কাজী শারফুদ্দিন আহমেদ পিতা: মরহুম কাজী লুৎফর রহমান গ্রাম : বিক্রমপুর পদ্মানদীর তীরে সবুজ ঘেরা গাঁ কামারগাও" বিক্রমপুরের জমিদারদের প্রাসাদ এবং পুরাকীর্তি সমৃদ্ধ গঞ্জ - ভাগ্যকুল, উপজেলা : শ্রীনগর জেলা: মুন্সিগঞ্জ (ষাট দশকের ঢাকা জেলা) স্কুল জীবন কেটেছে আমার গ্রামের পাশে জমিদারদের প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী উচ্চবিদ্যালয় 'ভাগ্যকুল এইচ এল হাই স্কুলে। ১৯৬১ সনে মেট্রিক পাশ করার পর উচ্চ শিক্ষার্থে ঢাকা শহরে আগমন। ১৯৬৭ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইংরেজী সাহিত্যে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ। ১৯৬৮ সনে তদানিন্তন পাকিস্তানের সেন্ট্রাল অটোমাস করপােরেশন আই সি পি-তে ইনভেস্টমেন্ট অফিসার হিসেবে যােগদান। আই সি পি'র সাথে দেশের বিত্তশালী এবং শিল্পপতিদের লেনদেন বেশি থাকায় উচ্চবিত্তদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠে। বেশ কিছু ইয়াং এন্টারপ্রিনিউরদের সথে গভীর বন্ধুত্ব হয়। ফলে ওদের জীবনযাত্রা, আচারআচরণ এবং ব্যক্তি-জীবন সম্পকে বাস্তব অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হয়। কলেজ এবং ভার্সিটিতে অধ্যয়ন কালে বেশ কিছু উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলে মেয়েদের সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। এদের প্রায় সবাই পরবর্তীতে শিল্প-কারখানার মালিক হয় । আই সি পি-তে চারি কালেও এদের সাথে আগের মতােই বন্ধুত্ব বজায় থাকে। এদের কয়েকজনের কাছ থেকে ইন্ডাস্ট্রির পার্টনার হিসেবে যােগ দানের অফারও পেয়েছিলাম। কিন্তু আমার পক্ষে চাকরি ছাড়া সম্ভব হয়নি। এর পর অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় নির্বাচন। বাঙালিরা নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেলেও পাকিস্তানী শাসকরা বাঙালিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় শুরু হয় অসহযােগ আন্দোলন। পঁচিশে মার্চের সে কালােরাতে বাঙালিদের উপর বর্বর পাকিস্তান বাহিনীর পৈশাচিক আক্রমনের প্রেক্ষিতে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস আর অফিস করা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বেশ ক'জন বন্ধুবান্ধব মুক্তিযুদ্ধে যােগদান করে। ওরা আমার উপর বিশাল একটা দায়িত্ব ন্যস্ত করেছিলাে। আমি তা পালন করতে চেষ্টা করেছি। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বেশ কয়েক বার মৃত্যুর মুখােমুখিও হয়েছি। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক আটটি সেক্টর করপােরেশন সৃষ্টি করা হয়। আমি তখন যােগ দেই টেক্সটাইল মিলস করপােরেশনে। আমি বেশির ভাগ সময় প্রশাসন বিভাগের দায়িত্ব পালন করি। মহাব্যবস্থাপক প্রশাসন ছাড়াও কোম্পানী এ্যাফায়ার্স বিভাগের প্রধান, মহাব্যবস্থাপক কর্মচারী সংযােগ এবং সর্বশেষ করপােরেশনের সচিব হিসাবে এক বছর কাজ করার পর অবসর গ্রহন করি। তার পর একটি গ্রুপ অব কোম্পানীর সেক্রেটারী হিসাবে আট বছরেরও অধিক কাল কাজ করি। সরকারী চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর থেকেই ঢাকা শহরে স্থায়ী বসবাস। সরকারী চাকুরিতে থাকা কালে প্রশাসন ও শ্রম আইনের উপর স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা, কোম্পানী এ্যাফায়ার্স এর উপর ডিপ্লোমা, “নিপা থেকে এসি এডি কোর্স এবং বিভিন্ন দেশ থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহন করি। এ সময়ে বিভিন্ন দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করা সম্ভব হয়। কলেজ জীবনে ম্যাগাজিনে বেশ কিছু লেখা ছাপা হয়। পরবর্তিতে সংবাদপত্রে কিছু কিছু লেখা ছাপা হয়। পুরাে চাকুরি জীবনটাই অত্যন্ত ব্যস্ততার মধ্যে কাটিয়েছি। লেখার প্রতি মনােযােগী হবার তেমন একটা সুযােগ হয়নি। অবসর গ্রহনের পর লেখায় মনােনিবেশ করার ইচ্ছে ছিলাে দীর্ঘ দিনের। অন্তরে সঞ্চিত দীর্ঘ বাস্তব অভিজ্ঞতা বিশেষ করে চোখে দেখা মুক্তিযুদ্ধ এবং বর্বর পাক বাহিনী ও দেশদ্রোহী রাজাকারদের পৈশাচিকতা হৃদয়কে আলােড়িত করতাে এবং তখন থেকেই প্রকাশের একটা অদম্য ইচ্ছার জন্ম নেয়। তার ফলশ্রুতিতেই সামান্য এ লেখার প্রয়াস।