আজ এই পৰ্ণিমার আলােটাও খুব বিষন্ন লাগছে। মানুষের মন খারাপ হওয়ার ব্যাপারটা বড় উদ্ভট। একটার সাথে আরেকটা বাঁধা। অনেকটা রেলগাড়ির মতাে। একসাথে অনেকগুলাে আলাদা আলাদা বগি। বিষন্নতার এই রেলগাড়ির প্রত্যেকটি বগিতেই জীবনের একেকটা মন খারাপের গল্প। একটায় টান পড়লে সবগুলােতেই টান পড়ে!
তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো
“আমাদের ভালবাসার মানুষেরা তাে আমাদেরকে ভালবাসবেই। কিন্তু তার গভীরতা আমাদেরকেই নির্ধারণ করতে হবে। ভালবাসার মানুষের মনের মধ্যে যতটুকু খুঁড়বি ভালবাসা ততটুকু গভীর হবে। বেশি খুঁড়লে বেশি, কম। খুঁড়লে কম।” “খোঁড়াখুঁড়ির ব্যাপারটা বেশি কমপিকেটেড হয়ে গেল। ভাই, মনে হচ্ছে বুঝেছি আবার বুঝিনাই।” “না বােঝার কি আছে? মাটি যত খোঁড়ে পুকুর তত গভীর। হয়না? সেরকম মন যত খোঁড়ে ভালবাসা তত গভীর হয়।” “ভাই মন কি মাটি যে খোঁড়া যাবে? বুঝিনাই ঠিক। যদি একটা উদাহরণ দিতা?” “মন মাটির চেয়েও নরম। তাই মন খোঁড়া মাটি খোঁড়ার চেয়েও সহজ। এই যেমন ধর, নিহিনকে আমি একটা নূপুর গিফট করবাে। সেক্ষেত্রে আমি চেষ্টা করছি। আগেরটার মত একটা দিতে। কেন? কারন একইরকম দেখে ও খুশি হবে, সেই মিষ্টি স্মৃতি গুলাে মনে পড়বে। আর আমি যে ওর ভাললাগার কথা ভেবে ইচ্ছে করে এটা করেছি সেটা ভেবে ওর আরাে ভাললাগবে, কারন তখনই ও বুঝবে ওকে আমি কতটা গুরুত্ব দিচ্ছি। মানুষ ভালবাসার মানুষের গুরুত্বটা খুব চায়। এটাই খোঁড়াখুঁড়ি, যত এরকম করবাে ততই ওর মনে আমার জন্য ভালবাসার গভীরতা খোঁড়া হবে। আবার ধর ওর দিক থেকে যদি বলি, তাহলে ১০ বছর আগের ওই বাচ্চা মেয়েটা যে রাত দুপুরে আমার সাথে দেখা করতে ছাদে আসত, সেটা খুব বিপজ্জনক কাজ ছিল। তবুও আসত। মাঝে মাঝেই আমার জন্য এটা ওটা রান্না করতাে, আমি খেতে ভালবাসি বলে। প্রথমে কিন্তু রাঁধতে জানতাে না, আমাকে রান্না করে খাওয়ানাের জন্যই রান্না শিখল। এসব করে করে আমার মনে এত বেশি খুঁড়ে ফেলেছিল যে। আমার ভালবাসার গভীরতা সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তাই ১০ বছর কাছে না থেকেও অন্য কারাে কথা কখনাে ভাবতে পারিনি আমি!”
অভিমানিনী
মেয়েটা কেঁদেই চলেছে। আমি কখনােই মানুষের কান্না সহ্য করতে পারি না। আর আল্লাহ আমার কাছেই সবাইকে কাঁদতে পাঠায়! কী করবাে আমি? কী। বলে সান্তনা দেবাে? কিছু ভেবে না পেয়ে বললাম, 'আচ্ছা আচ্ছা.. এখন এসব বাদ দাও, ঘুমাও।" আমি লাইট অফ করে শুয়ে পড়লাম ও একই ভাবে কাঁদতে থাকলাে। অদ্ভুত তাে! এই মেয়ে কান্না থামায় কেন? কী হবে কী না হবে তা না ভেবে আমি ওর হাতটা ধরে ওকে কাছে টেনে এনে বুকে জড়িয়ে ধরলাম। কিছু বললাম না। শুধু ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম অনেকক্ষণ ধরে। এটুকু আমি করলাম শুধুমাত্র একজন মানুষ হিসেবে। ও আমাকে ধরলাে না। কেমন জড়ােসড়াে হয়ে রইলাে। একসময় ওর কান্নাটা থেমে গেলাে। পুরুষ মানুষকে আল্লাহ দুটো ক্ষমতা অনেক বেশী করে দিয়েছেন। এক নারীকে কাঁদানাের ক্ষমতা আর দুই নারীর কান্না থামানাের ক্ষমতা।
মহাযাত্রা
আমি যখন কলেজে পড়তাম তখন হােস্টেলে থাকতাম। শুধু তাই নয়, গণরুমে থাকতাম। যারা সরকারি স্কুল কলেজের হােস্টেলে থেকেছেন। অথবা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থেকেছেন তারা জানেন গণরুম কী? যারা জানেন না তারা এই উপন্যাসের প্রথম পর্বেই জেনে যাবেন। হােস্টেলে থাকাকালীন দুই বছরই আমি গণরুমে থেকেছি। আমি ভীষণ মিশুক হওয়ার কারণে শত শত মেয়ের সাথে আমার পরিচয় হয়েছে, খাতির হয়েছে। আমি প্রায় সকলেরই কথা রাখার বাক্স ছিলাম, শ্রোতা হিসেবে আমি উচ্চ পর্যায়ের। একজনের কথা আরেকজনকে বলতাম না বলেই হয়তাে আমি তাদের নির্ভরতার জায়গাটা অর্জন করতে। পেরেছিলাম। এরা সকলেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছে। একেকটি মেয়ের জীবন, পরিবার, মানসিকতা ছিল একেক রকম। একেকজনের গল্প শুনতাম আর অবাক হয়ে ভাবতাম, পৃথিবীতে আমাদের ভাবনার বাইরে এতকিছু ঘটে যায়? এর মধ্যে গুটিকয়েক মেয়ের জীবনের ঘটনা এবং তাদের চিন্তা-ভাবনা আমাকে রীতিমতাে ব্যথিত করে তুলত। দিন যত যেতে লাগলাে আর আমি বড় হতে লাগলাম, আরাে বেশিসংখ্যক এ ধরণের মেয়েদের সাথে পরিচিত হতে লাগলাম। এর মধ্যেই আমি লেখালেখি শুরু করেছি। তখন ভাবলাম আমার এদেরকে নিয়ে কিছু লিখতেই হবে। আমি কী ধরনের মেয়েদের কথা বলছি তা এখানে বিস্তারিত লিখতে পারছি না, আপনারা উপন্যাসটি পড়লেই বুঝতে পারবেন। বলা যায় মহাযাত্রা আমার ড্রিম প্রজেক্ট। আমার যত লেখা রয়েছে তার মধ্যে এই উপন্যাসটি লিখতে আমার সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়েছে। একটি উপন্যাস লিখতে লিখতে সেই উপন্যাসের চরিত্রগুলাে লেখকের পরিবারের সদস্যদের মত হয়ে যায়। তাই তাদের আনন্দে লেখক আনন্দ পায়, তাদের কষ্টে কষ্ট পায়। উপন্যাসটি পড়ে একটি মেয়েও যদি কোনাে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে তবে আমার এত কষ্ট করে এত বড় উপন্যাস লেখা সার্থক হবে। মহাযাত্রায় মূল চরিত্রের নাম প্রাণাে। প্রাণাের জন্মদিনের দিন তার জীবনে একটি বিশেষ ঘটনা ঘটে। রূপক অর্থে ধরা যায়, সেদিন তার নতুন করে জন্ম হয়েছে। আগের প্রাণাের সাথে এই প্রাণের কোনাে মিল নেই। আমি চাই মেয়েরা নতুন প্রাণাের মত আত্মবিশ্বাসী, আত্মসম্মানবােধ সম্পন্ন, পরিশ্রমী এবং স্বপ্নবাজ হয়ে উঠুক।
মৌরি মরিয়ম এর মৌরি মরিয়ম এর বেস্ট ফোর এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 1453.00 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Mouri Morium Best Four by Mouri Moriumis now available in boiferry for only 1453.00 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.