সৌন্দর্য কাহাকে বলে এবং তাহার স্বরূপ কি এই সম্বন্ধে আমাদের দেশে এখনও কোন আলােচনাই হয় নাই। ইদানীন্তন কালে জগন্নাথ পণ্ডিত তাঁহার রসগঙ্গাধরে অবশ্য বলিয়াছেন যে রমণীয়ার্থপ্রতিপাদক শব্দের নাম কাব্য। কিন্তু রমণীয়তা কাহাকে বলে তাহার সম্বন্ধে কোনও গভীর বিচারের অবতারণা করেন নাই। রমণীয়তা শব্দের অর্থ করিতে গিয়া তিনি বলিয়াছেন লােকোত্তরা-হ্রদজনকজ্ঞানগােচরতা। লােকত্তরতা শব্দের অর্থ করিতে গিয়া তিনি বলিয়াছেন যে ইহার কোনও বিশেষ লক্ষণ দেওয়া যায় না কেবলমাত্র আমাদের অনুভবের দ্বারা ইহা বুঝিতে পারি। ‘লােকোত্তরত্তত্বং চাহাদগতশ্চমৎকারত্বাপরপৰ্য্যায়ােহনুভবসাক্ষিকো। জাতিবিশেষঃ। কারণং চ তদবচ্ছিন্নে ভাবনাবিশেষঃ পুনঃ পুনরনুসন্ধানত্ম।' যে চমৎকারিতুকে রমণীয়তা বলা যায় তাহার অন্তরালে বিশেষ বিশেষ সংস্কার ও তদনুসারী। বিচিত্র প্রকারে অনুসন্ধান সেই চমৎক্তারিতুকে আবিষ্ট করিয়া থাকে। এই চমৎকারিত্ব একদিকে লােকোত্তর অর্থাৎ সাধারণ সাংসারিক প্রয়ােজনতৃপ্তির সংসর্গবিহীন। কাজেই কোন ব্যক্তিগত সুখসুবিধার যে চমৎকারিত্ব তাহাকে রমণীয়তা বলা যায় না। অপরদিকে ইহা একটি আনন্দময় জ্ঞান এবং তাহার অভ্যন্তরে একটি জ্ঞানের চাঞ্চল্য বিদ্যমান রহিয়াছে, আবার অন্যদিকে একটি বিশেষ বস্তু বা অর্থকে লইয়া ইহা ফুটিয়া উঠিয়াছে। এইজন্য কাব্যের লক্ষণ করিতে গিয়া জগন্নাথ বলিয়াছেন যে যখন কোন বাক্যবিন্যাস এমনভাবে একটি অর্থকে প্রকাশ করে যে সেই প্রকাশের ভঙ্গীর সহিতই পূর্বোক্ত একটি বিশেষ প্রকারের চমকারত্ব ফুটিয়া উঠে বা উৎপন্ন হয়, তখন সেই বাক্যবিন্যাসের এই যে একটি চমৎকারত্বত্ত্ব ধর্ম প্রকাশ পায় তাহাই কাব্যের কাব্যত্ব।- 'স্ব-বিশিষ্ট জনকতাবচ্ছেদকার্থপ্রতিপাদকতাসংসর্গেন চমৎকারত্ববত্ত্বমেব বা কাব্যত্ব ইতি ফলিত।'