Loading...

নোলক (হার্ডকভার)

স্টক:

২০০.০০ ১৩০.০০

এক.
শেষ শরতের পড়ন্ত বিকেল। সূর্যের তাপ তেমন নেই। তবু ঘামে ভেজা আবুল হাশিমের শরীর। সকাল থেকেই ঘামছে, আবার শুকোচ্ছে গায়েই। রিক্শাওয়ালার শরীর ঘামবে-শুকোবে এ আর বিচিত্র কি! এ নিয়ে ভাবত না আবুল হাশিম, যদি না ক’দিন আগেই জ্বর থেকে উঠতো।
কদমতলার বাজারে এসে রিকশার ব্রেক কষে আবুল হাশিম। সোনা মিয়ার দোকানের সামনে রিক্শাটা দাঁড় করিয়ে ভেতরে ঢোকে। গামছা দিয়ে ঘামে ভেজা মুখটা মোছে। দোকানদার তার দিকে তাকিয়ে অবজ্ঞার সুরে বলে, কী ব্যাপার হাশিম! কয়দিন ধইরা দেখা নাই; বাকীর খাতায় কিছু জমা পড়বোনি?
- পড়বো চাচা, তয় আইজ না। অনিচ্ছা সত্ত্বেও শুকনো হাসি হাসে হাশিম।
- আইজ না কাইল করতে করতে তো মাস পার হয়া গেল। একটা টাকাও তো জমা দিবার পারলি না?
- অসুখ করেছিল তো! সাতদিন বিছানায় পড়ে ছিলাম জ্বরে। এই সাতদিনে সত্তুর দিনের পিছনে পড়ে গেছি। আইজ পয়লা বার হলাম রিকশা নিয়া। ঊনচল্লিশ ট্যাকা রোজগার। তাও দুুপুর বেলা দুই ট্যাকার পুরি খায়া ফেলাইছি।
- এত ঘ্যানর ঘ্যানর শুরু করলি ক্যান? আইজ কি সদাই লাগবো?
- জ্বে চাচা, দুই সের চাল আর এক সের আলু দেন।
দোকানদার সোনা মিয়া চাল-আলু মেপে দেয়। গামছায় বেঁধে দাম শোধ করে আবুল হাশিম।
দোকানের সামনে বাঁশের ফালা দিয়ে একটি মাচা পাতা। পাশের বাড়ির মতি মোড়ল সেখানে বসে পান চিবোচ্ছে। সাথে আরও ক’জন হাটুরে বসা। হাশিমকে দেখে মতি মিয়া পানের পিক ফেলে বলে, কিরে হাশিম না? বাড়ির খবর জানস কিছু?
- না, কি হয়েছে চাচা?
- বাড়ি যায়াই জানতে পারবি। বিদ্রƒপের সুর ঝরে পড়ে মতি মোড়লের মুখে।
- সকাল বেলা বার হইছি। এর মধ্যেই কি হইছে চাচা!
মতি মোড়ল অনর্থক হাসে পান খাওয়া ময়লাযুক্ত দাঁতগুলো বের করে। কত করে কইলাম বউ-ঝিদের সমিতি টমিতির দরকার নাই। শুনলি না তো তহন। এহন বোঝ মজাটা।
- চাচা, কি হইছে খুইল্যা কইবেন তো!
- আইজ কিস্তির টাকা দেওনের কথা আছিলোনি? যায়া দেখ, আদায় কইরা নিছে!
হাশিমের মনটা ছ্যাঁত করে ওঠে অজানা আশংকায়। মতি মোড়লের কাছে সরাসরি জবাব পাওয়া যাবে না। অনেক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে রসিয়ে রসিয়ে বলবে। হাটুরে মানুষরা শুনবে আর টিটকিরি দিবে। তার চেয়ে বরং বাড়িই চলে যাই। হাশিম আর কিছু শোনার অপেক্ষা না করে রিক্শার প্যাডেলে পা রাখে। গায়ে আর মোটেই জোর পাচ্ছে না। সকালে বাসি ভাত খেয়ে বেরিয়েছে। সারাদিন রিক্শা চালিয়ে এমনিতেই শরীর ক্লান্ত। জ্বর সেরেছে মাত্র কালকে। তার শরীরে কম্পন দেখা দেয় অজানা আশংকায়। না জানি কী হয়েছে বাড়িতে!
হাশিম রিক্শার গতি বাড়াতে আপ্রাণ চেষ্টা করে। কিন্তু রিক্শা যেন এগুতে চাইছে না। কদমতলা বাজার থেকে বাড়ি প্রায় আড়াই মাইল দূরে। অর্ধেক রাস্তায় ইট বিছানো। বাকীটা কাঁচা। হাশিম হাটুরেদের কারো দিকে দৃষ্টি না দিয়ে অবিরাম বেল বাজিয়ে দ্রুত টানছে রিক্শা। তার মনে হচ্ছে বাড়ি যেন আড়াই মাইল দূরে নয়, দূরত্ব যেন দ্বিগুণ বেড়েছে। রাস্তা যেন আর শেষ হতে চায় না।
বাড়ির উঠানে রিক্শা থামিয়ে চারদিকে চোখ বুলিয়ে নেয় হাশিম। তখন ভর সন্ধ্যা। অথচ ঘরে বাতি নেই। কেরোসিনের অভাবে অবশ্য এমনিতেই বাতি কম জ্বলে। তাই বলে এই ভর-সন্ধ্যায় ঘরে বাতি থাকবে না তা কি করে হয়! বিউটি বেগম লক্ষ্মী মেয়ে। সন্ধ্যায় ঘরে বাতি না জ্বালানো অলুক্ষণে। তাই এ সময় শত অভাব থাকলেও সে ঘরে বাতি জ্বালাবেই। কিন্তু আজ কি এমন ঘটেছে যে ঘরে বাতি জ্বলবে না?
অন্যদিন রিক্শা আসার শব্দ শুনেই বিউটি বেগম স্বামীর পাশে এসে দাঁড়ায়। স্মিত হেসে বাজারের ব্যাগটা হাতে করে নিয়ে যায়। কখনো বা নিজের পরনের শাড়ীর আঁচলে স্বামীর মুখ মুছে দেয়। কিন্তু আজ এখনো সে ঘর থেকেই বেরুচ্ছে না। বাড়িতে কোন সাড়া শব্দই নেই। এতক্ষণ বাচ্চারা দৌড়ে আসতো কাছে। বাজান, বাজান বলে কোলে চড়তে চাইতো। হাশিম ঘরের সামনে এসে ডাক দেয়, কইরে হাসি মা? তোরা সব গেলি কই?
কোন সাড়া মেলে না।
দরজা খোলাই ছিল। হাশিম ধাক্কা দিয়ে পাল্লা দু’টি সরিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। বিউটি চৌকিতে শুয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
হাশিম দরাজ গলায় জানতে চায়- কি হয়েছে! কথা কও না ক্যান? ওই হাসির মা! কি হয়েছে!?
বিউটির ফুঁপানো কান্না এবার রোদনে রূপ নেয়। হাউমাউ করে উঠে হাশিমকে জড়িয়ে ধরে। আমার সর্বনাশ হয়া গেছে।
হাশিম দু’হাতে চোয়াল ধরে অন্ধকারেই স্ত্রীর চোখের দিকে চায়। কি হইছে, খুইল্যা কও না!
- কিস্তির ট্যাকার লাগি গোল চেহারা বেগম আমার নাক থাইকা নোলক খুইল্যা নিছে। কত কইরা কইলাম কয়ডা দিন সময় দেন। আমরাতো একবারও কিস্তির ট্যাকা খেলাপ করিনি। কোন কথাই ওরা শুনলো না। জোর কইরা নোলক খুইল্যা নিছে।
- নোলক খুইল্যা নিছে! হারামজাদী মাগী গোলেরে আমি দেইখ্যা ছাড়ুম না! কেউ আছিল না বাড়িতে? গর্জে উঠে হাশিম।
- জলিল স্যারে আছিল সাথে। কত কইরা কইলাম, কেউ আমার কথা শুনলো না।
হাশিম আর শুনতে পারে না। রক্তে আগুন ধরে গেছে তার। বউকে ছেড়ে দিয়ে ঘরের ভিতরে আসে। চিৎকার করে শ্লীল-অশ্লীল বাক্য ছোঁড়ে। আমি তো এহনো মইরা যাই নাই! পঞ্চাশ টাকার লাগি নাক থাইকা নোলক খুইল্যা নিবো! এটা কি মগের মুল্লুক পাইছে? হারামজাদী গোলেরে আমি দেইখ্যা ছাড়–ম। গেরামে মানুষ নাই, বিচার নাই বুঝি!
Nolok,Nolok in boiferry,Nolok buy online,Nolok by Samor Islam,নোলক,নোলক বইফেরীতে,নোলক অনলাইনে কিনুন,সমর ইসলাম এর নোলক,9847016800016,Nolok Ebook,Nolok Ebook in BD,Nolok Ebook in Dhaka,Nolok Ebook in Bangladesh,Nolok Ebook in boiferry,নোলক ইবুক,নোলক ইবুক বিডি,নোলক ইবুক ঢাকায়,নোলক ইবুক বাংলাদেশে
সমর ইসলাম এর নোলক এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 130.00 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Nolok by Samor Islamis now available in boiferry for only 130.00 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.
ধরন হার্ডকভার | ৮০ পাতা
প্রথম প্রকাশ 2017-02-01
প্রকাশনী বইঘর
ISBN: 9847016800016
ভাষা বাংলা

ক্রেতার পর্যালোচনা

সমর ইসলাম
লেখকের জীবনী
সমর ইসলাম (Samor Islam)

Samor Islam

সংশ্লিষ্ট বই