ইমাম আহমদ ইবনে শোয়াইব আন-নিসায়ী (রহ.) এর আমিরুল মুমিনীন হযরত আলী ইবনে আবি তালিবের অনন্য বৈশিষ্ট্যাবলি এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 210.00 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। amirul mu minin ali ibn abe talib er anonnay boisistabali by Imam Ahmed Ibn Shoaib An-Niyasi (Rah.)is now available in boiferry for only 210.00 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.
আমিরুল মুমিনীন হযরত আলী ইবনে আবি তালিবের অনন্য বৈশিষ্ট্যাবলি (হার্ডকভার)
অনুবাদক: মোবারক সালমান
৳ ৩০০.০০
৳ ২১০.০০
একসাথে কেনেন
ইমাম আহমদ ইবনে শোয়াইব আন-নিসায়ী (রহ.) এর আমিরুল মুমিনীন হযরত আলী ইবনে আবি তালিবের অনন্য বৈশিষ্ট্যাবলি এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 210.00 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। amirul mu minin ali ibn abe talib er anonnay boisistabali by Imam Ahmed Ibn Shoaib An-Niyasi (Rah.)is now available in boiferry for only 210.00 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.
ধরন | হার্ডকভার | ১৮৪ পাতা |
---|---|
প্রথম প্রকাশ | 2022-02-01 |
প্রকাশনী | আলে রাসূল পাবলিকেশনস্ |
ISBN: | 9789849479086 |
ভাষা | বাংলা |
ইমাম আহমদ ইবনে শোয়াইব আন-নিসায়ী (রহ.) (Imam Ahmed Ibn Shoaib An-Niyasi (Rah.))
ইমাম নিসায়ী(র.) ইলমে হাদীসের আকাশে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি ‘সুনানে নিসায়ী’ সহ অনেক মূল্যবান গ্রন্থ প্রণয়ন করে মুসলিম বিশ্বে অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন। বিশ্বস্ততা, আমানতদারিতা, ন্যায়পরায়ণতা ও আল্লাহভীরুতায় তিনি ছিলেন অনন্য। হাদীস চর্চায় তিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। নাম ও পরিচিতি: ইমাম নিসায়ী-এর প্রকৃত নাম ‘আহমাদ’, পিতার নাম শো‘আইব। উপাধি اَلْاِمَامُ الْحَافِظُ (আল-ইমামুল হাফেয), اَلْحَافِظُ الْحُجَّةُ (আল-হাফেযুল হুজ্জাহ), উপনাম আবু আব্দুর রহমান, নিসবতী নাম আল-খোরাসানী, আন-নিসায়ী। ‘নাসাথ-এর দিকে সম্বন্ধিত করে তাঁকে ‘নিসায়ী’ বলা হত। ‘নিসা’ খোরাসানের একটি প্রসিদ্ধ শহর। আরবের লোকেরা কখনো কখনো এটাকে ‘নাসাবী’ (النَّسَوِي) বলে থাকে। কিয়াস হিসেবে উচ্চারণ এভাবেই হওয়া উচিত। তবে ‘নাসায়ী’ উচ্চারণটিই সর্বাধিক প্রসিদ্ধ। তাঁর পুরো বংশপরিক্রমা হলÑ “আবু আব্দুর রহমান আহমাদ ইবনে শো‘আইব ইবনে আলী ইবনে সিনান ইবনে বাহার আল-খোরাসানী আন-নিসায়ী।” কোন কোন ঐতিহাসিক ইমাম নিসায়ী (রহ.)-এর বংশপরিক্রমায় আহমাদ ইবনে শো‘আইব ইবনে আলী-এর পরিবর্তে আহমাদ ইবনে আলী ইবনে শো‘আইব উল্লেখ করেছেন। এ দু’টো বর্ণনার মধ্যে সমন্বয় সাধন এভাবে করা যায় যে, দাদার প্রসিদ্ধি ও পরিচিতির কারণে পুত্রের সম্পর্ক কখনো কখনো দাদার প্রতি আরোপ করা হতো। [তাহযীবুল কামাল, খÐ ১, পৃষ্ঠা ৩৪০; আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া, খÐ ১১, পৃষ্ঠা ১৪০।] জন্ম: ইমাম নিসায়ী (রহ.) ২১৫ হিজরী মোতাবেক ৮৩০ খ্রিষ্টাব্দে মতান্তরে ২১৪ হিজরীতে খোরাসানের ‘নিসা’ নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। এ স্থানের দিকে সম্বন্ধিত করে তাঁকে ‘আন-নিসাঈ’ বলা হয়। এ নামেই তিনি সমধিক প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন। আল্লামা ইবনুল আছীর ও জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রহ.) বলেনÑ “তিনি ২২৫ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন।” কিন্তু ইবনে মানযূর, আল-মিযযী ও আল্লামা যাহাবী (রহ.) বলেনÑ “তিনি ২১৫ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেছেন। এটিই প্রাধান্যযোগ্য অভিমত।” শিক্ষা জীবন: ইমাম নিসায়ী (রহ.)-এর সময়ে খোরাসান ও তার পার্শ^বর্তী এলাকা সমূহ জ্ঞান-বিজ্ঞান ও ইলমে হাদীসের কেন্দ্রভূমি হিসেবে পরিচিত ছিল। সেখানে অনেক খ্যাতনামা বিদ্বানের সমাবেশ ঘটেছিল। ইমাম নিসায়ী (রহ.) স্বীয় জন্মভূমিতেই প্রখ্যাত আলেমগণের তত্ত¡াবধানে পড়া-লেখা শুরু করেন। পনের বছর বয়স পর্যন্ত তিনি স্বদেশেই কুরআন মাজীদ হিফয ও প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন। দেশ ভ্রমণ: ইমাম নিসায়ী (রহ.) নিজ এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনের পর বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করে ইলমে হাদীসে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। তিনি ২৩০ হিজরী মোতাবিক ৮৪৪ খ্রিষ্টাব্দে উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য মাতৃভূমির মায়া ত্যাগ করে তৎকালীন সময়ের বিভিন্ন দেশ ও জনপদের খ্যাতিমান মনীষীদের দরজায় কড়া নাড়েন। ইমাম নিসায়ী (রহ.) নিজেই বলেছেনÑ “আমি ২৩০ হিজরীতে সর্বপ্রথম কুতায়বা ইবনে সাঈদের নিকট গমন করি এবং তাঁর সান্নিধ্যে এক বছর দু’মাস অবস্থান করি।” এ সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র পনের বছর। শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলভী (রহ.) বলেনÑ “‘তিনি অনেক বড় বড় শায়খের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি খোরাসান, হিজায, ইরাক, জাযীরা, শাম, মিশর প্রভৃতি শহরে পরিভ্রমণ করেন।” হাফেয ইবনে কাছীর (রহ.) বলেনÑ “رَحَلَ إِلَى الْآفَاقِ، وَاشْتَغَلَ بِسَمَاعِ الْحَدِيْثِ وَالِاجْتِمَاعِ بِالْأَئِمَّةِ الْحُذَّاقِ، وَمَشَايِخُهُ الَّذِيْنَ رَوَى عَنْهُمْ مُشَافَهَةً. ‘তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রমণ করেন এবং অভিজ্ঞ ইমামগণের নিকট থেকে হাদীস শ্রবণে মনোনিবেশ করেন। আর যাদের নিকট থেকে তিনি মুখে মুখে হাদীস বর্ণনা করেছেন, তাঁদের নিকট থেকেও হাদীস শ্রবণ করেন।” আল্লামা ইউসুফ আল-মিযযী ‘তাহযীবুল কালাম’ গ্রন্থে লিখেছেনÑ “তিনি বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন এবং খোরাসান, ইরাক, হিজায, মিসর ও জাযীরার একদল মুহাদ্দিসের নিকট থেকে হাদীস শ্রবণ করেছেন।” ইমাম যাহাবী (রহ.) বলেনÑ “জ্ঞান অন্বেষণের জন্য তিনি খোরাসান, হিজায, মিসর, ইরাক, জাযীরা, সিরিয়া এবং সীমান্ত এলাকায় ভ্রমণ করেন। অতঃপর মিসরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।” শিক্ষকমন্ডলী: ইমাম নিসায়ী (রহ.) স্বদেশে হুমাইদ ইবনে মাখলাদ (মৃত্যু ২৪৪ হিজরী), আম্মার ইবনুল হাসান (মৃত্যু ২৪২ হিজরী) প্রমুখ খ্যাতিমান শায়খের নিকট শৈশবকালে শিক্ষার্জন করেন। ড. তাকীউদ্দীন নদভী স্বীয় ‘আ‘লামুল মুহাদ্দিসীন’ গ্রন্থে লিখেছেনÑ “তিনি অসংখ্য মনীষী থেকে হাদীস শ্রবণ করেছেন। তিনি সর্বপ্রথম বিদেশে পরিভ্রমণ করে কুতাইবা ইবনে সাঈদ (মৃত্যু ২৪০ হিজরী)-এর নিকট থেকে জ্ঞানার্জন করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য শিক্ষকের মধ্যে রয়েছেন ইসহাক ইবনে রাহওয়াইহ [ইমাম বুখারী (রহ.)-এরও উস্তাদ], মুহাম্মাদ ইবনে নযর, আলী ইবনে হাজার, ইউনুস ইবনে আব্দুল আলা, মুহাম্মাদ বিন বাশার, ইমাম আবূ দাঊদ সিজিস্তানী প্রমুখ। ইবনে হাজার আসক্বালানী (রহ.) ইমাম বুখারী (রহ.)-কেও ইমাম নিসায়ী (রহ.)-এর শিক্ষক হিসেবে গণ্য করেছেন। অনুরূপভাবে, আবু যুর‘আ ও আবু হাতিম আর-রাযী থেকেও তার হাদীস বর্ণনা প্রমাণিত হয়েছে তাঁর উল্লেখযোগ্য শিক্ষকমÐলীর মধ্যে আরো রয়েছেন, বিশর ইবনে হেলাল, আল-হাসান ইবনুস সাববাহ আল-বাযযার, আম্মার ইবনে খালেদ আল-ওয়াসিতী, ইমরান ইবনে মূসা আল-কাযযায প্রমুখ। ‘সুনানে কুবরাত’-এ ইমাম নিসায়ী (রহ.) ৪০৩ জন শিক্ষকের নিকট থেকে এবং ‘সুনানে ছুগরা’ তথা সুনানে নিসায়ীতে ৩৩৫ জন শায়খের নিকট থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে ইবনে আসাকিরের বর্ণনা মতে তাঁর শিক্ষকের সংখ্যা ৪৪৪ জন। ছাত্রবৃন্দ: দেশ-বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পর ইমাম নিসায়ী (রহ.) হাদীসের দরস প্রদান শুরু করেন। অনেক শিক্ষার্থী তাঁর নিকট থেকে ইলমে হাদীস শিক্ষা লাভ করেছে। আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (রহ.) বলেনÑ “মিসরে তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন এবং সেখানে তাঁর রচনাবলী প্রসার লাভ করে। বহু জ্ঞান পিপাসু তাঁর নিকট থেকে জ্ঞান আহরণ করেছেন। অতঃপর তিনি দামেস্কে চলে যান।” তাঁর ছাত্রদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেনÑ “আমালুল ইয়াওম ওয়াল লায়লাহ’ গ্রন্থের খ্যাতিমান লেখক ইবনুস সুন্নী, আহমাদ ইবনুল হাসান আর-রাযী, আবুল হাসান আহমাদ আর-রামলী, আবু জা‘ফর আহমাদ ইবনে মুহাম্মাদ আন-নাহবী, আবু সাঈদ আহমাদ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনুল আরাবী, আবু জা‘ফর আহমাদ আত-তাহাবী প্রমুখ।” সুনানু নিসায়ী সংকলন : ইমাম নিসায়ী (রহ.) প্রথমে ‘আস-সুনানুল কুবরা’ নামে একটি বৃহৎ হাদীসগ্রন্থ সংকলন করেন। যাতে ‘সহিহ্’ ও ‘যঈফ’ হাদীসের সংমিশ্রণ ছিল। এ সম্পর্কে আল্লামা আবু যাহূ বলেনÑ “ইমাম নিসায়ী (রহ.) বিশুদ্ধ ও ত্রুটিযুক্ত হাদীস সম্বলিত ‘আস-সুনানুল কুবরা’ গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। অতঃপর একে সংক্ষেপ করে ‘আস-সুনানুছ ছুগরা’ সংকলন করেন। এর নাম দেন ‘আল-মুজতাবা’। ইমাম নিসায়ী (রহ.)-এর নিকটে এ গ্রন্থের সব হাদীস-ই সহিহ্।” ইমাম নিসায়ী (রহ.) বলেনÑ “যখন আমি সুনানে নিসায়ী সংকলন করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হলাম, তখন কিছু শায়খ থেকে হাদীস বর্ণনা করার ব্যাপারে আমার অন্তরে সন্দেহের সৃষ্টি হলে আমি আল্লাহর দরবারে ‘ইস্তেখারা’ করলাম। অতঃপর তাদের হাদীস পরিত্যাগের বিষয়ে কল্যাণকর ইঙ্গিত পেলাম। ফলে আমি তাতে এমন কিছু হাদীস সন্নিবেশিত করিনি, যেগুলো তাদের নিকট থেকে আমার নিকট উচ্চতর সনদে পৌঁছেছিল।” সাইয়িদ জামালুদ্দীন বলেনÑ “ইমাম নিসায়ী (রহ.) প্রথমে ‘আস-সুনানুল কাবীর’ নামক একটি গ্রন্থ সংকলন করেন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। হাদীসের বিভিন্ন সূত্র সংবলিত এমন গ্রন্থ আর কেউ রচনা করতে সক্ষম হয়নি।” ইবনুল আছীর বলেন, ফিলিস্তীনের রামাল্লার আমীর ইমাম নিসায়ী (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার সংকলিত ‘আস-সুনানুল কুবরা’-তে সন্নিবেশিত সকল হাদীস-ই কি সহিহ্?” উত্তরে তিনি বললেনÑ “না। এতে সহিহ্ ও যঈফ মিশ্রিত আছে।” তখন আমীর তাঁকে বললেন, এ গ্রন্থ থেকে শুধু ‘সহিহ্’ হাদীসগুলো চয়ন করে আমাদের জন্য একটি বিশুদ্ধ হাদীসগ্রন্থ সংকলন করুন। এ প্রেক্ষিতে তিনি ‘আস-সুনানুল কুবরা’র যে সকল হাদীসের সনদে ত্রুটি আছে বলে অভিযোগ ছিল, সেগুলো বাদ দিয়ে ‘সুনানুল মুজতাবা’ সংকলন করেন।” ইমাম নিসায়ী (রহ.) মুসলিম বিশ্বের জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রসমূহে ব্যাপকভাবে পরিভ্রমণ শেষে মিসরে বসতি স্থাপন করেন। দীর্ঘদিন মিসরে বসবাস করার পর প্রতিকূল অবস্থার কারণে ৩০২ হিজরীতে দামেশকে চলে আসেন। দামেশকে পৌঁছে তিনি দেখতে পেলেন যে, জনসাধারণের অধিকাংশই বনী উমাইয়ার পক্ষে এবং হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (কা.)-এর বিপক্ষে। তখন তিনি জনগণের মনোভাব ও আক্বীদা সংশোধনের লক্ষ্যে হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (কা.) ও তাঁর পরিবারের প্রশংসায় “কিতাবুল খাছায়িছ ফী ফাযলে আলী ইবনি আবি তালিব ওয়া আহলিল বাইত” নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি এ গ্রন্থটি দামেশকের জামে মসজিদে সকলকে পড়ে শুনানোর ইচ্ছা করেন। যাতে বনী উমাইয়ার শাসনের ফলে সাধারণ লোকদের মাঝে যে ঈমানী দুর্বলতা সৃষ্টি হয়েছে, তা দূর হয়ে যায়। কিন্তু এর সামান্য অংশ পড়ার পর এক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞেস করেÑ “আপনি কি আমিরুল মুমিনীন মু‘আবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ানের প্রশংসায় কিছু লিখেছেন?” জবাবে ইমাম নিসায়ী (রহ.) বললেনÑ “মু‘আবিয়ার জন্য তো এটাই যথেষ্ট যে, সে এ থেকে সবসময় বাদ পড়ুক। তার প্রশংসায় লেখার তো কিছু নেই।” এ কথা শোনার সাথে সাথেই লোকেরা তাঁর ওপর হামলা চালায় এবং ‘শী‘আ’ ‘শী‘আ’ বলে তাঁকে মারধর করতে থাকে। ফলে তিনি মরণাপন্ন হয়ে পড়েন। [আ’লামুল মুহাদ্দিসীন, পৃষ্ঠা ২৫০-২৫১, লেখক: ড. তাকীউদ্দীন আন-নাদাভী, প্রকাশনা : দারুল বাশায়ির আল-ইসলামিয়া, প্রকাশকাল : ২০০৭/১৪২৮ হিজরী।] উসামা রাশাদ ওয়াছফী আগা বলেনÑ “অতঃপর তিনি ‘ফাযাইলুছ সাহাবা’ গ্রন্থ প্রণয়ন করেন এবং এতে আবূ বকর (রা.)-এর [জীবনী ও মর্যাদা শীর্ষক আলোচনার] মাধ্যমে শুরু করেন। অতঃপর ওমর (রা.), তারপর উসমান (রা.), তারপর চতুর্থ পর্যায়ে আলী (রা.)-এর আলোচনা করেছেন। এটা প্রমাণ বহন করে যে, তিনি আলী (রা.)-কে অন্যদের চেয়ে এমনকি উসমান (রা.)-এর চেয়েও প্রাধান্য দেননি।” মৃত্যু ও দাফন: শী‘আ অপবাদের অভিযোগে তাঁকে বেদম প্রহার করা হলে তিনি মরণাপন্ন হয়ে পড়েন। খাদেম তাঁকে সেখান থেকে উঠিয়ে বাড়িতে নিয়ে যায়। বাড়িতে পৌঁছে তিনি বলেনÑ “আমাকে মক্কায় পৌঁছে দাও, যাতে আমার মৃত্যু মক্কায় বা মক্কার রাস্তায় হয়।” কথিত আছে যে, মক্কায় পৌঁছার পর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।” হাফেয যাহাবী ‘তাযকিরাতুল হুফ্ফায’ গ্রন্থে লিখেছেনÑ وَتُوُفِّيَ بِفِلِسْطِينَ يَوْمَ الْاثْنَيْنِ لِثَلاَثِ عَشْرَةَ خَلَتْ مِنْ صَفَرٍ سَنَةَ ثَلاَثٍ وَثَلاَثِمِائَةٍ. “ইমাম নিসায়ী (রহ.) ৩০৩ হিজরীর ছফর মাসের ১৩ তারিখ সোমবার ফিলিস্তীনে মৃত্যুবরণ করেন।” ঐতিহাসিক ইবনে খাল্লিকান বলেনÑ إِنَّهُ تُوُفِّيَ فِيْ شَعْبَانَ مِنْ هذِهِ السَّنَةِ “একই বছরের শা‘বান মাসে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।” মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর মতান্তরে ৮৯ বছর।” ছাফা ও মারওয়া পাহাড়ের পাদদেশে তাঁকে দাফন করা হয়। অন্য বর্ণনায় এসেছে, হাফেয আবূ আমির মুহাম্মাদ ইবনে সাদুন আল-আবদারী বলেনÑ مَاتَ أَبُو عَبْدِ الرَّحْمَنِ النَّسَائِيُّ بِالرَّمْلَةِ مَدِينَةِ فِلِسْطِيْنَ يَوْمَ الْإِثْنَيْنِ لِثَلاَثِ عَشْرَةَ لَيْلَةً خَلَتْ مِنْ صَفَرٍ سَنَةَ ثَلاَثٍ وَثَلاَثِمِائَةٍ، وَدُفِنَ بِبَيْتِ المقدسِ. “ইমাম আবূ আব্দুর রহমান আন-নিসায়ী (রহ.) ফিলিস্তীনের রামল্লা নগরীতে ৩০৩ হিজরীর ১৩ই সফর সোমবার রাত্রে মৃত্যুবরণ করেন এবং বায়তুল মুক্বাদ্দাসের সন্নিকটে তাঁকে দাফন করা হয়।” ইমাম নিসায়ী (রহ.)-এর জীবনী থেকে শিক্ষণীয় বিষয় ইলমে হাদীসের প্রচার-প্রসার, হাদীস সংকলন ও সংরক্ষণ এবং জারহ ও তা‘দীল নির্ণয়ে ইমাম নিসায়ী (রহ.)-এর অবদান অতুলনীয়। এ ক্ষণজন্মা মহামনীষীর জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে রয়েছে আমাদের জন্য বহু শিক্ষণীয় বিষয়। নি¤েœ কিছু শিক্ষণীয় বিষয় উল্লেখ করা হলÑ ১. সত্য আপোষহীন: সত্য-মিথ্যার দ্ব›দ্ব চিরন্তন। বাতিলের ধ্বজাধারী তাগূতী শক্তি সত্যের আলোকে নির্বাপিত করার লক্ষ্যে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে সচেষ্ট, এটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে মিথ্যার সাথে আপোষ না করে সত্যের পথে হিমাদ্রির ন্যায় অটল ও অবিচল থাকতে হবে। যেমনিভাবে ইমাম নিসায়ী (রহ.) মিথ্যার সাথে আপোষ না করে সত্যের উপর অটল ও অবিচল ছিলেন। ২. পার্থিব জীবন গালিচা বিছানো পথ নয়: এ পৃথিবীতে কারো জীবনই সম্পূর্ণরূপে সুখকর নয়। কণ্টকাকীর্ণ পিচ্ছিল পথ মাড়িয়েই অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে হয়। এক্ষেত্রে ইমাম নিসায়ী (রহ.) ছিলেন এক অনন্য দৃষ্টান্ত। ৩. মিথ্যা অপবাদ আরোপ: এ পৃথিবীতে নবী-রাসূল থেকে শুরু করে যাঁরাই সত্য প্রচারে ব্রতী হয়েছেন, তাঁরাই মিথ্যা অপবাদে অভিযুক্ত হয়েছেন। সত্য প্রচারকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ আরোপ করা তাগূতী শক্তির চূড়ান্ত হাতিয়ার। যা থেকে ইমাম নিসায়ী (রহ.)-ও রক্ষা পাননি। সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে তাঁকে ‘শী‘আ’ অপবাদে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। এ যুগেও যারা সত্য প্রচার-প্রসারে ব্রতী হবেন তাদের বিরুদ্ধেও স্থান-কাল-পাত্র ভেদে ইত্যাকার মিথ্যা অভিযোগ আরোপিত হবে, এটাই স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। ৪. আত্মোৎসর্গ: হক প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় সর্বদা জীবনের শেষ রক্তবিন্দু বিসর্জন দিতে প্রস্তুত থাকতে হবে। যেমনিভাবে ইমাম নিসায়ী (রহ.) জীবনের শেষ রক্তবিন্দু সত্য প্রতিষ্ঠায় ব্যয় করেছিলেন। ৫. দ্বীন ও দুনিয়ার মাঝে সমন্বয় সাধন: দ্বীন-দুনিয়ার মাঝে সমন্বয় সাধনে ইমাম নিসায়ী (রহ.) এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দুনিয়াবী ক্ষেত্রে তাঁর যেমন চারজন স্ত্রী ছিল। তেমনি দ্বীন পালনের ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন তাহাজ্জুদগুযার এবং নফল সিয়াম পালনে অভ্যস্ত। ৬. অধ্যবসায়: শিক্ষার্জন ও গ্রন্থ প্রণয়নে ইমাম নিসায়ী (রহ.) কঠোর অধ্যবসায়ের পরিচয় দিয়েছেন। শিক্ষার্জনে শুধু নিজ দেশের গন্ডিতে আবদ্ধ না থেকে পিপাসিত চাতকের ন্যায় দেশ-বিদেশের সমকালীন মহামনীষীদের দ্বারস্থ হয়েছেন। তিনি জীবনের অধিকাংশ সময় ব্যয় করেছেন শিক্ষার্জন ও গ্রন্থ প্রণয়নে। যার জ্ঞান সাগরে এখনও আমরা অবগাহন করে চলছি। পরিশেষে দরবারে ইলাহীতে প্রার্থনা জানাই আল্লাহ রাববুল আলামীন ইমাম নিসায়ী (রহ.)-এর এ অনবদ্য অবদান কবুল করুন এবং তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন-আমীন!