‘রক্তেভেজা অববাহিকা’ বইটির কিছু কথাঃ সিরাজুল ইসলাম মুনিরের দুটি উপন্যাস আমি পড়েছি। দুটি উপন্যাসেই বাংলাদেশের সমাজজীবনের বাস্তব কিছু ছবি তিনি বিশ্বস্ততার সঙ্গে তুলে ধরেছেন। তিনি গতানুগতিক মধ্যবিত্ত-চিত্র, অথবা প্রেমকে প্রধান বিষয় করেন না তার উপন্যাসে বরং সমাজের ভেতরের প্রকৃত দ্বন্দ্বগুলোকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেন। নদী বা সমুদ্রতীরের মানুষের প্রতিদিনের চালচিত্র তার বেশি পছন্দ। তার একটি কারণ হয়তো এই যে, তার ঘটনাগুলোর পেছনে সামাজিক ও ঐতিহাসিক অনিবার্যতার যে বিস্তার তা ওই নদী বা সমুদ্রের সঙ্গেই সমান্তরাল। তবে তার দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকে মানুষের ওপর নারী-পুরুষ, ওপরতলার-নিচতলার, ভাল-মন্দ মানুষের ওপর। মুনির খুব সহজেই জীবনের দ্বন্দ্বগুলি চিহ্নিত করতে পারেন, তাদের প্রকাশগুলিকে তার বর্ণনায় সাজাতে পারেন, এবং সমাজে কারা শোষণ করে, কেন করে, শোষিতের জীবনে ওই শোষণের অভিঘাত কী, সেগুলো বর্ণনা করতে পারেন। তার চরিত্রদের তাই মনে হয় জীবনানুগ, যেন তাদের তিনি খুব কাছে থেকে পর্যবেক্ষণ করেছেন, তাদের আচার-আচরণের খুঁটিনাটিকে তিনি ঘনিষ্ঠভাবে উপলব্ধি করতে পারেন। চরিত্রচিত্রণের কুশলতা মুনিরের একটি বড় গুণ। রক্তেভেজা অববাহিকার জন্য মুনির বেছে নিয়েছেন বাংলাদেশের এমন একটি ত্রিকোণ, ভূগোল, যার সাথে তার ঘনিষ্ঠ পরিচয় আছে। এই ভূগোলের একদিকে চর জব্বার-চরলক্ষ্মী, অন্যদিকে হাতিয়া, আর তৃতীয় দিকে রামগতি। এই জায়গাটি বিস্তীর্ণ একটি চরভূমি। এবং একসময় এখানে উপকূলীয় বৃক্ষায়নের আওতায় একটি বন তৈরি করা হয়েছিল। বনভূমির আয়তনও কম ছিল, প্রায় ৬০ হাজার একর। কিন্তু ভূমি-অভাবী এই দেশে এরকম সরকারি বনভূমি রক্ষায় যে ধরনের ব্যবস্থা থাকা উচিৎ ছিল, এখানে তা ছিল না। ফলে আবির্ভাব ঘটে ভূমিদস্যুদের। এর ফলে বিত্ত ও ক্ষমতাশালী নানা মানুষের। এবং রাজনীতিবিদদের। আমাদের দেশে দুষ্ট রাজনীতি হাত ধরে চলে সন্ত্রাসের। এই বন দখলে নিতে সন্ত্রাসী বাহিনীকেও জড়ো করে প্রায় সকল পক্ষ। এই হল উপন্যাসটির একটি প্রধান প্রবাহ। দ্বিতীয় প্রবাহটি চরের আশেপাশে আশ্রয়ের আশায় জড়ো হওয়া ছিন্নমূল মানুষদের নিয়ে। এই মানুষগুলি নদীভাঙনের শিকার। তারা নিজেদের মতো করে একটি জনপদ গড়ে তোলে। প্রথম প্রবাহের সঙ্গে দ্বিতীয় প্রবাহ বিপরীত স্রোতে মেলে। একদিকে বন দখল, বন উজাড়, অন্যদিকে আশ্রয় নেয়া মানুষগুলোর জীবনে সন্ত্রাসীদের ঢুকে পড়া-এ নিয়ে বাহিনীর মূল দ্বন্দ্বটি শুরু হয়। আশ্রয় নেয়া মানুষগুলোর শক্তি সীমিত, সেই শক্তি দিয়ে তারা ভূমিদস্যুদের ও তাদের বাহিনীদের মোকাবেলা করতে পারে না। তাদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা হয় বীভৎস। এই নিরীহ মানুষগুলো যে প্রতিরোধ তৈরি করে না তা নয়, কিন্তু তা গুঁড়িয়ে যেতে বেশিক্ষণ সময় লাগে না। ফলে প্রতিরোধের বিষয়টি কিছু ব্যক্তি ও সমষ্টির বীরত্বের গল্প হয়েই থাকে। হত্যা ও নির্যাতনের পাল্লা তাতে হাল্কা হয় না। সিরাজুল ইসলাম মুনির যে ঘটনাগুলি বর্ণনা করেছেন, তা কল্পিত নয়, বাস্তব। এসব এই রক্তাক্ত ভূগোলে ঘটেছে। এখানে মানুষ খুন হয়েছে, নারীরা লাঞ্ছিত হয়েছে, বন দখল হয়েছে, মূলভূমিতেও সন্ত্রাস ছড়িয়েছে, কিন্তু কোনো প্রতিকার হয়নি, নষ্ট রাজনীতিবিদরা বিত্ত আর ক্ষমতার সঙ্গী হয়েছেন। সরকারের বনবিভাগ হাত মিলিয়েছে ভূমিদস্যুদের সঙ্গে। এইসব পতন এবং পচনের গল্প যেন আমাদের নিয়তি। কিন্তু মুনির তা মানতে চান না। তিনি বরং দেখাতে চান, অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে মানুষ দাঁড়িয়ে গেলে আজ না হোক, কাল না হোক, পরশু তার পতন হবে। একটা বেদনাভারী উপন্যাসে ওই পরশুর জন্য আশা করে থাকার বিষয়টিই তো বর্তমানকে অস্বীকারের। সত্যি কিছু ঘটনাকে উপন্যাসে সাজাতে গিয়ে সেগুলোতে অনেকটা ঘষা-মাজা মুনিরকে করতে হয়েছে। তাতে চরিত্ররা একই সঙ্গে প্রকৃত এবং কল্পিত দুটিই হয়েছে। মুনিরের ভাষাটি সাদামাটা, আটপৌরে, অনেকটা সংবাদপত্রের ভাষার মতো, কিন্তু তার ঘটনার সঙ্গে ঘটনা জুড়ে দিয়ে গল্প রেখাটিকে এগিয়ে নেয়ার শক্তিটি বেশ প্রবল। বইটি জীবন সম্পর্কে আমাদের ভাবায়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে উদ্বুদ্ধ করে। এটি কোনো উচ্চাভিলাষী উপন্যাস নয়, কিন্তু মাটির কাছাকাছি থেকে এটি জীবনের কিছু সত্যকে বেশ নির্মোহ দৃষ্টি দিয়ে দেখতে সাহায্য করে আমাদের।
লেখক পরিচিতিঃ সিরাজুল ইসলাম মুনির
সিরাজুল ইসলাম মুনির, জন্ম 26 জুলাই 1956, ভূঁইয়া বাড়ি, চর জুবিলি, সুবর্ণচর, নোয়াখালি। শৈশব কৈশোর কেটেছে ফেঞ্চুগঞ্জ ও সিলেট শহরে। দীর্ঘ আট বছর সিলেট ও চট্টগ্রাম রেডিওতে সংবাদ পাঠক হিসেবে কাজ করেন। বর্তমানে বাংলাদেশ টেলিভিশনের গ্রন্থ ও প্রকাশনা বিষয়ক অনুষ্ঠান ‘বই পত্র’র গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা করছেন। 1981 সালে দৈনিক গণকণ্ঠে সহ-সম্পাদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ঐ বছরেই পেশা বদল করে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। আমাদের সৃজনশীল সাহিত্যধারার অন্যতম লেখক সিরাজুল ইসলাম মুনির।
লেখক পরিচিতিঃ সিরাজুল ইসলাম মুনির
সিরাজুল ইসলাম মুনির, জন্ম 26 জুলাই 1956, ভূঁইয়া বাড়ি, চর জুবিলি, সুবর্ণচর, নোয়াখালি। শৈশব কৈশোর কেটেছে ফেঞ্চুগঞ্জ ও সিলেট শহরে। দীর্ঘ আট বছর সিলেট ও চট্টগ্রাম রেডিওতে সংবাদ পাঠক হিসেবে কাজ করেন। বর্তমানে বাংলাদেশ টেলিভিশনের গ্রন্থ ও প্রকাশনা বিষয়ক অনুষ্ঠান ‘বই পত্র’র গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা করছেন। 1981 সালে দৈনিক গণকণ্ঠে সহ-সম্পাদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ঐ বছরেই পেশা বদল করে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। আমাদের সৃজনশীল সাহিত্যধারার অন্যতম লেখক সিরাজুল ইসলাম মুনির।
Rokteveja Aobobahika,Rokteveja Aobobahika in boiferry,Rokteveja Aobobahika buy online,Rokteveja Aobobahika by Sirajul Islam Munir,রক্তেভেজা অববাহিকা,রক্তেভেজা অববাহিকা বইফেরীতে,রক্তেভেজা অববাহিকা অনলাইনে কিনুন,সিরাজুল ইসলাম মুনির এর রক্তেভেজা অববাহিকা,9847016900716,Rokteveja Aobobahika Ebook,Rokteveja Aobobahika Ebook in BD,Rokteveja Aobobahika Ebook in Dhaka,Rokteveja Aobobahika Ebook in Bangladesh,Rokteveja Aobobahika Ebook in boiferry,রক্তেভেজা অববাহিকা ইবুক,রক্তেভেজা অববাহিকা ইবুক বিডি,রক্তেভেজা অববাহিকা ইবুক ঢাকায়,রক্তেভেজা অববাহিকা ইবুক বাংলাদেশে
সিরাজুল ইসলাম মুনির এর রক্তেভেজা অববাহিকা এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 149 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Rokteveja Aobobahika by Sirajul Islam Muniris now available in boiferry for only 149 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.
সিরাজুল ইসলাম মুনির এর রক্তেভেজা অববাহিকা এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 149 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Rokteveja Aobobahika by Sirajul Islam Muniris now available in boiferry for only 149 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.