লেখকের কথা থেকে- সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য নিবেদিত, যিনি আমাদের প্রতি আখেরী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ ও কুরআন মাজীদ নাযিল করে একটি পূর্ণাঙ্গ শরী‘আত প্রদান করেছেন। দরূদ ও সালাম সাইয়্যিদুল মুরসালীন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর আহলে বাইত ও সাহাবায়ে কেরামের প্রতি, যাঁরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ও প্রতিটি মুহুর্তে এ শরী‘আতকে বাস্তবায়নের পূর্ণ চেষ্টা করেছিলেন এবং এরই মাধ্যমে ধূলির ধরায় এনেছিলেন অনাবিল শান্তি ও শাশ্বত মুক্তি। এ শান্তি ও মুক্তিলাভের পথ কুরআন ও হাদীসে বিশদভাবে বিবৃত হয়েছে। অনন্তর সে অনুযায়ী সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণ তাঁদের জীবন পরিচালনা করেছেন। সাহাবায়ে কেরামের সময় থেকেই নতুন নতুন সমস্যার উদ্ভব হয় এবং এমন শরয়ী মাসাইলের প্রয়োজন দেখা দেয়, যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়ে প্রয়োজন পড়েনি। এভাবে শরয়ী মাসাইলের পরিধি বাড়তে লাগল এবং মানুষ নতুন নতুন সমস্যার মুখোমুখি হলো। আর আল্লাহ তাআলা সময়ের চাহিদা অনুযায়ী কুরআন-হাদীসের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে দক্ষ এমন কিছু জ্ঞানবান বান্দার আবির্ভাব ঘটালেন, যাঁরা কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে ঐসব সমস্যার সমাধানে সক্ষম ও পারদর্শী ছিলেন। যাঁরা মুজতাহিদ ও ফকীহ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। বিভিন্ন শহরে বিভিন্ন ফকীহ ফাতাওয়া প্রদান করলেও মাত্র চারটি মাযহাব প্রসিদ্ধি লাভ করে এবং দুনিয়ার সর্বত্র প্রচারিত হয়। হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী ও হাম্বলী। চারটি মাযহাবের মধ্যে হানাফী মাযহাব সবচেয়ে বেশি প্রসার লাভ করে। বিশেষতঃ আব্বাসীয় খেলাফত আমলে ইমাম আবূ ইউসুফ রাহিমাহুল্লাহ রাষ্ট্রীয় প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হওয়ার পর মুসলিম সাম্রাজ্যের সর্বত্র এবং সর্বক্ষেত্রে হানাফী ফিক্হের ব্যাপক প্রসার ঘটে। ইমাম মুহাম্মদ ইবনুল হাসান শায়বানী, যুফার, হাসান ইবনে যিয়াদ প্রমুখ যুগশ্রেষ্ঠ ইমামগণ হানাফী উসূলের ভিত্তিতে মাসআলা পর্যালোচনা করে হানাফী মাযহাবকে আরও গ্রহণযোগ্য ও সময়োপযোগী করে তোলেন। মুতাকাদ্দিমীন আলিমগণের যুগ শেষ হয়ে যাওয়ার পর ফাতাওয়ার চাহিদা মেটাতে এবং সাধারণ লোকদেরকে মাসআলা অবগত করাতে প্রত্যেক যুগেই যুগশ্রেষ্ঠ আলিম ও ফকীহগণ ব্যক্তিগত এবং সামষ্টিক উদ্যোগে ফাতাওয়া প্রদান এবং তা কিতাব আকারে প্রকাশ করতে থাকেন। এসব কিতাবে কেবল সমাধান দেয়া হতো; কোনো প্রকার প্রশ্ন উত্থাপন করা হতো না এবং এসব উত্তর ও সমাধানগুলোর সমর্থনে কী দলীল-প্রমাণ রয়েছে তাও উল্লেখ করার রীতি ছিলো না। মুতাকাদ্দিমীন আলিমগণের যুগ থেকেই হানাফী ফিক্হ ব্যাপক চর্চিত ও ব্যবহৃত হতে থাকায় সে যুগ থেকেই প্রচুর নির্ভরযোগ্য ফিক্হের কিতাব ও ফাতাওয়াগ্রন্থ রচিত হতে থাকে, যার প্রায় সবক'টিই আরবী ভাষায় প্রণীত হয়েছে। তখন রাষ্ট্রভাষা আরবী ছিল বিধায় এ ভাষাতেই সকল কাজ সম্পন্ন করা হত। পরবর্তী সময়ে পৃথিবীর অন্যান্য ভাষায় ফাতাওয়া প্রদান ও কিতাব রচনা আরম্ভ হয়। আধুনিককালে প্রায় সকল ভাষাতেই ফিক্হের কিতাবাদি রচিত ও অনূদিত হয়েছে। বিশেষতঃ আধুনিক সমস্যার সমাধান দিতে আরবীর পাশাপাশি উর্দু এবং ফারসি ভাষায়ও বহু ফাতাওয়াগ্রন্থ প্রণীত হয়েছে। কিন্তু বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য বাংলায় শরয়ী মাসায়েলের বৃহৎ আকারে কোনো গ্রন্থ এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি। বহুদিন ধরে আমি এমন একটা কিতাব সংকলনের ইচ্ছা পোষণ করে আসছিলাম, যাতে যথাসম্ভব সকল মাসাআলা সন্নিবেশিত হয় এবং মাসআলা অনে¦ষণকারীর জন্য বহু গ্রন্থ অনুুসন্ধানের প্রয়োজন না পড়ে। কিন্তু নিজের জ্ঞানের স্বল্পতা, যোগ্যতার দীনতা, সর্বোপরি “পাছে লোকে কিছু বলে” এসব ভাবনার কারণে লেখার কাজ শুরু করতে পারিনি। কিন্তু আমার কিছু শুভাকাক্সক্ষীর উৎসাহ ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, “সৎ কাজের পথপ্রদর্শনকারী সৎকর্ম সম্পাদনকারীর ন্যায়”-এর দিকে দৃষ্টিপাত করে নিজের স্বল্প পুঁজি নিয়েই এগুতে শুরু করি। এ কিতাব রচনা ও সংকলনের ক্ষেত্রে আমি ফাতাওয়ায়ে আলমগীরীর বর্ণনা ও বিন্যাস পদ্ধতি অনুসরণ করেছি। কারণ, প্রচলিত ফাতাওয়া গ্রন্থের মধ্যে এই গ্রন্থখানির বর্ণনা ও বিন্যাস পদ্ধতি খুবই আকর্ষণীয়। তবে এর বিন্যাস পদ্ধতির হুবহু অনুসরণ করিনি; বরং অনেক নতুন কিছু সংযোজন করেছি এবং অপ্রয়োজনীয় বিষয়াবলি বাদ দিয়েছি। যেহেতু, এ গ্রন্থে ফাতাওয়ার বহু কিতাব থেকে মাসআলা চয়ন করা হয়েছে তাই আমি এর নাম দিয়েছি ‘মাসাইল ও ফাতাওয়া সমগ্র’। এতে প্রতিটি মাসআলা লিখার পর তা যে কিতাব থেকে সংকলন করা হয়েছে তার নাম, খণ্ড ও পৃষ্ঠা-নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে করে পাঠক সহজেই মাসআলার উৎস সম্পর্কে জানতে পারেন। আমার এ কিতাবখানি সাধারণ লোকদের জন্য লেখা, যারা ফিক্হ বিষয়ে পরিজ্ঞাত নন। বিশেষত আমি নিজে এর দ্বারা বিশেষভাবে উপকৃত হয়েছি। কিন্তু যাঁরা ফকীহ ও মুফতী, আল্লাহ তাআলা যাঁদেরকে দীনের পূর্ণ জ্ঞান দান করেছেন তাঁদের কথা ভিন্ন। তাঁদের জন্য মূল আরবী কিতাব ও ফাতাওয়া গ্রন্থ এমনকি কুরআন-হাদীস ও ইমামদের উসূল ও ফিক্হের কিতাবাদিই যথেষ্ট। মূল কিতাব রচনার পূর্বে হানাফী ফিক্হ ও ইমাম আবূ হানীফা রাহিমাহুল্লাহ সম্পর্কে কতিপয় বিষয় আলোচনা করার বিশেষ প্রয়োজন মনে করছি। আশা করি এসব বিষয় ফিকহী মাসাইল বুঝতে সহায়ক হবে। প্রত্যেক অধ্যায়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পরিচ্ছেদ তৈরি করে বিষয়গুলো স্পষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রতিটি অধ্যায়ের শেষে ঐ অধ্যায় সংক্রান্ত বিবিধ মাসাইলের জন্য আলাদা পরিচ্ছেদ সংযোজন করা হয়েছে, যাতে এ সংক্রান্ত মাসআলা খুঁজে নিতে সহজ হয়। অধ্যায়গুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট আধুনিক জীবনে উদ্ভূত মাসাইলসমূহ সংযোজনের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। তাছাড়া ভবিষ্যতে নতুন কোনো মাসআলার উদ্ভব হলে তা পরবর্তী সংস্করণে সংযোজন করে দেয়ার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখা হবে, ইনশাআল্লাহ। আমরা যথাসম্ভব চেষ্টা করেছি, এ বইয়ে যেন বর্তমান সময় পর্যন্ত উদ্ভূত সকল মাসআলার সমাধান সন্নিবেশিত হয়। প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাইয়ের পর এ কিতাবে তাহারাত ও সালাত সম্পর্কিত চার হাজারের অধিক মাসাইল সংকলিত হয়েছে। গ্রন্থের শেষ দিকে পরিশিষ্টে নির্বাচিত কিছু মাসায়েল নির্দেশিকা দেয়া হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট পৃষ্ঠায় তাতে আন্ডার লাইন দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ড. মুহাম্মদ হিফযুর রহমান এর আল-ফিকহুল হানাফী: মাসাইল ও ফাতাওয়া সমগ্র [তাহারাত ও সালাত] এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 540.00 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Al Fiqhul Hanafee Masayel Wal Fatawa Taharat by Dr. muhammad hifjur rahmanis now available in boiferry for only 540.00 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.