কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলাের সাহিত্য সংস্কৃতিক উৎসবে আবৃত্তির প্রতিযােগিতায় অংশ নিয়ে আমরা দেখতাম অসংখ্য ছাত্রছাত্রী অংশগ্রহণ করছে। প্রতিযােগিতার সংগীত বিভাগে অংশগ্রহণকারী হয়ত সাকুল্যে জনা পনের। সংগীতের বিভিন্ন বিভাগে এই পনের জনই ঘুরে-ফিরে পুরস্কৃত হচ্ছে। | আবৃত্তি প্রতিযােগিতার ব্যাপারটি কিন্তু অন্যরকমের। প্রতিযােগীর সংখ্যা কম করেও জনা পঞ্চাশেক। আমাদের মধ্যে দু'একজন যারা প্রতিযােগিতার আসর ছাড়াও মাঝে মধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করতাম, তারা এই প্রতিযােগিতায় অংশ নিয়ে বিপদে পড়তাম। অনেকেই মওকা পেয়ে যেত। বিশেষ করে আমাদের আবৃত্তির চেঁচামেচিতে যাদের দুপুরের ঘুম বরবাদ হতাে, তারা। যেন পুরস্কার আমাদের পেতেই হবে। ভাবখানা এই রকমের যে, এবার প্রাইজ না পেলে আর ব্লকে উঠতে দিচ্ছি না। | আমরা অসহায়ভাবে তাকিয়ে থাকতাম প্রতিযােগী সমুদ্রের দিকে। ভাবতাম এ সমুদ্র মন্থন করে প্রাইজ-অমৃত ভান্ড আমাদের হাতে আসবে কি? প্রতিযােগিতার আসরটি হতাে কিন্তু বিচিত্র রসের। হলের সবচেয়ে শান্ত ছেলেটিই হয়ত মাইক্রোফোনের সামনে দাড়িয়ে অঙ্গভঙ্গিসহ চেঁচিয়ে প্রলয়কাণ্ড বাঁধিয়ে দিত। কবিতাটি ছিল হয়ত শান্ত সমাহিত মেজাজের। যে ছেলেটি সাংস্কৃতিক আসর পণ্ড করতে ওস্তাদ, গানের আসরে হৈ চৈ করা বা খেলার মাঠে একটা ঝঞাট বাধিয়ে দেওয়া যার অভ্যাস, সে হয়ত মাইক্রোফানে দাড়িয়ে এমন মৃদুস্বরে কাঁপতে কাঁপতে পড়তাে যে তা প্রায় শ্রোতার কানে পৌছুই না। নামাজী ছেলেটি হয়ত প্রতিটি শব্দকে এমন টেনে টেনে পড়তাে যে, আবৃত্তি হচ্ছে না মর্সিয়া হচ্ছে তা বােঝাই মুশকিল। সবচেয়ে পড় য়া ছেলেটি নাকে চশমাটি এঁটে, বাধাে বাধাে ভাবে এমন করে পড়তে যেন মনে হতাে, কবিতার মাঠে সে লাঙল ঠেলছে আর শব্দপাথর গুলিতে ঠোক্কোর খেয়ে খেয়ে তার কণ্ঠফলাটি, বার বার কাব্যের শরীর হতে ছিটকিয়ে উঠছে।