অবতরণিকা অনেক দিন ধরেই নিজের আনন্দের জন্য গল্প লেখি। সময়গুলাে যখন খুব কঠিন আর দুঃসহ মনে হয়, যখন মনে হয় যেই পৃথিবীর স্বপ্ন আমি দেখি সেই পৃথিবী ক্রমে ক্রমেই আমার স্বপ্নের বৃত্ত থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাইরে চলে যাচেই , তখনই আমার মাথায় গল্প লেখার ঝোক চেপে বসে। একটি গল্প আমি হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে না পারলে কলম দিয়ে প্রসব করতে পারি না গল্প লেখায় আমি খুব সিদ্ধহস্ত নই। বাংলা সাহিত্যকে যারা গল্প লেখে ধন্য করে গেছেন, মুগ্ধ করে গেছেন তাদের কথা ভিন্ন। তারা আমার নমস্য, আমার অতীত পথের সাহসী পরিব্রাজক। তাঁদের সঙ্গে আমি আমার গল্পের কোনাে তুলনা করতে চাই না। আমি শুধু তাদের কাছে ঋণ স্বীকার করতে চাই এই বলে যে, তারা তাদের গল্প দিয়ে যেভাবে আমার দৃষ্টিভঙ্গি তৈরী করে গেছেন সেই দৃষ্টিভঙ্গিই আমার অহংকার। আমার চোখ নতুন করে দেখে, আমার কান নতুনভাবে শােনে, আমার হৃদয় ভিন্নভাবে অনুভব করে। আমি সকলের সঙ্গে থেকেও একা। এই একাকিত্বই আমার গল্পসৃষ্টির সূতিকাগার। আমার মনে হয় পৃথিবীতে সবসময়ই গল্প হাজির থাকে। শুধু সেই গল্পগুলােকে ধরার মতাে চোখ থাকতে হয়। সেরা গল্পকার তারাই যারা পৃথিবীর সেরা উপলব্ধির, সেরা ঘটনার, সেরা আবেগের সার্থক রূপায়ন করে দেখিয়েছেন এবং দেখাচ্ছেন। একটা স্বচ্ছ মন না থাকলে একটা ভালাে গল্প অনুভব করা যায় না। আমি যে সময়ের মানুষ সে সময় বড়ই অস্থির এবং সংকটময়। এই দুঃসহ সময়ে কোনােকিছুর প্রতি গভীর মনােযােগ দেওয়া প্রায়ই অসম্ভব। তবু আমি চেষ্টা করেছি দুঃসহ সময়ের ভেতরে বসবাস করেও, সামাজিক ও রাষ্ট্রিক সমস্যার দূরে বসে গল্পগুলাের স্বর ও সুর অনুভব করার । আমার সাফল্য ব্যর্থতা ছেড়ে দিলাম পাঠকের হাতে। তাদের বিচারের উপর চিরদিনই আমি আস্থাবান। (সংক্ষিপ্ত……)