যে রোমাঞ্চকর ছিনিমিনি খেলতে হল তার আশ্চর্য বিবরণ যে-কোনো বয়সের কল্পনাকে উত্তেজিত করবে । সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যপার হল, মানুষই পারে অসম্ভব কে সম্ভব করতে । নৈরাশ্যের নিকষ আঁধারে আশার প্রদীপ জ্বালানো কেবল মানুষের পক্ষেই সম্ভব। জীবনকে বাজি রেখে এই ছুটে চলা কেবলই কি হীরা-জহরত আর রত্ন প্রাপ্তির আশায়? না, তা নয় । এ যাত্রা মানুষের অ্যাডভেঞ্চারের তৃঞ্চা মেটাবার, এ গল্প দুঃসাহসী অভিযাত্রিদের । বিখ্যাত ভ্রমনকারীদের অভিঞ্জতা অনুসরণে আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলের ভৌগোলিক সংস্থান এবং প্রাকৃতিক দৃশ্যাদির যথাযথ বর্ণনা দিয়েছেন লেখক । এবং গল্পের পাশাপাশি হুবহু আফ্রিকান পরিবেশের যে-সব নিপুণ ছবি আঁকা হয়েছে তা বাংলা বইয়ের জগতে আদর্শ স্থানীয় ।বহয়ত বইয়ের পাতায় লেখক কে এক সময় এ যাত্রার ইতি টানতে হয় কিন্তু সে সমাপ্তিও পাঠকের মনে আরেক রোমাঞ্চের তৃঞ্চা সঞ্চার করে যায়। বিভূতিভূষণের হাতে তরুণদের জন্যে লেখা এ-বই ক্লাসিক হিসেবে পরিগনিত হবার যোগ্য । ♣সার্বিক মূল্যায়ন :- কম্পিউটার-ইন্টারনেট-মোবাইলের আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির বিস্তারের বহু বছর আগে তিনি উপন্যাসটি লিখেছিলেন কেবলই মাত্র এভেইলেবল ম্যাপ আর বইপত্র পড়ে, যা পাওয়া সম্ভব হয়েছিল হাতের কাছে কল্পনার চোখ দিয়ে তিনি যে আফ্রিকাকে দেখেছিলেন, এবং পাঠককে দেখিয়েছেন, বোধ করি বাস্তবের চোখ দিয়েও বেশিরভাগ মানুষের কখনো তা দেখা সম্ভব হয় না। এদিক থেকেই "চাঁদের পাহাড়" অন্য যেকোন বাংলা অ্যাডভেঞ্চার/কিশোর উপন্যাস থেকে এগিয়ে থাকবে চিরকাল, উরাধুরা প্লট মাথায় আসলেই সেটা লেখা যায়, কিন্তু চাইলেই বিভূতিভূষণের মত প্রকৃতির বর্ণনা আর গল্পের লেখনি দিয়ে পাঠকের সামনে সেটা নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলা যায় না, মনে আজীবনের জন্য দাগ কাটা যায় না। কিশোর বয়সে চাঁদের পাহাড়-এর স্পর্শে প্রথম যে নিখাঁদ রোমাঞ্চ অনুভব করেছিলাম, সেটা আমার পাঠকজীবনে আজন্ম এক বিশেষ স্থান নিয়ে রেখেছে। ♣পাঠকের আগ্রহ ধরে রাখার ক্ষমতা:- লেখকের গল্প বলার ধরনটা বেশ ভালো ছিল। একজন পাঠককে গল্পের শেষ অবধি চৌম্বকীয় শক্তিতে টেনে নেওয়া নিঃসন্দেহে লেখকের সিদ্ধ হস্তের বহিঃপ্রকাশ। ♣উপসংহার :- অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় যেকোন বাঙ্গালীর এই বইটা পড়া বাধ্যতামূলক আমার মতে, বিদেশী সাহিত্যের পিছনে দৌড়ানোর বহু-বহুকাল আগেই যে আমাদের বাংলা ভাষাতেও একসময়ে কী কালজয়ী অসাধারণ রোমহর্ষক মৌলিক অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস লেখা হয়েছে সেটা যে "চাঁদের পাহাড়" পড়েছে কেবল সেই অনুধাবন করতে পারবে। । পার্সোনাল রেটিং ৯.৯/১০
    March 28, 2023
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
লেখকের জীবনী
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Bivutivushon Bondopadhai)

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১২ই সেপ্টেম্বর, ১৮৯৪ - ১লা নভেম্বর, ১৯৫০[১]) ছিলেন একজন জনপ্রিয় ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক। তিনি মূলত উপন্যাস ও ছোটগল্প লিখে খ্যাতি অর্জন করেন। পথের পাঁচালী ও অপরাজিত তাঁর সবচেয়ে বেশি পরিচিত উপন্যাস। অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে আরণ্যক, চাঁদের পাহাড়,আদর্শ হিন্দু হোটেল, ইছামতী ও অশনি সংকেত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। উপন্যাসের পাশাপাশি বিভূতিভূষণ প্রায় ২০টি গল্পগ্রন্থ, কয়েকটি কিশোরপাঠ্য উপন্যাস ও ভ্রমণকাহিনি এবং দিনলিপিও রচনা করেন। বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালী উপন্যাস অবলম্বনে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত চলচ্চিত্রটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। ১৯৫১ সালে ইছামতী উপন্যাসের জন্য বিভূতিভূষণ পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার রবীন্দ্র পুরস্কার (মরণোত্তর) লাভ করেন।

সংশ্লিষ্ট বই