সমাজে অনৈতিকতা ও অসাধুতা যা কিছু সত্য, সুন্দর ও চির কল্যাণকর, মহান তা-ই ধর্মের শিক্ষা। তাই প্রতিটি ধর্ম মানুষের আত্মোপলব্ধি ও পরম অনুভূতির দিগ্দর্শন। ইসলামের প্রকৃত শিক্ষাই মানুষের দেহ-মনকে পূতপবিত্র, উদার ও মহৎপ্রাণ করে তোলে। ধর্মের প্রকৃত মর্মবাণীর উদ্দেশ্য মানুষের আদর্শ জীবন গঠন। কেননা আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীতে অসংখ্য নবী-রাসুল পাঠিয়ে মানবজাতিকে তাদের মাধ্যমে দিয়েছেন নৈতিক শিক্ষা। এ জন্যই রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি আদর্শ আখলাক (চরিত্রাবলি) পরিপূর্ণ করার জন্যই প্রেরিত হয়েছি।’ (তিরমিজি) সমাজে নীতিনৈতিকতা ও আদর্শ চর্চার যে শুভ শিক্ষা বিরাজমান তা ধর্মের জ্ঞান, যা গুরুজনের মুখে ফিরছে এবং গ্রন্থাকারেও লিপিবদ্ধ রয়েছে। ইসলাম ধর্মের এ মহান শিক্ষাই সভ্যতার আলো, যা মানবসত্তাকে বিকশিত করে উন্নত জাতিতে পরিণত করেছে। সুতরাং কোনো সভ্য সমাজে ঢালাও অনাচার, পাপাচার, অনৈতিকতা ও অসাধুতা চলতে পারে না। মানুষের সৎভাবে জীবনযাপনের জন্য ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। জ্ঞান ছাড়া সচেতনতা আসবে না আর গণসচেতনতা ছাড়া সক্ষমতা আসবে না। ধর্মের শিক্ষা কর্মের জন্য; তা যদি মানুষকে অনৈতিকতা ও পাপ-পঙ্কিলতা থেকে বিরত রাখতে না পারে, তাহলে এতে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে না। বর্তমানে অনৈতিকতা ও অসাধুতা যে সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। সুতরাং পাপের পথ থেকে দূরে থাকতে ও সত্য-ন্যায়ের পথে চলতে ধর্মের নীতি-আদর্শের আবশ্যকতা রয়েছে। সমাজের মেরুদণ্ডে যেন ঘুণ ধরছে। সামাজিক অবক্ষয়, মূল্যবোধহীনতা ও ক্ষয়িষ্ণুতা বৃদ্ধি করছে। যার যার ধর্মের প্রতি অনীহা এবং বিবেক-জ্ঞানবিবর্জিত হওয়ার কারণে অসৎ লোকেরা নানা ধরনের অন্যায় ও অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। কর্মক্ষেত্রে দক্ষ, অভিজ্ঞ, নীতিমান ও সৎ লোকের খুবই অভাব। নকল, ভেজাল, প্রতারণা আর কারচুপি হয়ে উঠেছে সামাজিক ও বাণিজ্যিক লেনদেনের পদ্ধতি। সমগ্র দেশবাসী নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী, পণ্যদ্রব্য ও ওষুধপথ্য ক্রয়ের প্রাক্কালে প্রতারিত ও বিপদগ্রস্ত হওয়ার ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত। বাড়তি মুনাফার লোভেই অসাধু ভেজাল ব্যবসায়ীরা এমন সর্বনাশা বক্রপথে পা বাড়িয়েছেন। সমাজে কপট লোকদের অনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, ‘তাদের অনেককে তুমি পাপাচার, সীমালঙ্ঘন ও অবৈধ ভক্ষণে তৎপর দেখতে পাবে; তারা যা করে নিশ্চয়ই তা কতই না নিকৃষ্ট!’ (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ৬২) যারা মানুষের ক্ষতি সাধন করে বা সর্বনাশ ঘটিয়ে নিজেদের উদরপূর্তি করছে, তারা নিঃসন্দেহে জনশত্রু। জনস্বাস্থ্যকে বিপন্ন করে যারা অনৈতিকভাবে মুনাফা অর্জন করতে চায়, তারা দেশ ও জাতির শত্রু। তাদের কোনো রকম ছাড় নয়। এদের মূলোৎপাটন করতেই হবে। সীমিত সম্পদের এ দেশে হতদরিদ্র ও হতভাগ্য অসহায় মানুষদের নিয়ে এই যে জঘন্য অমানবিকতা, এর বিরুদ্ধে প্রবল জনমত গড়ে তোলা প্রয়োজন। যারা আয়-উপার্জনের ক্ষেত্রে বৈধ-অবৈধ প্রশ্নে আন্তরিক প্রচেষ্টা, সততার চর্চা ও সাবধানতা অবলম্বন করে না, তাদের অসাধুতার ব্যাপারে নবী করিম (সা.) সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের সম্পদ কোথা থেকে উপার্জন করবে তার পরোয়া করে না, আল্লাহ তাআলা কোন্ দরজা দিয়ে তাকে জাহান্নামে ঢুকাবেন তার পরোয়া করবেন না।’ (বায়হাকি) সর্বোপরি, জনস্বার্থ বা জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা কার্যকর হাতিয়ারটি হলো জনসচেতনতা। একমাত্র জনগণই জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সকল অপতৎপরতা কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন সচেতন ও সক্রিয় উদ্যোগ। সন্দেহ নেই যে, জনগণের মধ্যে সেই ধরনের সামাজিক সচেতনতা ও সক্রিয়তার মারাত্মক অভাব আছে বলেই অসাধু ব্যবসায়ীদের দাপট দিনে দিনে বেড়ে চলছে। সুতরাং সচেতন ও বিবেকবান সকল সংগঠন, ব্যক্তি, পরিবার ও আলেম সমাজের এ ক্ষেত্রে প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করা আশু কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভেজালকারীদের কঠোরতম শাস্তির বিধান আর তাদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ ও সামাজিকভাবে তাদের বর্জন করার জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। যারা এ ব্যাপারে অসচেতন, তাদের জাগিয়ে তোলাও আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। একই সঙ্গে যারা ওজনে কম দেয়, সেই সব অসাধু মানুষরূপী দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে চাই কার্যকর ব্যবস্থা। সমাজে প্রতারকদের স্বরূপ উন্মোচন করে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘মন্দ পরিণাম তাদের জন্য, যারা মাপে কম দেয়! যারা লোকের কাছ থেকে মেপে নেওয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে এবং অন্যকে মেপে বা ওজন করে দেওয়ার সময় কম দেয়।’ (সূরা আল-মুতাফিফফিন, আয়াত: ১-৩) তাই আসুন, আমরা যেন সত্য ও মিথ্যার মাঝ দিয়ে না চলি। আমরা যেন সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলি। কেননা সত্যবাদিতা মানুষকে মুক্তি দেয় এবং অনৈতিকতা ও অসাধুতা মানুষকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেয়।
হুসাইন আল জাওয়াদর এর মানব জাতির ধংসের কারণ ও বর্তমান সমাজ ব্যাবস্থা এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 105.00 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Manobjatir Dhongser Karon O Bortoman Obostha by Hussain Al Jawadis now available in boiferry for only 105.00 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.