প্রকৃতি অন্ধ- প্রকৃতি বধির- প্রকৃতি বােধহীন- প্রকৃতি চেতনাহীন- এই নিষ্প্রাণ চেতনাহীন প্রকৃতিতে টিকে থাকতে হয় সংগ্রাম করে। এই পৃথিবীর সমস্ত প্রজাতি টিকে আছে সংগ্রামে। অধিকার আদায়ের সংগ্রামে। অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে। ইংরেজিতে যাকে বলে survival of the fittest টিকে থাকার এ সংগ্রামে নিজেদের অবস্থান পােক্ত করতে তৈরি হয় একশ্রেণীর সুবিধাবাদী শাসকগােষ্ঠীর। যুগের পর যুগ ধরে এই বুদ্ধিদীপ্ত শাসকগােষ্ঠী ঈশ্বরকে পুজি করে সংখ্যালঘু দূর্বলদের করেছে মুঠোবন্দী। ইতিহাসের পথে পথে লাঞ্চনা আর অধিকার বঞ্চিত এমনই এক মুঠোবন্দী দূর্বল সম্ভার নাম নারী। পুরুষের আত্মপ্রয়ােজনে বুদ্ধিদীপ্ত প্রভাবশালী পুরুষসমাজ নারীকে করেছে মুঠোবন্দী। সে নারীর প্রকৃতিক দূর্বলতাকে হাতিয়ার করে নিস্তেজ করেছে নারী প্রগতিশীলতা। গলা চেপে ক্রুদ্ধ করেছে নারীর বাক স্বাধীনতা। মানব সভ্যতায় ধাপে ধাপে সভ্যতার বিবর্তন এসেছে। পরিবর্তন হয়েছে পরিবর্ধন হয়েছে। চলমান সংস্কৃতি সংক্রান্ত হয়েছে নতুন সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটেছে। সভ্যতার এই ভাঙ্গা গড়ার খেলা চলছে অবাম। সভ্যতার পরিবর্তন হয়েছে, পৰ্বিবর্তন হচ্ছে, পরিবর্তন হবে এটা প্রকৃতির চিরচারিত বিষয়ের মতাে একটি। এটি একটি অকাট্য সত্য। সভ্যতার যুগে যুগে চলমান সংস্কৃতির স্বাভাবিক বিষয়গুলাে যেমন অস্বাভাবিক হয়েছে তেমনি অস্বাভাবিক বিষয়গুলােও স্বাভাবিক হয়েছে এবং হয়ে উঠছে। যেমন ধরুন, একটা সময় দাস প্রথা ছিল সমাজ সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য স্বাভাবিক অংশ। মানুষকে গােলাম বানিয়ে রাখা ছিল চলমান সমাজেম সামাজিক প্রথা। এ প্রথা বলেছে। বর্তমান সময়ে দাস প্রথা অপরাধ হিসেবে গণ্য হচ্ছে। আবার ধরুন, সতীদাহ প্রথা; একসময় স্বামীয় চিতায় স্ত্রীকে পুড়িয়ে ফেলা ছিল চলমান সমাজের স্বাভাবিক প্রথা। এ প্রথা বদলেছে। এ প্রথা এখন ভয়ংক কমের অপরাধ। তারপর ধরুন, ব'হাতে লেখার কথা; একটা সময় বা হাতে লেখা বা কাজ করা ছিল সমাজের অস্বাভাবিক একটি বিষয়। বাঁ হাতে লেখা বা কাজ কমা মানুষগুলােকে ঈশ্বর কর্তৃক নিগৃহীত মানুষ মনে করা হতাে। এ মনে কর সূত্র ধরে সেসময়কার ঢলমান সমাজ ব্যবস্থা তাদের মৌলিক অধিকার ছিনিয়ে নিতাে। তাদের জীবন দুর্বিহ করে তুলতাে। বেঁচে থাকার মতাে সর্বজনীন অধিকারকে ও অনিশ্চিত করে তুলতে। তাছাড়া সাদা কালাে বৈষম্য কিংবা ব্রাহ্মণ শূদ্রের জাত কুল বৈষম্যে গােটা পৃথিবী ডুবে ছিল অজ্ঞতার তিমিরে। মানুষের সেই ভয়ানহীনতার তিমির কাটছে ধীরে ধীরে। এ তিমির কি এমনি এমনিই কাটছে! এ বৈষম্য কি এমনি এমনিই ঘু েযাচ্ছে! স্বাভাবিক জিনিস কি হুট করেই অস্বাভাবিক হয়ে গেছে! অস্বাভাবিক জিনিস কি হুট করেই স্বাভাবিক হয়ে গেছে! না- মােটেও নয়। এর জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে।