মুক্তিযুদ্ধের সময় শত্রু বাহিনীকে কাছে থেকে দেখার খুব শখ হয় বিলুর। শহরের রাস্তায় কার্য দিয়ে ওরা দৈত্য-দানাের মতাে দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল। সাঁজোয়া গাড়িতেও এ্যাটেনশন ভঙ্গিতে দাঁড়ানাে। গায়ে জঙলি পােশাক, মাথায় হ্যালমেট, হাতে মেশিনগান। গুলি করার জন্য চারদিকে বাঙালি। দুশমন খুঁজছে। যারা খুব কাছে থেকে দেখেছে ওদের, তাদের মধ্যে বিলুর। বাবাও একজন। বাবার কাছে হানাদার বাহিনীর গল্প শুনেই তাে বাড়ির সবাই ভয়ে অস্থির। তার ওপর বাড়িতে চুপচাপ লুকিয়ে থাকার সময় ওদের গাড়ি ও গুলির শব্দ বিলু নিজের কানেও শুনেছে একদিন। কিন্তু রাস্তায় ছুটে গিয়ে দেখার সাহস হয়নি। | শহরের বাসা ছেড়ে পালাবার সময়, শত্রুদের চোখে ধরা পড়ার ভয়ে বিলুরা বড় রাস্তাতেও ওঠেনি। অলিগলি পেরিয়ে গ্রামের ভেতরে ঢুকেছে। তারপর অনেকটা মেঠো পথঘাট ভেঙে রতনপুরে মামাবাড়ি। এই গণ্ডগ্রামের কাঁচা রাস্তায় হানাদার বাহিনীর সাঁজোয়া গাড়ি-ট্যাংক আসা সহজ নয়। তারপরও হঠাৎ ওদের হানা খাওয়ার ভয়ে তটস্থ গ্রামবাসী। শত্রুকে চোখে না দেখেও সবার মুখে মুখে খানসেনা-মিলিটারির গল্প। প্রতিদিনই ওরা দেশটাকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে। মানুষ মেরে মেরে রক্তের নদী বইয়ে দিচ্ছে। স্বাধীনতা চায় বলে সব বাঙালিকে মেরে ওরা দেশটাকে শশ্মান বানাবে। তারপর বাংলার মাটি-গাছ-ফসল এবং মানুষের সব সম্পদ দখল করে নেবে।