২০১১ সালের রমাদান মাস। ইফতার শেষ। মাগরিবের সালাত পড়ে রুমে ঢুকে বাতি নিভিয়ে দিলাম। পিসিতে আইটিউনস চালু ছিল। প্লে লিস্ট থেকে ‘মোস্ট প্লেড’ গানগুলো প্লে করলাম। গান শুনলাম টানা এক ঘণ্টা। নতুন করে ইসলামে ফিরে আসার পরপরই এত দিনের পুরোনো অভ্যাস ছাড়া সহজ ছিল না। গান তো শুধু অভ্যাসের বিষয় না। এটা একটা আকর্ষণ। সুরের অনুরণন। শরীরের প্রতিটি সড়বায়ুতে ঢেউ খেলে যায়। মাদকাসক্তি দূর করা যায়, কিন্তু শরীরের ভেতরেই যদি মাদক বাসা করে নেয়, সেটা দূর করবেন কীভাবে? ঠিক এক ঘণ্টা পর চোখ খুলে ভাবলাম- নাহ, এভাবে হবে না। যা করার এক্ষুনি করতে হবে। এই মুহূর্তে। আমার পিসিতে প্রায় ৬ জিবির মতো গানের আলাদা পার্টিশন ছিল। ক্ষণিকের চিন্তায় সব শিফট ডিলিট। ওখানেই গানকে তালাক। তিন তালাক! গানের সুর, সংগীত এখন আর কোনোভাবেই টানে না। আলহামদুলিল্লাহ। একসময় হাতেগোনা হারাম যে কয়টা বিনোদনে মশগুল ছিলাম, সেগুলোর পরিবর্তে এখন অসংখ্য হালাল বিনোদনে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছি। পুরো বইতে একটা কথারই অনুরণন পাবেন; আল্লাহর দুনিয়ায় হালাল অগণিত। হারাম গণিত। কিন্তু আমরা সেই গুটিকয়েক হারামে আরাম খুঁজি। প্রথম যেদিন মূল বইটির নাম শুনেছিলাম, সেদিন থেকেই অনুবাদের জন্য তক্কে তক্কে ছিলাম। বাংলা ভাষায় এ ধরনের ইসলামি বই বিরল। এত সহজ ভাষায় সুন্দর উপস্থাপনাও খুব একটা দেখা যায় না। আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি অনুবাদেও সেই সহজতা ধরে রাখার। লেখক নিজে যুবক হওয়ায় এই বয়সের নারী-পুরুষের মনমানসিকতা বুঝে বইটি সাজিয়েছেন। কাজেই ভালো না লেগে পারে না। মূল ইংরেজি বইটি মালয়েশিয়া থেকে নিয়ে এসেছিলেন নাবিল ভাই। বইটি অনুবাদ করার সময় সম্পাদক রফিক ভাই খুব সুন্দর একটা কথা বলেছিলেন- পুরো প্যারাটা পড়ুন, তারপর নিজের মতো করে সেটা বাংলায় লিখুন (হায়! আমার ছাত্ররা কবে এটা বুঝবে)। অনেক আগে অনুবাদ করে রাখলেও নানা জটিলতায় বইটি প্রকাশ হতে পারেনি। গার্ডিয়ানের নূর মোহাম্মাদ আবু তাহের ভাইকে বলা মাত্রই যেভাবে লুফে নিলেন, সেজন্য তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ। এটা আমার প্রথম অনুবাদ না। আমার প্রথম অনূদিত বই এখনো প্রকাশ পায়নি। তবে পূর্ণাঙ্গ বই হিসেবে এটাই আমার প্রথম কাজ। স্বাভাবিকভাবেই রোমাঞ্চিত। পাঠক শুধু বইটি পড়ার জন্য পড়বেন না; বরং কাজে লাগাবেন বইটির মর্মার্থ, এটাই চাওয়া।