সরলাব পায়ে সব সময় মল থাকে। মল বাজাইয়া হাঁটে সরলা,-ঝমর ঝমর ! চুপিচুপি নিঃশব্দে হাঁটিবার দরকার হইলেও মল সরলা খুলিযা ফেলে না, উপরের দিকে ঠেলিয়া তুলিয়া শক্ত করিয়া পায়ের মাংসপেশিতে আটকাইয়া দেয—মল আর বাজে না। প্রথম প্রথম শম্ভ এ খবর রাখিত না, ভাবিত বউ আশেপাশে আসিয়া পৌঁছানাের আগে আসিবে মলের আওয়াজের সংকেত--পিছন হইতে মােটর আসিবার আগে যেমন হর্নের শব্দ আসে। ক-বার বিপদে পডিয়া বউয়ের মলের উপর শম্ভুর নির্ভর টুটিয়া গিয়াছে।। ঘােষপাড়ার প্রধানতম পথটার ধারে একখানা বড়াে টিনের ঘরের সামনের খানিকটা অংশে বাঁশেব মাচার উপব শম্ভুর দোকান। মাটিব হাঁড়ি, গামলা, কেরােসিন কাঠের তক্তাব চৌকো চৌকো খােপ, ছােটোবড়াে বারকোশ, চটের বস্তা ইত্যাদি আধাবে রক্ষিত জিনিসপত্রের মাঝখানে শম্ভব বসিবার ও পয়সা বাখিবার ছােটো চৌকি ; হাত ও লােহার হাত বাড়াইয়া এখানে বসিযাই শম্ভু অধিকাংশ জিনিসেব নাগাল পায়। পিছনে প্রায় এক মানুষ উঁচু পাঁচসাবি কাঠেব তাক। সাবু, বার্লি ও দানাদা, চিনি রাখিবার জন্য এক পাশে কাচ বসানাে হলদে রঙের টিন, এলাচ, লবঙ্গ প্রভৃতি দামি মশলার নানা আকারের পাত্র, লণ্ঠনের চিমনি, দেশলাইয়ের প্যাকেট, কাপড়-কাচা গায়ে-মাখা সাবান, জুতার কালি, লজেনচু এবং মুদিখানা ও মনিহাবি দোকানেব আরও অনেক বিক্রেয় পদার্থের সমাবেশে তাকগুলি ঠাসা। তাকের তিন হাত পিছনে শম্ভর শয়নঘরের মাটিলেপা চাচের বেড়ার দেয়াল। তাক আর এই দেয়ালেব সমান্তরাল রক্ষণাবেক্ষণে যে সরু আবছা অন্ধকার গলিটুকুর সৃষ্টি হইয়াছে, শম্ভর সেটা অন্দবে যাতাযাত করাব পথ। সরলা বউ মানুষ, অন্দরেই তাব থাকার কথা, কিন্তু সরলা মাঝে মাঝে কবে কী, পাযের মল উপবে ঠেলিয়া দিয়া চুপিচুপি তাকের জিনিসের ফাকে চোখ পাতিয়া দাঁড়াইযা থাকে, স্বামীর দোকানদারি দেখে এবং খদ্দেরের সঙ্গে আলাপ-আলােচনা শােনে। বাড়িতে শম্ভু খুব নিরীহ শান্ত প্রকৃতির চুপচাপ মানুষ, ৮ন্তু দোকানে বসিয়া খদ্দেরের সঙ্গে। তাকে কথা বলিতে ও হাসি-তামাশা করিতে দেখিয়া সবলা অাক মানে। মানুষ বুঝিয়া এমন সব হাসির কথা বলে শম্ভু যে তাকের আড়ালে সবলার হাসি চাপিতে প্রাণ বাহির হইয়া যায়। ক্রেতারা। যদি পুরুষ হয় তবেই শম্ভব ব্যবহারে এ বকম মজা লাগে সরলার। কিন্তু দুঃখের বিষয়, শম্ভর দোকানে শুধু পুরুষেবাই জিনিস কিনিতে আসে না।