ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা
মুহূর্তের ভেতর ব্যস্ত হয়ে পড়ে দুজন। নিঃশব্দে একের পর এক লাশগুলো টেনে এন তারা জড়ো করতে থাকে। সময় অতিক্রান্ত হতে থাকে। চাঁদ আরো সরে আসে। আকাশে আজ মেঘ নেই। চত্বরের ওপর বীভৎস শ্বেতীর মতো ছেঁড়া আলো পড়ে থাকে।
Nishiddho Loban,Nishiddho Loban in boiferry,Nishiddho Loban buy online,Nishiddho Loban by Syed Shamsul Haque,নিষিদ্ধ লোবান,নিষিদ্ধ লোবান বইফেরীতে,নিষিদ্ধ লোবান অনলাইনে কিনুন,সৈয়দ শামসুল হক এর নিষিদ্ধ লোবান,9847010504811,Nishiddho Loban Ebook,Nishiddho Loban Ebook in BD,Nishiddho Loban Ebook in Dhaka,Nishiddho Loban Ebook in Bangladesh,Nishiddho Loban Ebook in boiferry,নিষিদ্ধ লোবান ইবুক,নিষিদ্ধ লোবান ইবুক বিডি,নিষিদ্ধ লোবান ইবুক ঢাকায়,নিষিদ্ধ লোবান ইবুক বাংলাদেশে
সৈয়দ শামসুল হক এর নিষিদ্ধ লোবান এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 150.00 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Nishiddho Loban by Syed Shamsul Haqueis now available in boiferry for only 150.00 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.
ধরন |
হার্ডকভার | ৭১ পাতা |
প্রথম প্রকাশ |
2016-02-02 |
প্রকাশনী |
অনন্যা |
ISBN: |
9847010504811 |
ভাষা |
বাংলা |
ক্রেতার পর্যালোচনা
1-1 থেকে 1 পর্যালোচনা
-
পর্যালোচনা লিখেছেন 'আবু তালহা'
শুরুর কথাঃ
বাঙ্গালী জীবনের মহা গৌরবের নাম মুক্তিযুদ্ধ। নানা ত্যাগ, তিতিক্ষা, প্রাণ আর সম্ভ্রমের বিনিময়ে লেখা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। যেখানে প্রস্ফুটিত হয়েছে বাঙ্গালির সাহস, বীরত্ব আর যুদ্ধজয়ের আলেখ্য। তেমনি এক প্রেক্ষাপটেই রচিত হয়েছে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের 'নিষিদ্ধ লোবান' বইটি। যেখানে মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি নারী ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অবস্থান ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংসতার বাস্তব চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে।
কাহিনী পর্যালোচনাঃ
শান্ত, নিশ্চল আর ছবির মতো সুন্দর গ্রাম জলেশ্বরী। সেই গ্রামেই গন্তব্য উপন্যাসের কেন্দ্রিয় চরিত্র বিলকিসের। সদ্য নিখোঁজ হওয়া স্বামী হারানো শহুরে রমণী সে। মা, ভাই আর বোনকে দেখার ব্যাকুলতায় ঢাকা থেকে রওনা দেয় বিলকিস। নবগ্রামে আসতেই ট্রেন থামে। যাত্রীরা নেমে পড়ে একে একে। নবগ্রাম থেকে জলেশ্বরীর দুরত্ব পাঁচ মাইল। হাতে গোনা কিছু মানুষ দেখা গেলেও জলেশ্বরী তে যাওয়ার মনোভাব কারো মাঝেই নেই। পায়ে হেঁটে হলেও বিলকিসকে জলেশ্বরী যেতেই হবে।
স্টেশনে নামার পর থেকেই সে লক্ষ্য করে, ১৭-১৮ বছরের একটা ছেলে তাকে অনুসরন করছে। সময়ের পরিক্রমায় কিছু কিছু সম্পর্ক রক্তের সম্পর্ক কেও হার মানায়। বিলকিসের সাথে এই ছেলেটার পরিচয় এমনই একটা সম্পর্কের সূচনা করে। পথ চলার শেষ সময়টুকু অবধি বিলকিসের সহযোগী হয় এই ছেলেটাই, প্রদীপ ওরফে সিরাজ।
তাকে নিয়ে শুরু হয় বিলকিসের যাত্রা। কণ্টকাকীর্ণ অনিশ্চিত যাত্রা। তারা সন্ধ্যের দিকে পদার্পন করে জলেশ্বরীতে। কিন্তু বাড়িতে মা, বোন, ভাই কাউকে না দেখে বিলকিস চিন্তিত হয়ে পড়ে। সিরাজ গ্রামে খোঁঁজ নিয়ে জানতে পারে বিলকিসের মা, বোন নদীর ওপারে চলে গেছে। কিন্তু তার ভাইকে হত্যা করেছে পাকিস্তানি সৈন্যরা। আরো জানতে পারে তার ভাই সহ আরো অনেক কে হত্যা করে বাজারে ফেলে রেখেছে পাকিস্তানিরা। নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে, লাশগুলো ওভাবেই পড়ে থাকবে, শেয়াল-শকুনের খাদ্য হবে। এমন অমানবিক একটা পরিস্থিতির মুখে বিলকিস সিদ্ধান্ত নেয় সে তার ভাইয়ের লাশকে কবর দেবে। কথায় আছে, অধিক শোকে মানুষ পাথর হয়ে যায়, এই সময়টাতে ভোঁতা হয়ে যায় মানুষের ইন্দ্রীয়ের কার্য ক্ষমতা। বিলকিস কি আদৌ তার ভাইয়ের লাশ দাফন করতে পারে? কিংবা কে এই সিরাজ? তার নাম কেন প্রদীপ থেকে সিরাজ হলো? আত্মীয় না হয়েও সে কি শুধুই দায়িত্ব পালন করেছে? সব প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে অবশ্যই পড়তে হবে সৈয়দ শামসুল হকের এই বইটি।
উল্লেখযোগ্য উক্তিঃ
১. কখনো কখনো সমস্ত মানুষের মুখ এক হয়ে যায়।
২. পালাবার সবচেয়ে ভালো জায়গা শত্রুর ঘাটির ভেতরে।
৩. কেউ ভেঙে পড়ে না, শোক কখনো এত বড় নয় যে মানুষ মাথা তুলে দাড়াতে পারে না।
৪.সোনা পুড়লে কিন্তু আরো খাঁটি হয়। মানুষ কে বিপদ দিয়ে বিচার করলে অনেকটা এমরকমই হবে।
৫. চাঁদ কখনো আলো দেয়,কখনো মেঘের আড়ালে কৃপণ হয়ে যায়।
বইটি যে কারনে পড়া উচিতঃ
'নিষিদ্ধ লোবান' উপন্যাসে জলেশ্বরী জনপদটি যুদ্ধে আক্রান্ত রণক্ষেত্র, আর বিলকিস জননী-জন্মভূমির প্রতিচ্ছবি। যে তার মৃত সন্তানকে বুকে টেনে নেবার আয়োজন করে। বইটিতে লেখক তুলে ধরেছেন পাক-বাহিনী আর দেশীর রাজাকারদের তান্ডবের কিছু নমুনা। বিলকিস আর সিরাজ চরিত্র সহ মাত্র গুটি কয়েক চরিত্র দিয়েই লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন লাখো মানুষের আর্তনাদ। তুলে ধরেছেন পাকিস্তানিদের নির্মমতা, নিষ্ঠুরতা আর পশুত্বের নিদর্শন। লিপিবদ্ধ হয়েছে মনুষ্যত্বের জয়গান, অসাম্প্রদায়িকতা আর বাঙ্গালীর বীরত্বের উপাখ্যান। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে লেখা মাস্টারপিস এই বইটি সবার জন্য অবশ্যপাঠ্য।
নামকরন ও প্রচ্ছদঃ
লোবান শব্দের অর্থ হলো একধরনের সুগন্ধি। নিষিদ্ধ লোবান বলতে লেখক বুঝিয়েছেন, দেশের মাটি আচ্ছাদিত মৃতদেহের ঘ্রাণ মাদকের চেয়ে ধ্রুপদী এবং নৈসর্গিক। কাহিনীর দিকে দৃষ্টিপাত করলে নামকরণের সার্থকতা খুঁজে পাওয়া যায়।আর বইটির প্রচ্ছদ ছিলো অসম্ভব সুন্দর আর নজরকাড়া।
বিশেষ দিকঃ
সাহিত্যের বিশাল একটা জায়গা দখল করে আছে আমাদের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ। যেখানে মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্ন, হানাদার বাহিনীর বর্বরতা থেকে শুরু করে বিজয়ের জয়গান সবই প্রকাশ পায়। 'নিষিদ্ধ লোবান' এখানে কিছুটা ব্যতিক্রম। লেখক চূড়ান্ত বিজয়ের রচনা করেননি। শুধু তুলে ধরেছেন মুক্তিযুদ্ধ কালীন চলমান ভয়াবহতা।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
উপন্যাসের পরিধি খুব বেশি বিস্তৃত না হলেও দ্রোহ কিংবা গভীরবোধের যে বিষয়টি লেখক তাঁর নিপুণ লেখনীতে ফুটিয়ে তুলেছেন তা সত্যি প্রশংসার দাবিদার। চরিত্র বিশ্লেষণেও দেখিয়েছেন মুন্সিয়ানা। উপন্যাসে জীবিত চরিত্রের চেয়ে লাশ সংখ্যায় বেশি। যে লাশগুলো পড়ে আছে পাকিস্তানীদের বর্বরতার সাক্ষী হয়ে খোলা আকাশের নীচে।
সাহসী নারীর ভূমিকায় মুক্তিযুদ্ধে এমন হাজারো বিলকিস লড়াই করেছে। লড়াই মানে কেবল অস্ত্র হাতে সশস্ত্র যুদ্ধে যাওয়া নয়। শেষ দেখার আগে হাল না ছাড়ার যে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ বিলকিস চালিয়ে গেছে পুরো সময়, স্বাধীনতা অর্জনে কম ভূমিকা রাখেনি সেসব। সিরাজ প্রতিনিধিত্ব করেছে সেসব মানুষের, যারা ধর্ম-বর্ণ-জাতের ঊর্ধ্বে গিয়ে মুক্তিকামী মানুষের পাশে ছায়া হয়ে অবিচল থেকেছে শেষ নিঃশ্বাস ফেলার মূহুর্তেও। সবমিলিয়ে লেখক সম্মোহনী গদ্যে ফুটিয়ে তুলেছে অসাধারণ একটি উপাখ্যান। যা আমার কাছে অসম্ভব ভালো লেগেছে।
পারসোনাল রেটিংঃ ৪.৫/৫
July 08, 2022
লেখকের জীবনী
সৈয়দ শামসুল হক (Syed Shamsul Haque)
সব্যসাচী লেখক' হিসেবে খ্যাত সৈয়দ শামসুল হক বাংলাদেশের প্রখ্যাত একজন সাহিত্যিক, যিনি একাধারে কবিতা, ছোটগল্প, নাটক, উপন্যাস, কাব্যনাট্য, প্রবন্ধসহ সাহিত্যের বিভিন্ন শাখাতেই স্বচ্ছন্দে বিচরণ করেছেন। ৬২ বছরের দীর্ঘ লেখক-জীবনে তিনি সাহিত্যকর্ম ছাড়াও চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লেখার কাজও করেছেন। খ্যাতিমান এই লেখক ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। আট ভাই-বোনের মাঝে তিনি ছিলেন সবচেয়ে বড়। কৃতিত্বের সাথে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করলেও পরের বছরই বম্বে পালিয়ে গিয়ে সেখানে একটি সিনেমা প্রোডাকশন হাউজে কাজে যোগদান করেন। এরপর ফিরে এসে কলেজের পাট চুকিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হলেও স্নাতক শেষ করেননি। সৈয়দ শামসুল হক এর বই দর্শক ও সমালোচক উভয় সমাজেই ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। সৈয়দ শামসুল হক এর বই সমূহ এর মধ্যে 'অনুপম দিন', 'সীমানা ছাড়িয়ে', 'খেলারাম খেলে যা', 'এক মহিলার ছবি' ইত্যাদি উপন্যাস; 'নারীগণ', 'ঈর্ষা', 'পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়' ইত্যাদি কাব্যনাট্য, এবং 'পরাণের গহীন ভিতর', 'প্রতিধ্বনিগণ' ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থ রয়েছে। এছাড়াও সৈয়দ শামসুল হক এর বই সমগ্র এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন অনুবাদগ্রন্থ, ছোটগল্প, শিশুতোষগ্রন্থ ইত্যাদি। সাহিত্যে অসাধারণ অবদানের জন্য তিনি দীর্ঘ সাহিত্যজীবনে ভূষিত হয়েছেন বিভিন্ন পুরস্কারে, যেগুলোর মধ্যে 'বাংলা একাডেমি পুরস্কার', 'আদমজী সাহিত্য পুরস্কার' এবং বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত 'একুশে পদক' উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও তিনি শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার হিসেবে দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও লাভ করেন। কীর্তিমান এই সাহিত্যিক ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।