কালকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ অজিতকুমার ঘােষ বাংলা নাটকের ইতিহাস' গ্রন্থে লিখেছেনঃ | “সংস্কৃত নাটকের সৃষ্টি এবং অভিনয় রাজাদের অনুগ্রহ এবং আনুকুল্যেই হইয়া আসিয়াছিল। সেই রাজাদের বিলােপের সঙ্গে সঙ্গে নাটকের স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে। সমগ্র মুসলমান রাজত্বে নাটকের পুনঃবিকাশ এবং রঙ্গালয়ের সৃষ্টি হয় নাই। মুসলমানগণ নাট্যকলা ও অভিনয় প্রথার ঘাের বিরােধী। পৃথিবীর কোথাও তাহারা। নাটকের উদ্ভাবন করিতে সাহায্য করে নাই। শিক্ষা এবং আমাদের এই শ্রেষ্ঠ উপায়টি তাঁহাদের কাছে সম্পূর্ণ অপরিজ্ঞাত ছিল। মুসলমানদের আগমনে বাংলা সাহিত্যের অশেষ উপকার সাধিত হইয়াছিল সন্দেহ নাই। তাহারা বাংলা ভাষা চর্চায় এবং বাংলা সাহিত্য প্রণয়নে অশেষ উৎসাহ দিয়াছিলেন। কিন্তু তাহারা নাটকের বিরােধী ছিল বলিয়াই তাহাদের আমলে নাটকের বিকাশ হয় নাই। - ডঃ অজিত কুমার ঘােষ, বাংলা নাটকের ইতিহাস, কলিকাতা, পৃ-৫। | ভারতে 'সমগ্র মুসলমান রাজত্বে নাটকের পুনঃবিকাশ এবং রঙ্গলয়ের সৃষ্টি হয় নাই'- উক্তিটি সত্য। মুসলমান সুলতানদের নাটকের প্রতি বিরূপ ধারণা পােষণের কারণ আছে। হাজার বছর আগে ভারতে সুলতান মাহমুদের আগমনের সময় ঐতিহাসিক আলবেরুণী তার সাথে ভারতে আসেন এবং কিছুকাল ভারতে অবস্থান করেন। বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক আবুল ফজল লিখেছেন। “১০৩০ খৃষ্টাব্দে সােলতান মাহমুদের মৃত্যু ঘটে। কাজেই আলবেরুনী যে তার ভারত ভ্রমণ তার আগেই শেষ করেছেন তা সহজেই অনুমান করা যায়। গভীর অধ্যয়ন ও সাক্ষাৎ অভিজ্ঞতা এ দুয়ের ফল তার 'ইণ্ডিয়া'। এদেশের ধর্ম দর্শন আর লােকাচার সব কিছুই নিখুঁত আর নিরপেক্ষভাবে বর্ণিত হয়েছে-তার বইতে। এ কারণেই বইটির বিশেষ মূল্য এবং আরাে তা প্রামাণ্য ঐতিহাসিক দলিল হিসাবে স্বীকৃত।”