"দ্য কম্পাউন্ড এফেক্ট" বইটির অনুবাদকের কথা অংশ থেকে নেয়াঃ
“ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল, গড়ে তােলে মহাদেশ, সাগর অতল।” এই প্রবাদটি আমরা কমবেশি সবাই শুনেছি। কেউ কেউ বিদ্যালয়, কলেজের পরীক্ষায় নম্বর তােলার জন্য পরীক্ষার আগের রাতে ভাব সম্প্রসারণ আকারে মুখস্থ করেছি। কিন্তু প্রবাদটির শিক্ষা আমাদের মধ্যে কতটুকু প্রভাবিত তার ব্যাখ্যা যদি বলতে বলা হয় তবে উত্তর আসবে, “আসলে ওরকমভাবে কখনাে ভাবা হয়নি।” ড্যারেন হার্ডির দ্য কম্পাউন্ড ইফেক্ট” বইটি আপনাকে প্রবাদটি নিয়ে ভাবাবে। এছাড়াও আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও নানা উদাহরণ দেখা যায়। আমরা সবাই হয়তাে এই প্রশ্নটির সম্মুখীন হয়েছি, “আজই আপনাকে এক কোটি টাকা দেয়া হবে আর নয়তাে আপনাকে আজ ২ টাকা দেয়া হবে আর তা ১ মাস পর্যন্ত দৈনিক দ্বিগুণ হারে বাড়বে। আপনি কোনটি নিবেন?” প্রাথমিকভাবে অনেকেরই উত্তর হয় আমি এক কোটি টাকা নিবাে। আরে সেই ব্যক্তিকে তখন বােকা সাব্যস্ত করা হয়। হিসাব করে দেখুন- ২য় অপশনটি নিলে মাস শেষে কত টাকা আসে? এই হিসাবের কাজটি আপনার মঙ্গলের জন্য আপনার ওপরই ছেড়ে দেয়া হলাে। আমি আপনাকে হিসাবের গভীরে লুকিয়ে থাকা গল্পটি বলতে চাই। আমাদের মঙ্কি এমনভাবেই স্বয়ংক্রিয় যে, আমরা জীবনে সংক্ষিপ্ত, সহজ ও সরল পথ খুঁজি। কিন্তু সফল ব্যক্তিগণ তা করেন না। আরেক কথায়, সংক্ষিপ্ত, সহজ ও সরল পথ দিয়ে সফল হওয়া যায় না। প্রয়ােজন শ্রম, সময় ও ধৈর্য। আপনি দৈনিক ১০ পৃষ্ঠা করে বই পড়লে মাস শেষে আপনার ৩০০ পৃষ্ঠা বই পড়া হয়ে যাচ্ছে, বছর শেষে ৩৬০০ পৃষ্ঠা হয়। দৈনিক ১০ মিনিট করে ব্যায়াম করলে সমানুপাতিক হিসাব। একই উদাহরণ অন্য সকল কাজের ক্ষেত্রে প্রযােজ্য। হ্যা! সকল কাজ। আমাদেরকে আর কিছু এখন করবাে না এমন মানসিকতা বদলাতে হবে। এই কথাটি আমাদের পিতামাতা, শিক্ষকসহ শ্রদ্ধেয়ভাজন অনেকেই বললেও তা শুনতে আমাদের ভালাে লাগতাে না। উপদেশ শােনা প্রায় সকলের কাছেই তিক্ত অভিজ্ঞতা। কিন্তু সেই একই উপদেশ যদি নানা কৌতূহলী বা ঘটনার সাথে যুক্তি সহকারে উপস্থাপন করা হয় তাহলে ‘উপদেশ’ শব্দটা থেকে তিক্ততা বাষ্প হয়ে হাওয়ায় মিশে যায়। ড্যারেন হার্ডি সেই তিক্ততা হাওয়ায় তাে মিশিয়েছেনই, বরং তিনি সকল ব্যাপারগুলাে এমন বাস্তবিকভাবে উপস্থাপন করেছেন যে, যেই উপদেশ আগে আমরা শুনলে আরাে পিছু হটতাম সেই একই উপদেশ শুনে সাথে সাথে কাজে লেগে যাওয়ার শক্ত অনুভূতি তৈরি হবে। তাই ও আপনার জন্য রইলাে শুভ কামনা।
এই বই থেকে আপনি জানবেন , অধিকাংশ সফল লেখক সকাল সকাল জেগে উঠে সারা দিনের সব কাজ শুরু করার পূর্বে তাদের লেখার কাজ সম্পন্ন করেন। আবার এমনও লেখক রয়েছেন যারা সন্ধ্যায় কাজ শুরু করেন, কেউ কেউ আবার যখন সময় পান তখনই লিখতে বসেন। তবে আপনি যদি পেশাদার লেখকদের অভ্যাসের দিকে নজর দেন , তবে দেখবেন অধিকাংশরাই সকালে জেগে উঠে লেখা শুরু করেন এবং বিকেল হওয়ার আগেই লেখা শেষ করেন।
প্রতিদিন হাজার হাজার শব্দ লেখা তেমন কঠিন কিছু নয়। সেজন্য কৌশল হলো , প্রতিদিনের অভ্যাসপূর্ণ রুটিন মেনে চলা এবং এই লক্ষ্যে অটল থাকা।
এই বইটির লক্ষ্য খুব সাধারণ: হল এলরড ও আমি স্টিভ স্কট আপনাকে শেখাবো কীভাবে ব্যক্তিগত জীবনে উন্নয়ন সাধন করবেন, কীভাবে ধারাবাহিকভাবে লিখবেন এবং লেখার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করবেন।
একজন আকর্ষণীয় , টেকসই ও অসাধারণ সফল মানুষে পরিণত হতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই এর ধাপগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। পাশাপাশি ধারাবাহিকভাবে লেখার অভ্যাস গড়ে তোলা , মহৎ আইডিয়াগুলো ধরে রাখা , ব্যবসায়ীক মডেল মেনে বিষয়বস্তু লেখা – এর সমস্ত কিছুই এই বইয়ে বর্ণিত হয়েছে। প্রতিটি অভ্যাস আপনার ব্যক্তিত্বের সাথে মিলিয়ে নিন।
লেখা সম্পর্কিত অন্যান্য বইয়ের তুলনায় ‘মিরাকল মর্নিং ফর রাইটার্স’ কে আলাদা হিসেবে খুঁজে পাবেন। কারণ লেখা থেকে অর্থ আয়ের খুঁটিনাটি এখানে যেমন রয়েছে , সেই সাথে বিভিন্ন কৌশলও বর্ণিত হয়েছে। ‘প্রতিদিন হাজার হাজার শব্দ লিখুন’ আমরা খুব সহজেই এটি বলতে পারি। তবে আমরা লেখক হিসেবে আপনাকে এই বইয়ে তা বলব না। আপনি কীভাবে হাজার হাজার শব্দ লিখবেন , আমরা সেই পদ্ধতিগুলো দেখিয়েছি। এমনকি লেখালেখি আপনার সব শেষের পছন্দ হলেও আপনি লিখতে সক্ষম।
এবার আপনার পালা।
আপনি যদি আগামীকাল সকালে ঘুম থেকে জেগে দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে মনে করেন , দিনটি চমৎকার যাচ্ছে, তাহলে কেমন হবে? আপনি যদি সকাল সকাল ঘুম থেকে জেগে ওঠাকে ভালোবেসে ফেলেন , তাহলে কেমন হয়? প্রতিটি সকালই যদি ঈদের সকালে পরিণত হয় , তাহলে কেমন হয়? ঈদের সকালগুলো মনে আছে? যখন আপনি ছোট বালক বা বালিকা , রাতে ভেবে রাখেন আগামীকাল সকাল চারটায় জেগে মা বাবাকে জাগিয়ে তুলবেন আর দেখবেন আপনার জন্য কত কিছু অপেক্ষা করছে। এমন দিনগুলোয় সকালে জেগে ওঠার উত্তেজনার পারদ উর্ধ্বমুখী থাকতো।
আমি আপনাকে বলে রাখি ,আমি প্রতিদিন সকালে এই আনন্দ উত্তেজনাটুকু বোধ করি। আমি প্রতিদিন বিছানায় যাই পরের দিনের কল্পনা করে , সকালে জেগে উঠে অনুমান করে নেই আজকের দিনটি আমাকে কতকিছু দিতে পারে। আমি কৃতজ্ঞ যে আমার অভ্যাসগুলো পরিবর্তন করতে পেরেছি। আমি দারুণ কিছু করতে সক্ষম হচ্ছি।
খুব সম্ভবত আপনি নিজের সম্পর্কে ভাবছেন , “আমি চেষ্টা করেছি কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। আমি সকালে জেগে উঠতে চেষ্টা করেছি। আমি আমার জীবন ও পেশাগত জীবনে উন্নয়নের চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমি অনেকবার ব্যর্থ হয়েছি। এখন আমি নতুন কিছু চেষ্টা করতে ভয় পাই। আমি কীভাবে আবারো সকালে জেগে ওঠার চেষ্টা করতে পারি? আমি কি পারবো? এই বই আমাকে সহায়তা করতে পারবে?”
জি , পারবে।
সকালে ঘুম থেকে জেগে অস্থির চিত্তে লিখতে বসতে ইচ্ছে হয় না, এই অনুভূতিটুকু আমার জানা। আবার সকালে জেগে খুব উদ্দীপনার সাথে লিখতে বসার আনন্দানুভূতিটুকুও আমার জানা। বিশ্বাস করুন, প্রতিদিনের শব্দসংখ্যা লেখা শেষ হয়েছে , এই অনুভূতি নিয়ে বিকেল শুরু করা অনেক আনন্দের ও ভালোলাগার। কীভাবে তেমন একটি বিকেল শুরু করবেন , এসবই বর্ণিত হয়েছে এই গ্রন্থে। সফল না হয়ে থাকলে এবার আপনি সফল হতে পারেন , আমার থেকেও বেশি সফল। আপনাকে শুধুমাত্র প্রতিটি সকাল নিয়ন্ত্রণ করা শিখতে হবে।
প্রস্তুত তো? তবে চলুন এবার বিভিন্ন কৌশল জেনে নেই।
আপনি উল্লেখযোগ্য কিছু শিখতে যাচ্ছেন। তা হলো – আপনার জীবন পরিবর্তনে মাত্র পাঁচ সেকেন্ড সময় প্রয়োজন। কথাটি মনভোলানো চটক বলে মনো হলো, তাই না? তবে এটি কোন মনভোলানো কথা নয় বা কোন বিজ্ঞাপনও নয়। এটি হলো বিজ্ঞান। আমি আপনাকে প্রমাণ করে দেখাবো। আপনি পাঁচ সেকেন্ডের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে জীবন পরিবর্তন করতে পারেন। আমরা বলতে পারি, জীবন পরিবর্তনের এটিই একমাত্র উপায়।
পাঁচ সেকেন্ড নিয়ম আসলে কী? এটি কীভাবে কাজ করে? এবং এটি কীভাবে বিশ্বব্যাপী মানুষদের জীবনে রূপান্তর এনেছে? এসব প্রশ্নের উত্তরই ‘দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল’। এই নিয়ম খুব সহজবোধ্য এবং এর প্রভাব সুগভীর। যে কোন পরিবর্তনের রহস্য এটি। নিয়মটি জানার পর আপনি তাৎক্ষনিকভাবে এটি প্রয়োগ করতে পারেন। বেঁচে থাকা , ভালবাসা , কাজ করা এবং প্রতিদিন অতি আত্মবিশ্বাস ও সাহসের সাথে কথা বলার জন্য এই নিয়মটি আপনাকে সহায়তা করবে।
নিয়মটি আপনি একবার প্রয়োগ করুন, এরপর নিয়মটিই আপনার প্রয়োজন বুঝে প্রয়োজনে হাজির হবে।
জীবনের খুব বাজে সময়ে দাঁড়িয়ে আমি পাঁচ সেকেন্ড নীতিটি তৈরী করেছিলাম। তখন আমার কাছ থেকে সবকিছু দূরে সরে যাচ্ছিল। সবকিছু মানে সবকিছু। আমার বৈবাহিক জীবন , আর্থিক অবস্থা , ক্যারিয়ার , প্রাণশক্তি ও উদ্দীপনা – সবকিছু ধূলিস্যাৎ হচ্ছিল। আমার সমস্যা এতো প্রকট ছিল , প্রতিদিন সকালে বিছানা ছাড়তে সংগ্রাম করতে হতো। আর এভাবেই এই নিয়মটির যাত্রা শুরু হয়। নিয়মটির মাধ্যমে আমি প্রতিদিন অ্যালার্ম বন্ধ করে আবার বিছানায় পড়ে থাকার মতো অবস্থা প্রতিরোধে সক্ষম হই।
সাত বছর আগে যখন আমি প্রথম এই নিয়মটি ব্যবহার শুরু করি , তখন ভেবেছিলাম নিয়মটি নিতান্তই অর্থহীন। এর বিশেষ কোন মূল্য নেই। আমার ধারণাও ছিল না , আমি এমন একটি নিয়ম উদ্ভাবন করেছি যেটি আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম।
পাঁচ সেকেন্ড নিয়ম ও পাঁচ সেকেন্ড এর সিদ্ধান্ত আমার জীবনে অবিশ্বাস্য কিছু বিষয় সৃষ্টি করলো। আমি জেগে উঠলাম। আমি শুধু জেগেই উঠলাম না , আমি সম্পূর্ণ জীবন জাগিয়ে তুললাম। সমস্ত বিষয়ের নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়নে আমি এই নিয়মটি প্রয়োগ করলাম। আমার আত্মবিশ্বাস থেকে শুরু করে আমার আয় , বিয়ে থেকে ক্যারিয়ার এবং উৎপাদনশীলতা ও মাতৃত্ব ভালোভাবে চলতে শুরু করলো।
আগে আমার আর্থিক দৈন্যতা ছিল। সেটি কাটিয়ে উঠলাম। আয় বেড়ে দাঁড়ালো সাতটি সংখ্যায়। আমার স্বামীর সাথে যেখানে দ্বন্দ চলছিল, সেখানেই আমরা বিশ বছরের বৈবাহিক জীবন উদযাপন করলাম। আমি নিজেকে দুঃশ্চিন্তামুক্ত করতে পেরেছিলাম , দুটি ছোট ব্যবসা তৈরী করে বিক্রিও করেছিলাম , সিএনএন ও সাকসেস ম্যাগাজিনে চাকুরী পেয়েছিলাম এবং বর্তমানে আমি বিশ্বের অন্যতম চাহিদা সম্পন্ন স্পিকার।
পাঁচ সেকেন্ড নিয়ম ছাড়া আমি নিজেকে এতোটা নিয়ন্ত্রনক্ষম , সুখী ও স্বাধীন হিসেবে অনুভব করতে পারতাম না। পাঁচ সেকেন্ড নিয়ম আমার সমস্ত কিছু পরিবর্তন করেছিল একটিমাত্র বিষয় শিখিয়ে। তা হলো , কীভাবে পরিবর্তিত হতে হয়। প্রশ্নটির উত্তর প্রদান করেছিল পাঁচ সেকেন্ড নিয়ম।
নিয়মটির মাধ্যমে আমি অতিচিন্তা মুক্ত হই। নিজেকে পর্যবেক্ষণ করা , নিজের মাঝে উপস্থিত থাকা এবং উৎপাদনশীলতায় আমি নিয়মটি ব্যবহার করেছি। কীভাবে নিজেকে নিয়ে সন্দেহ দূর করা যায় এবং নিজের উপর , নিজের আইডিয়া ও সক্ষমতায় বিশ্বাস স্থাপন করা যায় তা শিখিয়েছে এই নিয়মটি। অন্যদের জন্য নয় বরং নিজের জন্যই একজন ভাল ও সুখী মানুষে পরিণত হওয়ার মতো মানসিক দৃঢ়তা প্রদান করেছে নিয়মটি।
নিয়মটি আপনার জন্যও এই সহায়তাগুলো করতে পারে। আর সে কারণে আমি আপনাদের সামনে নিয়মটি নিয়ে এসেছি, আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। পরবর্তী কয়েকটি অধ্যায়ে আপনি এই নিয়মের পেছনের গল্প জানতে পারবেন , এটি কী , কীভাবে কাজ করে এবং এর সাথে কোন বৈজ্ঞানিক সম্পৃক্ততা আছে কিনা , এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন।
কীভাবে পাঁচ সেকেন্ড এর একটি সিদ্ধান্ত ও সাহস আপনার জীবন পরিবর্তন করে দিতে পারে , আপনি সে সম্পর্কে জানবেন।
সুস্বাস্থ্যবান , সুখী এবং কাজে অধিক উৎপাদনশীল ও কার্যকর হওয়ার পাঁচ সেকেন্ড এর নিয়ম জানবেন গবেষণা সমৃদ্ধ বর্ণনা থেকে। দুঃশ্চিন্তা ও উদ্বেগ দূর করা, জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়া ও যেকোন ভয় দূরীকরণে পাঁচ সেকেন্ড এর নিয়ম আপনাকে পথ দেখাবে।
এটিই শেষ নয়। আপনি অনেক প্রমাণ প্রত্যক্ষ করবেন। যারা পাঁচ সেকেন্ড এর নিয়ম ব্যবহার করে অগ্রগতি লাভ করেছেন , নিয়মটির ব্যাপারে তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্ট ও আমাকে প্রদান করা বিভিন্ন বার্তা এই গ্রন্থে উঠে এসেছে।
ড্যারেন হার্ডি এর মিলিয়ন কপি বেস্টসেলার তিনটি বই এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 603.00 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Million Copy Bestseller 3 Books by Darren Hardyis now available in boiferry for only 603.00 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.