মন্বন্তর কথন ছাদের এক পাশটায় লাইন ধরে বড় টবের মধ্যে বেলি, কেয়া, দোলনচাঁপা, নয়নতারা, ক্যাকটাসের ঝােপ। আকাশে শুক্লা পঞ্চদশীর পূর্ণ চাঁদ। বৃষ্টিধােয়া কাচ জ্যোৎস্নারা দিগন্তজুড়ে মনােহর চাদর বিছিয়েছে। একটু আগে কালাে মেঘেরা তাদের বুকের সমস্ত জলকণায় ধরণী সিক্ত করে নাচছন্দে এগুচ্ছে অনাদির দিকে বরফ-সাদা পেঁজা তুলার রূপসাজ হয়ে। রেলিং পাশে বাঁধানাে বেঞ্চটাতে বসল পলাশ। একটা হিমেল পেলব সর্বাঙ্গ শ্রান্তিময় করে দিল। | ঘুম না-আসা এইসব রাতে পলাশের মননে ভেসে ভেসে আসে দূর অতীতের সেইসব গাঁথামালা, যেখানে জীবনের পরতে পরতে ছন্দময় কিংবা ছন্দহীন দ্যোতনা অবিরাম গীতিকাব্য তােলে বড় আকুলতা নিয়ে। কী সব সময় ছিল। ছােট ছােট ভাই-বােন, মা-বাবা আর যাপিত জীবনের নিদাঘ ক্ষণ। | আগত বর্ষার ঝক বৃষ্টি গ্রীষ্ম পােড়া তৃষিত মাটিকে ভিজিয়ে দিয়ে শুদ্ধতা বিলাতে থাকে। বিবর্ণ ফ্যাকাসে ঘাস, বুনােলতা, মাটির ভেতর লুকিয়ে থাকা পােকা-মাকড় সঞ্জিবনী সুধায় সিক্ত হয়ে যার যার জীবনীশক্তিকে হিল্লোলিত করার প্রয়াসী হয়। মাটিগন্ধা আকুলতায় ফুরফুরে আবাহনে মেতে সৃষ্টিরা সব ভেজা মিলনের গর্বিত সঙ্গী হতে ইশারা দেয় বিপরীত সত্তাদের। স্বর্ণলতা কেমন টগবগ বাড়ন্ত হয়ে আকাশ ছুঁতে উদ্যত হয় বৃষ্টির পরশ পেয়ে। জাম ডালেরা সবুজ কুঁড়ি ফোটার প্রতিযােগিতায় মেতে ওঠে। বুনাে জোক লিকলিকে দোলক তুলে রক্ত খোঁজার প্রয়াসী হয় লতাবনে। পুকুর আর খালপাড়ে বক, ডাহুকরা বিচরণ করে অকারণ এমাথা থেকে ওমাথা। ঢােড়া সাপ ডুব সাঁতারে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেয়। তিরতির বর্ষার পানি আসা শুরু হয় শুকনাে খালের তল ঘেঁষে। পানি শােষা মাটি কি তখন জাগতিকতাকে সমৃদ্ধ করার প্রয়াসে বুকে লালিত বীজকে সংক্ষিপ্ত.....