বাংলাদেশের বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে প্রথমদিকে বলা হতাে। স্যাটেজ' সরকার, কারণ বিরােধী দলের সকল কর্মকাণ্ডকে সরকার স্যাবােটেজ হিসেবে দেখতে এবং এ মর্মে গণমাধ্যমে প্রচার চালাতাে। বর্তমানে এ সরকারকে বলা হচ্ছে 'চুক্তির সরকার, কারণ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এ সরকার নানারকম চুক্তি স্বাক্ষরের কাজে ব্যস্ত রয়েছে। এসব চুক্তির অধিকাংশই অসম শক্তির অধিকারী প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সাথে। '৭৫ পরবর্তী কোনাে সরকারের সাথেই বিরাজমান বিভিন্ন সমস্যা (যেমন গঙ্গার পানি বন্টন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিদ্রোহ, সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া ইত্যাদি) নিয়ে কোনাে ফলপ্রসূ আলােচনার জন্য ভারত সরকার এগিয়ে আসেনি বরং টালবাহানা করে বাংলাদেশের ওপর চাপ প্রয়ােগ অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গার পানি বন্টন সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। সরকারের প্রচার অনুযায়ী এ চুক্তি এক বিরাট সাফল্য। কিন্তু দেশের বিশিষ্ট পানি বিশেষজ্ঞগণ এ চুক্তি বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে, ভারত যদি ফারাক্কার ওপর একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে নেয় এবং তার ফলে যদি পদ্মায় যথেষ্ট পানি না আসে, তবে বাংলাদেশের পক্ষে কোনাে কৈফিয়ৎ চাওয়া যাবে না। প্রতারণামূলক এ চুক্তির অসারতা ইতিমধ্যেই স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে। সরকারি প্রচার মাধ্যমেও এ চুক্তির সাফাই গাওয়ার তীব্রতা অনেকাংশে কমে গেছে। পানি চুক্তির পরে সরকার এখন বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি, ট্রানজিট চুক্তি, চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে অবাধে মালামাল (অস্ত্রপাতি) পরিবহণ চুক্তি এবং ভারতীয় প্রস্তাব মতে, উপ-আঞ্চলিক জোট গঠনের চুক্তি সম্পাদনের কাজে ব্যস্ত রয়েছে। এসব চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে শুধু ভারতীয় স্বার্থ রক্ষা হবে আশংকায় দেশের অভ্যন্তরে প্রতিবাদের ঝড় ওঠেছে।