আঙ্গিক-বিবেচনায় উপন্যাস পাশ্চাত্য প্রকরণ। বলা হয়ে থাকে, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। ইউরােপীয় উপন্যাসকে মডেল হিসেবে নিয়ে প্রথম সার্থক বাংলা উপন্যাস রচনা করেছেন। বঙ্কিমচন্দ্রের বহির্বিশ্বের উপন্যাসের ফর্ম অনুসরণ বাংলা সাহিত্যের জন্য দুর্ভাগ্য না সৌভাগ্যের ব্যাপার, সে বিচারে না গিয়েও এ কথা বলা যায় যে, দীর্ঘদিন ধরে বাংলা সাহিত্য তথা ভারতবর্ষে উপন্যাসােচিত কাহিনীর যে বিষয়আশয় গড়ে উঠেছিল তা বাদ দিয়ে তিনি সম্পূর্ণ নতুন একটি পথকে অবলম্বন করেছেন। মানবসম্প্রদায় আজ গল্প -রসিক। গল্প শােনার আগ্রহ তার চিরন্তন। আবহমানকাল থেকে এ দেশের মানুষও মুখে মুখে বিভিন্ন গল্প তৈরি করে এসেছে। কখনাে কখনাে সেগুলাে স্থান পেয়েছে সাহিত্যেও। সংস্কৃত কাব্য-আখ্যায়িকা, পঞ্চতন্ত্র, | বৌদ্ধ-জাতকের গল্প, রূপকথা, চরিত সাহিত্য, মঙ্গলকাব্য, মৈমনসিংহ-গীতিকা, | রােমান্টিক প্রণয়ােপাখ্যানগুলাের মধ্য দিয়ে প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য গল্পকথনের পদ্ধতি আয়ত্ত ও মানুষের হৃদয়ানুভূতিকে আত্বীকৃত করে ধীর পায়ে এগুচ্ছিল পূর্ণাঙ্গ উপন্যাসের দিকে। কিন্তু ঔপনিবেশিক সমাজ-ব্যবস্থায় কাব্যের এই নিরবচ্ছিন্ন শান্ত গতি ব্যাহত হল, প্রয়ােজন হল অধিকতর সমাজ-সম্পৃক্ত সাহিত্যের, সময়ের প্রয়ােজনেই আবির্ভূত হলেন ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত। এরপর ভারতবর্ষে ঘটে গেল অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন—ইংরেজি শিক্ষার পত্তন, ছাপাখানা স্থাপন, ইয়ং বেঙ্গলের আগমন, কলকাতায় বাবু কালচারের উত্থান, সুবিধাভােগী মধ্যশ্রেণীর অ্যুদয় ইত্যাদি; যেগুলাে বাঙালি সমাজ ও বাংলা সাহিত্যের জন্য ছিল তাৎপর্যবহ। এই সময় ও সমকালের।