নিথর নিস্তব্ধ এই বিচিত্র পৃথিবীর মধ্যে মানুষ মহান সৃষ্টিকর্তার মহিমার একমাত্র শুভ ফসল। মানুষ জন্মগ্রহণ করেছে আধ্যাত্মিক তত্ত্বে ও তথ্যের সরস যুগ সন্ধিক্ষণে। মানুষের বংশবিস্তারের মাধ্যমটি এক আকর্ষণীয় রােমান্টিক বলয়ে। প্রেম শব্দটি এই বােমান্টিক বলয়ের সর্বপ্রথম উপমা। আদিকাল থেকেই মানুষের মধ্যে কাজ করে আসছে একটি সুপ্ত আস্বাদন- যার উপভােগের শিকার হয়ে প্রতিটি মানুষের জীবনের সচিপত্র তৈরি হয়। যেমন বলা যায়- ধন-দৌলত, বাদশাহী, প্রেম ও রাজ্য লালসা প্রেমানুভূতির কারণে মানুষ ভেসে যায় তার কঠিনতম কর্মসূচির প্রেক্ষাপট রচনায়। তারই একটি উপভােগ্য অধ্যায় হিসেবে আমরা উপন্যাসকে সাহিত্যরসের অংশ হিসেবে বেছে নিতে পারি। বিংশ শতাব্দীর আশির দশকে সাহিত্যের ভুবনে রাজিয়া জামানকে দেখেছি পিল পিল করে উৎরে উঠতে। তার প্রকাশিত ‘নিহত গােলাপ আহত পাখি' প্রকাশিত হওয়ার পর এই মহীয়সীর পরিচয় ছােট হলেও ছড়িয়ে যায় উপন্যাসিক ভুবনে একটি প্রশংসার দাবি নিয়ে। তার লেখা ‘নিহত গােলাপ আহত পাখি’ উপন্যাসটির ১৯৯২ সাল থেকে এ পর্যন্ত পঞ্চম সংস্করণ নিঃশেষ হয়েছে। দেশপ্রেমের গভীর মন্ত্রে দীক্ষিত বলেই তিনি ১৯৭১ সালের যুদ্ধের কিছু বাস্তব ঘটনা নিখুঁতভাবে চিত্রায়িত করতে সক্ষম হয়েছেন যা সত্যিই হৃদয় বিদারক। ৫২ ও ৭১ কে নিয়ে কিছু কবিতাও বইটির মধ্যে তুলে ধরেছেন। আঞ্চলিক ভাষায় সুখদুঃখের ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি মা তার ছেলের জন্য কতটুকু ত্যাগ স্বীকার করতে পারে এবং ধনীদের পৈশাচিক আচরণ কীভাবে অবলা গরীব-দুঃখী মানুষের প্রাকৃতিক রূপ-সৌন্দর্যকে হরণ করতে পারে, সুখের স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করতে পারে, তারই একটি বাস্তব চিত্র রাজিয়া জামান তার এই উপন্যাসে ভাষায়, ভাবে গতিময়তা দিতে পেরেছেন। উপমার প্রেক্ষাপটে, মূল চরিত্রে মা রাবেয়া ও তার আদরের নন্দন ধনীর দুলালের খােকার মতাে করে যে তার খােকাকে বহু কষ্টে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েও মানুষের মতাে মানুষ করতে পেরেছিল, তাকেই নায়কের ভূমিকায় রেখে উপন্যাসটি পাথক করতে পেরেছেন বলে আমার বিশ্বাস। লেখিকা ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাত শাপায়তার মধ্য দিয়ে বিষয়ের শেষ প্রান্তে পৌছে মূল ট্রাজেডিকে সৃষ্টি করেছেন। , 'বস্তির খােকা' উপন্যাসটি মেরিট ফেয়ার প্রকাশন প্রকাশ করতে যাচ্ছেন জেনে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। সেই সঙ্গে এই উপন্যাসের লেখিকা রাজিয়া জামানের জন্য আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও আশীর্বাদ। তার অব্যাহত অগ্রযাত্রা কামনা করি।