আবেগে গলে যাবার মতাে অবস্থা এবং এ রকম কিছুক্ষণ চলতে থাকার পর শিশুর মতাে কলকলিয়ে কথা বলতে থাকে আবুল মৃধা। নবী প্রথমে হতভম্ব এবং পরে সম্বিত ফিরে পেয়ে তাজ্জব হয়ে যায় মৃধার ভালােমানুষিতে। তখন লােকটাকে মাঝে-মধ্যে পেছনে পেছনে গাল-মন্দ করার জন্য ভীষণ অনুতাপ হয় তার। নিজের অজান্তেই সে আরাে কাছে সরে আসে। মৃধা তাকে ঈদের দিনের কোলাকুলির মতাে সেই যে বুকে জড়িয়ে ধরেছেন আর ছাড়েন না। বুকে বুক মেশানাে, কাঁধের ওপর মৃধার দাঁড়ি সমেত মুখ ঘসে ঘসে মসৃণতা আনে, মাংসল নরম হাত তার শক্ত হাডিড বেরিয়ে আসা পিঠের ওপর বেড়ালের ছানার মতাে খেলা করে। নবীর শুধু অস্বস্তি লাগে এই ভেবে যে তার শুকনা হাড় জিরজিরে শরীরে লেপটে থেকে মৃধার নধর শরীরটার নিশ্চয়ই কষ্ট হচ্ছে। ব্যথা পাচ্ছে ঘি-মাখনে গড়ে ওঠা তুলতুলে মাংসের দলা। দু'এক বার শরীর ছাড়িয়ে নেবার মৃদু চেষ্টা করেও সফল হয়নি সে। মৃধা পরম আদরে তাকে বুকে জড়িয়ে রেখে আবেগে গদ গদ হয়ে কেবলই বলছেন, নবীরে তাের নাওগুলা আমার। দৌলত আনতিছে। চাঁদ সদাগরের পরই আমি। আমার নৌকা বন্দরে-বন্দরে, মােকামে- মােকামে চাল, ডাল, পেয়াজ, লবণ, মাছ আরাে হাজার বেসাতি নিয়ে যাতিছে। ব্যবসা ফুলে উঠতিছে দিন দিন। আকালের সময় “নাই, নাই” রব উঠলি পর আমার নৌকা বড় ব্যস্ত হয়া ছােটাছুটি করে। এ তল্লাটে আমারে ছাড়া উপায় নাই। আমি আড়তদার, আমিই মজুতদার, আমারে ছাড়া মােকাম। অচল, দেশ অচল, আর আমি তােরে ছাড়া অচল। বলতে বলতে মৃধার আবেগে গলা বুজে আসে। তারপর ঢােক গিলে তিনি বলেন, তুই এক-একটা নাও বানায়া দ্যাস, আর সেই নাও ময়ুরপঙ্খী নাওয়ের লাহান পালের পেখম। ফুলায়ে বরিশাল, ঝালকাঠি, চাদপুর, মীরকাদিম সব মােকামে যাতি থাকে।