আমার বাবা সাহিত্যিক মাহবুব উল আলম ১৯৫৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ারের আমন্ত্রণে দক্ষিণ এশিয়ার সম্পাদক-সাংবাদিক দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে দু'মাসের জন্য আমেরিকা ভ্রমণ করেন। সে থেকে আমাদের পরিবারে যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে প্রবল আগ্রহ জন্মায়। আমার এক দুলাভাই মরহুম মুহাম্মদ শামসুল আলম ষাটের দশকের প্রথম দিকে বৃত্তি নিয়ে উচ্চ শিক্ষার্থে ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যান এবং যথারীতি ডিগ্রি নিয়ে ফেরত আসেন। তখন আমার নিতান্ত বালক বয়স। তিনি খুব সুরসিক ছিলেন। তার মুখে তখন প্রচুর আমেরিকার গল্প শুনি। সে জন্য আমেরিকা ভ্রমণ করার একটা তাগিদ আমার মধ্যে সবসময় ছিল। বিশেষত আমেরিকার মতাে বড় একটি মহাদেশ কীভাবে ইউরােপের শ্বেতাঙ্গ জনগােষ্ঠী পূর্ব তীর থেকে পশ্চিম তীর, উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ দিক দখল করে ফেলল এ অভিভাষণ প্রক্রিয়ার শারীরিক-ধর্মীয়-সামাজিক এবং রাজনৈতিক ইতিহাস জানতে আমার প্রবল ইচ্ছা হয়। আমার অনুসন্ধিৎসার কিছুটা প্রতিফলন বর্তমান রচনায় ঘটেছে বলে আমার বিশ্বাস। | এ লেখাটি নিছক ভ্রমণকাহিনি—কোনাে তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখা হয়নি। সে জন্য এই সফরের সময় যাদের সহযােগিতা পেয়েছি, বা যাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে, তাদেরকে নিয়েই একটা ভ্ৰামণিক কথামালা তৈরি করেছি। হয়তাে কোনাে কোনাে মন্তব্যে কেউ কেউ আঘাত পেতে পারেন, আমি জানি না। কিন্তু ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, সেরকম কিছু লিখে থাকলে অনবধানবশত হয়েছে, ইচ্ছাকৃতভাবেনয়। সম্বােধনের ক্ষেত্রে বিদেশিদের বেলায় সর্বত্র দ্বিতীয় পুরুষ, অর্থাৎ “তুমি”, “তােমরা ব্যবহার করেছি। আর আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রকে সর্বত্র আমি ‘আমেরিকা' হিসাবে ব্যবহার করেছি কারণ প্রচলিত অর্থে আমেরিকা বলতে আমরা যুক্তরাষ্ট্রকেই ঝিয়ে থাকি। আর ‘এমেরিকা’ লিখেছি শুধু তখনই যখন এটার ইংরেজি উচ্চারণের প্রয়ােজন হয়েছে।