পৃথিবীতে কেন এই আমি জন্মের পর তীব্র নিনাদে চিৎকার করে আমি কেঁদে উঠি। চারপাশে আত্মীয়স্বজনরা সবাই আনন্দিত প্রতীক্ষিত আমাকে পেয়ে। সদ্য হাড় ভাঙ্গার মত জখমে জর্জরিত আমার দিকে অপলক তাকিয়ে মিষ্টি হেঁসে প্রশান্ত অবয়বে তার আগে-পিছের সকল কষ্ট ঝেড়ে ফেলে হৃদয় কুঠুরীতে আমাকে নিয়ে এক নতুন পথিবীর জাল বুনেন, আর তিনি বনে যান এক স্বার্থক রমণী। তাপমাত্রার চক্রাবর্তে গরম-ঠাণ্ডার কোন একটা অনুভূত হলেই আমার হাত-পা ছুড়তে দেরী হয় না, সেসাথে মুখে তাে আছেই কানফাটা চিত্তার। আমার এই অসহায়ত্বের শৈশাবস্থায় নিঃস্বার্থ সঙ্গী আমার মা অকাতরে আমাকে লালন-পালন করেই চলেছেন। প্রসাব-পায়খানায় সময়েঅসময়ে বিছানা নােংরা করেছি। আমার অসুবিধা হবে বলে তার পরিষ্কার করতে দেরী হয় নি। আমার আনন্দের জন্য, প্রয়ােজনের জন্য কত আরাম যে তার ত্যাগ করতে হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। কত রাত তিনি নিঘুম রাত কাটিয়েছেন। আমি অসুস্থ হলে সে মানুষটি আমার মায়ের মানসিক অস্থিরতার অন্ত থাকে না। সদা জাগ্রত তার মন তার সন্তান কবে সুস্থ হবে। আত্মীয়-স্বজনের ফোনের পর ফোন দিয়ে খবরাখবর নিতে ব্যত্যয় ঘটে না। এভাবে প্রতিটি মায়েরই গড়ে উঠে তার সন্তান কেন্দ্রিক এক ভুবন। সে আদর স্নেহের জগৎ কোন মানুষের অপ্রাপ্তি নেই। এত সুন্দর জগৎ এর সেই শিশুটি এরকম ফুটফুটে রঙ্গীন স্বপ্নময় এক জগৎ উপহার দিয়ে তার মায়ের আদর্শ সন্তান হয়ে হৃদয় উদ্বেলিত হবে, মুখে হাঁসি ফুটে মুখখানা উজ্জ্বল হবে; এটা কার না চাওয়া পাওয়া? পৃথিবীর আদি হতে সর্বশেষ পর্যন্ত প্রতিটি মায়ের হৃদয়ের কথা এটাই। এর বিপরীত চিন্তার দ্বিতীয় কোন মা থাকলে তাকে বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করবে। সুতরাং এটা বিশ্বজনীন সত্য। গাণিতিক পরিভাষায় এটাকে Constant বলা যায়।