Loading...
রিজিয়া রহমান
লেখকের জীবনী
রিজিয়া রহমান (Rejeya Rahman)

রিজিয়া রহমান বাংলা সাহিত্যের প্রথম শ্রেণীর ঔপন্যাসিকদের একজন। ধাবমান মহাকালকে আশ্রয় করে মানুষের যে অনন্ত জীবন স্রোত বয়ে চলেছে, সত্যাশ্রয়ী সাহিত্য সেই জীবনকেই অনুসন্ধান করে, জীবনের সেই সত্যকেই তুলে আনে, সত্যাশ্রয়ী সাহিত্য সৃষ্টির প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ ঔপন্যাসিক রিজিয়া রহমান। তিন দশক ধরে তিনি জীবনঘনিষ্ঠ সাহিত্য সৃষ্টিতে নিবেদিত রয়েছেন। ইতিহাস নৃতত্ব থেকে শুরু করে জ্ঞানের সর্বক্ষেত্রে তাঁর কলমের বিচরণ যেমন তার রচনাকে বৈশিষ্ঠ্য দিয়েছে, তেমন মানুষের প্রতি ভালবাসার অকৃত্রিমতায় তিনি হয়েছেন মানবতাবাদী ঔপন্যাসিক। অভিজ্ঞতা ও বিশ্বাসযােগ্যতায় উজ্জ্বল তার প্রতিটি উপন্যাস রিজিয়া রহমানের উপন্যাস সমগ্রের প্রথম খন্ডে সংকলিত উপন্যাস গুলি তাঁর প্রথম দিকের রচনা। কিন্তু প্রতিটি উপন্যাসেই খুঁজে পাওয়া যায় ব্যতিক্রমধর্মী। বৈচিত্র্যময় জীবনের অনবদ্য প্রকাশকে। গতানুগতিক ধারার বাইরে প্রবাহিত যে বিশ্রাল জীবন সেখান থেকেই আহরিত তার বিষয় বস্তু, ভাষার সাবলীলতা, ও চরিত্র। সৃষ্টির দক্ষতা, রিজিয়া রহমানের অভিজ্ঞতা লব্ধ রচনাকে একটি বিশেষ মাত্রা দান করেছে। তাকে করেছে সার্থক শিল্পী, সেই সার্থকতাকেই বহন করছে, এই সংকলনের প্রতিটি উপন্যাস। রিজিয়া রহমান জন্ম ১৯৩৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর কোলকাতার ভবানীপুরে। পৈতৃক নিবাস পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণা জেলার আলীপুর সদর সাব-ডিভিশনের নয়াবাদ গ্রামে। পিতা ডা. আবুল খায়ের সিদ্দিক। মাতার নাম মরিয়ম বেগম। রিজিয়া রহমানের শৈশব অতিবাহিত হয় কোলকাতায়। পিতার চাকরি বদলির কারণে কৈশাের জীবনে ফরিদপুরে এবং শিক্ষাজীবন অতিবাহিত হয় ঢাকা ও বেলুচিস্তানে। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এম.এ পাশ ডিগ্রী লাভ করেন। কয়েক বছর অধ্যাপনার কাজে নিয়ােজিত ছিলেন। কিছুদিন স্কুলেও শিক্ষকতা করেছেন। পরবর্তীতে শিক্ষকতা ছেড়ে পুরােপুরি সাহিত্য সাধনায় আত্মনিয়ােগ করেন। রিজিয়া রহমান মাত্র নয় বছর বয়সে লেখালেখি শুরু করেন। স্কুলে পড়াকালীন তাঁর প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। কোলকাতার সত্যযুগ ও ঢাকার সংবাদ'-এ। দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস। ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত হয় প্রথম গ্রন্থ তাগ্নিস্বাক্ষরা। ছােটগল্প, প্রবন্ধ ও সমালােচনা লেখায় রিজিয়া রহমানের পাদর্শিতা থাকলেও একজন শক্তিশালী ঔপন্যাসিক হিসেবে সাহিত্য অঙ্গনে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ঊনিশটি। এর মধ্যে ঘর বাঙা ঘর’ (১৯৭৪), উত্তর পুরুষ (১৯৭৭), 'রং থেকে বাংলা (১৯৭৮), রক্তের অক্ষর’ (১৯৭৮) একাল চিরকাল (১৯৮০), ‘অলিখিত উপাখ্যান’ (১৯৮০), শিলায় শিয়াল আগুন’ (১৯৮০) প্রভৃতি উপন্যাস উল্লেখযােগ্য। বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমীসহ একাধিক পুরুস্কারে ভূষিত হয়েছেন। রিজিয়া রহমান একজন সমাজ সচেতন ও প্রকৃত মানবতাবাদী সাহিত্যিক। সমাজের শােষিত নিপীড়িত অবদমিত ও অধিকারহীন মানুষের স্বপক্ষে তার কলম সবসময় সক্রিয়।