নিজের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে যত হুমকি মানুষকে মােকাবেলা করতে হয় তার সব ক্ষেত্রেই প্রতিরােধের প্রাথমিক অস্ত্র হিসেবে যা ব্যবহৃত, তা হলাে তার ভাষা। বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ওঠার আগে ভাষার ভূমিকাটি পালিত হতাে সঙ্কেতের আশ্রয়ে; যে ভাষা আজ মানুষের আত্মরক্ষার হাতিয়ার, আদিতে তা-ও ছিল অবিকশিত সঙ্কেত-ব্যবস্থা মাত্র। যুগপরিক্রমার অজস্র অভিঘাত পেরিয়ে সঙ্কেত-ব্যবস্থাকে ভাষা-প্রতিষ্ঠানের পর্যায়ে উন্নীত হতে হয়। অবশ্য মনে রাখা জরুরি, বিকাশের বিশিষ্ট পর্বে এসে ভাষা যে রূপান্তরিত প্রাতিষ্ঠানিকতা অর্জন করে তা-ও মূলত অঙ্গ-সঙ্কেত থেকে ধ্বনি-সঙ্কেত ব্যবস্থার উন্নয়ন ছাড়া এমন কিছু নয়। পৃথিবীর অনেক উন্নত ভাষার মতাে বাংলা ভাষার সমুন্নয়ন প্রক্রিয়াটিও ঘটেছে ইতিহাসের স্বাভাবিক ধারাপাতে। কিন্তু ভাষার সে বিকাশধারা জনসংস্কৃতির আন্তস্রোতে এগিয়েছে, ক্ষমতাকেন্দ্র ও রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠানের আনুকূল্যে তেমনটি পারেনি। | মাতৃভাষা একটি জনগােষ্ঠীর অস্তিত্বের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত। জনগােষ্ঠীর ভাষার মৃত্যু হলে গােষ্ঠীভুক্ত মানুষের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটে, যদিও মানুষগুলাে জনমিতির বিচারে অস্তিত্বহীন হয় না। যে জাতির মাতৃভাষা স্বীকৃত তার আত্মপরিচয়ও স্বীকৃত। অর্থাৎ মাতৃভাষা একটি জাতির আত্মপরিচয়ের সূচক। দক্ষিণ এশিয়া প্রসঙ্গে এমন একটি মন্তব্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। যেমন দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ। ইংরেজ অধ্যাপক মরিস জোনস (Morris Jones) বলেন, ভাষা একটি গােষ্ঠীর গুরুত্বপূর্ণ আত্মপরিচয় চিহ্ন (Language is perhaps the important mark of group identification) এবং গােষ্ঠীটির সীমানা চিহ্নিতকারী (a delineator of group boundaries)।