ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদের বড় ছেলের নাম নুহাশ। সে যখন খুব ছোট কখন তাকে খুশি করার জন্য তিনি এই লেখা শুরু করেন। রোজ রাতে ঘুমুতে যাবার আগে ছেলে কয়েকপাতা করে পড়ে শুনান। নুহাশ একই সঙ্গে আনন্দিত হয় এবং রাগ করে। তাকে নিয়ে একটা উপন্যাস লেখা হচ্ছে এই নিয়ে আনন্দ কিন্তু উপন্যাসের নুহাশ একটি মেয়ে এই কারণে রাগ। মজার ব্যপার না।
বোতল ভূত
আমাদের ক্লাসে মুনির ছেলেটা একটু অদ্ভুত ধরনের। কারাে সঙ্গে কথা বলে না। সব সময় পেছনের বেঞ্চিতে বসে। ক্লাসের সারাটা সময় জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে। স্যার কিছু জিজ্ঞেস করলে চোখ পিটপিট করতে থাকে। তখন তার মুখ দেখে মনে হয়, সে স্যারের একটি কথাও বুঝতে পারছে না। মুনিরের এই স্বভাব স্কুলের সব স্যাররা জানেন। কাজেই কেউ তাকে কিছু জিজ্ঞেস করেন না। শুধু আমাদের অঙ্ক স্যার মাঝে-মাঝে ক্ষেপে গিয়ে বলেন, 'কথা বলে না। ঢং ধরেছে। চার নম্বুরী বেত দিয়ে আচ্ছা করে পেটালে ফড়ফড় করে কথা বলবে। আমাদের স্কুলের কমন রুমে নম্বর দেয়া নানান রকমের বেত আছে। বেত যত চিকন তার নম্বর তত বেশি। চার নম্বুরী বেত খুব চিকন বেত। এক নম্বুরী বেত সবচেয়ে মােটা।
কথায় কথায় বেতের কথা তুললেও অঙ্ক স্যার কখনাে বেত হাতে নেন না। কিন্তু এক-এক দিন মুনিরের উপর অসম্ভব রাগ করেন। যেমন আজ করেছেন। রাগে তাঁর শরীর কাঁপছে। মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে।
স্যার চৌবাচ্চার একটা অঙ্ক করতে দিয়েছেন। জটিল অঙ্ক। একটা পাইপ দিয়ে পানি আসছে। একটা ফুটো দিয়ে চলে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর ফুটো বন্ধ করে দেয়া হল--এই সব হাবিজাবি। মুনির ফট করে অঙ্কটা করে ফেলল। আমি মুনিরের পাশে বসেছি, কাজেই ওর খাতা দেখে আমিও করে ফেললাম। অঙ্ক হয়ে গেলে হাত উঁচু করে বসে থাকতে
একি কান্ড!
ছোটদের নিয়ে লেখা হলেও বড়রাও যে হাসবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। গল্পের মূল চরিত্র টুকুন। টুকুনের জ্বালায় তার মা বাবা অতিষ্ঠ। তারা ভেবে পায়না একটা থ্রীতে পড়া বাচ্চা ছেলে কিভাবে মিথ্যা কথা এত গুছিয়ে সত্যের মত উপস্থাপন করতে পারে। তার মিথ্যা কথা নিয়ে বিচার হচ্ছে এমনকি ডাক্তার দেখিয়েও কোন লাভ হচ্ছেনা। টুকুন তার মিথ্যা চালিয়েই যাচ্ছে। তবে টুকুন কোন মিথ্যা বলছে না, ইদানিং তার সাথে একটা কাক গল্প করে এটাতে মিথ্যার কি থাকতে পারে আর এটা অবিশ্বাস করারই বা কি আছে বুঝতে পারেনা টুকুন।
প্রতি সকাল বেলায় কাক এসে তার সাথে বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলে। এমনকি জন্মদিনেও কাক তাকে উপহার দিয়েছে ঝোং এর বাচ্চা। যেটাকে চোখে দেখা যায়না তবে সে কাগজ খায় কিন্তু সবার সামনে খায়না। টুকুন প্রমাণ পেয়েছে যে সত্যি সত্যি ঝোং এর বাচ্চা আছে। কিন্তু একদিন প্রচন্ড শাস্তির কোপে পড়ে টুকুন যখন স্বীকার করতে বাধ্য হয় ঝোং এর বাচ্চা এবং কাকের কথা বলা পুরাটাই তার কল্পনা ঠিক তখনই তার বাবা পা ঝোং এর বাবার অস্তিত্ব পায়। আশাকরি আপনাদের ভালো লাগবে।
পুতুল
১১ বছরের এক কিশোর বাচ্চা কে নিয়ে লেখা এই উপন্যাস। কাহিনী খুব বিস্তর না তবে বেশ মজার। বইটির প্রধান চরিত্র পুতুল আর সহ চরিত্র টোকাই অন্ত ও তাঁর বোন মরিয়ম। এই বইয়ের উপর নির্মিত ছবি "দূরত্ব" ও বেশ দারুন। বইটি মূলত ঐশ্বর্যের আড়ালের হারিয়ে যাওয়া কৈশোর যে কি দুর্দান্ত হতে পারে তা ফুটে উঠেছে, সেই সাথে ধনী ও গরিবের মাঝে ব্যবধান আসলে কতটুকু তা খুব সুন্দর করে বোঝা যাবে। ছোটদের জন্য খুবই শিক্ষণীয় বই, জীবন আদর্শ নিয়ে তাদের যে বোধ তা আরো জাগ্রত হবে। জীবনে বেঁচে থাকার জন্য বাবা, মা, ভাই বোন বা বন্ধুরা যে কত বড় ভুমিকা রাখে তা এখানে স্পষ্টভাবে তুলে এনেছেন লেখক হুমায়ূন আহমেদ। কিভাবে অনেক ধনী পরিবারের সন্তান হয়েও পুতুল টোকাই অন্তু আর মরিয়মের সাথে নির্দিধায় ফুটপাতের খাবার খায়, ওদের সাথে ময়লা জামা পড়ে ঘুরে বেড়ায়, একসময় ট্রেনে করে কাউকে না জানিয়ে ওদের সাথে দূরে ময়মনসিংহ চলে যায় এবং পরতে পরতে জীবনের বাঁক খুঁজে পায় তা জানা যাবে।
ছেলেটা
রনির জন্য আরাে একজন নতুন মাস্টার ঠিক করা হয়েছে। এই মাস্টার সাহেব প্রতি শুক্রবার আসবেন। সময় এখনাে ঠিক করা হয় নি। সকালে আসতে পারেন। বিকেলেও আসতে পারেন। রনি লক্ষ করেছে বড় বড় দুঃসংবাদগুলি সে পায় নাস্তার টেবিলে। যেবার তাদের নেপালে বেড়াতে যাওয়া ঠিক হলাে, রনি ব্যাগ গুছিয়ে পুরােপুরি তৈরি। স্কুলের বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছে। তাদের বাসার ঠিকানা নিয়েছে, নেপাল থেকে ভিউকার্ড পাঠাবে। তার ক্যামেরার জন্যে দু’টা ফিল্ম কিনেছে। সেবারও নাশতার টেবিলে মা বললেন, নেপাল যাওয়া হচ্ছে না। এবারের শীত খুব বেশি পড়েছে। রনি তখন মাত্র পাউরুটি মুখে দিয়েছে। তার এতই মন খারাপ হলাে যে, পাউরুটি গলায় আটকে খকখক করে কাশতে শুরু করল। মা রনির দিকে তাকিয়ে কঠিন গলায় বললেন, ঠিক মতাে খাও রনি। একটি আস্ত পাউরুটি মুখে দিয়ে ফেললে তাে গলায় বাঁধবেই। বাবাও মুখের ওপর থেকে পত্রিকা নামিয়ে সরু চোখে তাকিয়ে রইলেন। যেন পাউরুটি গলায় বিঁধে যাওয়া বিরাট অপরাধ। অথচ অপরাধ তারাই করেছেন। বেড়াতে যাওয়া ঠিকঠাক করে হঠাৎ বাতিল করে দিয়েছেন। | রনির ইচ্ছা করছে বাবা-মা দু’জনের ওপরই রাগ করতে। রাগ করতে পারছে না, কারণ এই দুজনের কেউ তার বাবা-মা না। দু’জনই নকল বাবামা। রনির ক্লাসের একটি মেয়ের সত্যা আছে (নাম মিঠু, অতিরিক্ত মােটা বলে তাকে ডাকা হয় মােটা-মিঠু, সংক্ষেপে মাে মি)। দু’জন ছেলের আছে।
সূর্যের দিন
এ বাড়ির নিয়ম হচ্ছে যাদের বয়স বারাের নিচে তাদের বিকেল পাঁচটার আগে ঘরে ফিরতে হবে। যাদের বয়স আঠারাের নিচে তাদের ফিরতে হবে। ছ'টার মধ্যে।
খােকনের বয়স তেরাে বছর তিন মাস। কাজেই তার বাইরে থাকার মেয়াদ পাঁচটা। কিন্তু এখন বাজছে সাড়ে সাতটা। বাড়ির কাছাকাছি এসে খােকনের বুক শুকিয়ে তৃষ্ণা পেয়ে গেল। আজ বড়চাচার সামনে পড়ে গেলে ভূমিকম্প হয়ে যাবে।
অবশ্যি চমৎকার একটি গল্প তৈরি করা আছেই। থােকন ভেবে রেখেছে সে মুখ কালাে করে বলবে—“সাজ্জাদের সঙ্গে স্কুলে খেলছিলাম, হঠাৎ দেখলাম বিরাট একটা মিছিল আসছে। সবাই খুব স্লোগান দিচ্ছে—“জাগাে বাঙালি জায়গা। আমরা দূর থেকে দেখছি। এমন সময় গণ্ডগােল লেগে গেল। পুলিশের গাড়ির উপর সবাই ইট-পাটকেল মারতে লাগল। চারদিকে হৈচৈ ছােটাছুটি। আমি সাজ্জাদকে সঙ্গে নিয়ে ছুটতে লাগলাম। পেছনে পটাপট শব্দ হচ্ছে, বােধহয় গুলি হচ্ছে। আমরা আর পেছন ফিরে তাকাই নি, ছুটছি তাে ছুটছিই। ফিরতে দেরি হলাে এই জন্যে।” | খুব বিশ্বাসযােগ্য গল্প। আজকাল রােজই মিছিল হচ্ছে। আর রােজই গণ্ডগােল হচ্ছে।
মিছিলের ঝামেলায় পড়ে যাওয়ার কথা সবাই বিশ্বাস করবে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, বড়চাচাকে ঠিক সাধারণ মানুষের পর্যায়ে ফেলা যায় না। তার সম্ভবত তিন নম্বর চোখ বলে কিছু আছে, যা দিয়ে তিনি
রাক্ষস খোক্কস এবং ভোক্কস
হুমায়ূন আহমেদ এর হুমায়ূন শিশু-কিশোর উপন্যাস সমগ্র এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 849 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Humayun Shishu Kishor Uponyas Somogro by Humayun Ahmedis now available in boiferry for only 849 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.