ভূমিকা বহির্বিশ্বে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের তােড়জোড় তথা ভারতবর্ষের রাজনৈতিক অস্থিরতা যখন উত্তালতরঙ্গময় ঠিক সেই সময় এই শ্রেণী সচেতন, জীবনঘনিষ্ঠ সাহিত্যকর্মে নিবেদিতপ্রাণ লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯০৮-১৯৫৬)-এর জন্ম হয়। তার আসল নাম হচ্ছে প্রবােধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় হিসেবেই তিনি সর্বাধিক পরিচিত। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতা হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় চাকুরি সূত্রে সাঁওতাল পরগনার দুমকায় গমন করেন। এখানেই মানিকের জন্ম হয়; কিন্তু পূর্ববঙ্গের নদীনালা, খালবিল, তেলে-জলেই। তিনি মানুষ। তাই ঐ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের জীবনচিত্রকে অপূর্ব দক্ষতার সাথে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন তিনি। বহুবিচিত্র অভিজ্ঞতার ভারে নুইয়ে পড়া মানিক পাঠককে তাঁর অভিজ্ঞতার ভাগ দেয়ার জনাই লেখা শুরু করেন। শ্ৰেণীবৈষম্য, শােষণ, সামাজিক অসংগতির বিরুদ্ধে শোচ্চার মানিকের মার্কসবাদে দীক্ষা নেয়া জীবনের একটা পর্বান্তর হিসেবে ধরে নেয়া হয়। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৩৫ সাল থেকেই লেখালেখি শুরু করেন। তিনি যখন সাহিত্যজগতে প্রবেশ করেন তখন ফ্রয়েডীয় মনােবিকার তত্ত্ব সাহিত্যমহলে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর একশ্রেণীর উপন্যাসে বিশাল বিস্তীর্ণ নদ-নদীর পটভূমিকায় সাধারণ মানুষের যেমন বস্তুনিষ্ঠ জীবনচিত্র অঙ্কন করেছেন তেমনি মানুষের কাম-পিপাসার জীবন্ত চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে আদিমতার অন্ধকারে ফিরে গেছেন বারে বারে। অদ্ভুত নিরাসক্তভাবে তিনি মানুষের জীবন ও সমস্যাকে দেখেছেন, সমাধানের চেষ্টাও করেছেন নিজের নিয়মে। নর-নারীর জৈবসত্তা বিকারের নানা দিক লেখককে আকৃষ্ট করেছিল। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তার উপন্যাসে জৈবসত্তা ও দৈহিক বর্ণনায় ছিলেন কিছুটা বে-আব্রু ও বেপরােয়া। দৈহিকভাবে অসুস্থ হলেও মানসিকভাবে যথেষ্ট বলিষ্ঠ ছিলেন লেখক। সেই বলিষ্ঠতা, রক্তের উষ্ণস্রোত উত্তাপ টের পাওয়া যায় তার গল্প-উপন্যাসের চরিত্রের বর্ণনায়, পেশায়, কাজে-কর্মে। জননী (১৯৩৫), দিবারাত্রির কাব্য (১৯৩৫), পদ্মানদীর মাঝি (১৯৩৬), পুতুলনাচের ইতিকথা (১৯৩৬), অহিংসা (১৯৪৮), চতুষ্কোণ (১৯৪৩) প্রভৃতি উপন্যাসগুলাে পাঠক সাদরে গ্রহণ করেছেন। পাঠকের চেতনাকে নাড়া দিতে পেরেছেন বলেই এগুলাে পাঠকের কাছে আদরণীয়। | মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষারীতির পর্যালােচনা করলে দেখা যায় প্রচলিত সাধু-চলিত রীতির ধার তিনি ধারেননি। চরিত্রের মুখের আঞ্চলিক ভাষার রীতি সাধু না চলিত তা বােঝা কখনাে-কখনাে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। লেখকের নিজস্ব বর্ণনাও গুরুচণ্ডালী দোষে দুষ্ট। তথাপি যুগ, শ্রেণী পরিবেশ ও পরিস্থিতি অনুযায়ী উপযুক্ত ভাষার প্রয়ােগ মানিকের লেখনীতে মােক্ষম অস্ত্রের মতাে কাজ করেছে। মানিক বন্দোপাধ্যায় তাঁর গল্প-উপন্যাসে মানুষকে অতিমানব কিংবা মহামানব করেননি, সাধারণ রক্তমাংসের মানুষ হিসেবে তুলে ধরেছেন, যার জৈব চাহিদা আছে, কামনা-বাসনা আছে। একই চরিত্রের ভিতরে ভালাে ও মন্দ এ-দুটোর সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন। এটাই বাস্তবতা, মানিক তা অস্বীকার করেননি। সংসার ও সমাজজীবনে পােড়-খাওয়া মানুষের জীবনের চিত্রণে তিনি শব্দ ও বাক্যের পরতে পরতে তাই কোনাে দর্শনতত্ত্বের জাল বােনেননি। আদর্শ নিয়ে মাতামাতি করে সূক্ষ্ম ভাবরসে নিমজ্জিত হতে চাননি। ফলে কোনো কোনাে উপন্যাসের চরিত্রের অন্তর্নিহিত মনস্তাত্ত্বিক রূপটি হয়তাে বা বিশৃঙ্খল, এলােমেলাে হয়ে পড়েছে এবং যা কিছুটা হলেও উপন্যাসের শিল্পরসকে ক্ষুন্ন করেছে।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এর পদ্মা নদীর মাঝি এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 100 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Padma Nodir Majhi by Manik Bondhopadhaiis now available in boiferry for only 100 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.