হাজারাে জাতি-ধর্মের বসতিস্থল ভারতভূমিতে স্মরণাতীত কাল থেকে গড়ে উঠেছে। অসংখ্য সম্প্রদায় যার মধ্যে ধর্মীয় সম্প্রদায়ই প্রধান। বাংলাও এর প্রভাবমুক্ত নয় । এখানেও হাজার হাজার বছর ধরে নানা জাতি-ধর্মের লােক সহাবস্থান করেছে এবং এর ফলে উদ্ভব ও বিকাশ ঘটেছে অসংখ্য ধর্মমতের। শাস্ত্রসম্মত ধর্মমত যেমন ভিন্ন ভিন্ন। রূপে বিকশিত হয়েছে, তেমনি তার সাথে তাল মিলিয়ে চলেছে নানা লােকধর্ম এবং বিস্ময়কর হলেও সত্য এই যে, বাংলায় প্রচলিত ধর্মের মধ্যে লােকধর্মের সংখ্যাই বেশি। বাউল’ এমনই একটি ধর্ম এবং বাংলার লােকধর্মগুলাের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রচলিত ধর্মমতের ন্যায় বাউলরা নির্দিষ্ট কোনাে আচার মেনে চলেন না বলে তাঁদের কোনাে বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করা যায় না। বাউলদের ধর্মীয়সম্প্রদায় বলার বিরােধিতা করে তাদের কেবল সাধকশ্রেণি বলে উল্লেখ করার পক্ষেও পণ্ডিতবর্গের সমর্থন আছে। আবার কোনাে কোনাে গবেষক বাউলসাধনাকে কেবল একটি তত্ত্ব বলে থাকেন। বাউল-গবেষক সুধীর চক্রবর্তী (জ. ১৯৩৪) এই প্রসঙ্গে বলেন: এদেশে বাউল একটি তত্ত্ব হিসাবে গৃহীত হয়েছে, ধর্মহিসাবে নয় । এরা একই সঙ্গে বৈদিক কর্মকাণ্ড এবং ব্রাহ্মণ্য আচার আচরণের বিরােধী। এদের ভাবনা ধারণা গঠনে বৈষ্ণবীয় রাগানুগা সাধন ও পরকিয়া মৈথুনকেন্দ্রিক কায়াবাদ আছে । বেশ কিছুটা প্রতিবাদী ইসলামী স্পর্শ এবং অনেকটা সুফিবাদের সংক্রাম আছে। বৌদ্ধ শূন্যবাদ ও নাথপত্রে কিছু কিছু সংরাগও লক্ষণীয়। এককথায় বাউল ভাবনায় এক উদার ও সমন্বয়বাদী মানবচেতনা কাজ করেছে, যার নেতৃত্বে শাস্ত্র বা মন্ত্র নেই-আছে গান আর গুরুর নির্দেশ। ৭ টি একশ্রেণির মানুষের কাছে।