আপামর বাঙালিদের নিকট ‘মুর্শিদাবাদ' নামটি যে তাৎক্ষণিক অনুসঙ্গ বয়ে আনে তা হল সিরাজদ্দৌলা, মীরজাফর, পলাশীর যুদ্ধের অথবা বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন রাজধানীর। আর যদি অনুষঙ্গটিকে কিছুটা দীর্ঘায়িত করা যায়, তাহলে মুর্শিদকুলী, আলিবর্দী, বর্গীদের হাঙ্গামা থেকে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব মীর কাশিম পর্যন্ত নবাবী আমলের চিত্র মনের আয়নায় প্রতিভাত হয়। বাংলা-বিহারউড়িষ্যার রাজধানী ছিল মুর্শিদাবাদ, গড়ে ওঠে একান্তই নবাবদের বদান্যতায় । নবাবী আমলের মুর্শিদাবাদের ইতিহাস তাই স্বভাবতঃই প্রাসঙ্গিক। মুর্শিদাবাদ নিয়ে যতগুলি ইতিহাস-বিষয়ক গ্রন্থ রচিত হয়েছে তার সিংহভাগই নবাবী আমলের মুর্শিদাবাদকে নিয়ে। মুর্শিদাবাদ’ এক ইতিহাসের নাম। নবাব মুর্শিদকুলী খাঁর হাতেই তৈরি এই মুর্শিদাবাদ’ রাজধানীর । যার আমলের বাংলার তেরােটি চাকলার মধ্যে অন্যতম ছিল মুর্শিদাবাদ। তখন মুর্শিদাবাদ চাকলার অন্তর্গত ছিল সম্পূর্ণ রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা ও মুর্শিদাবাদ জেলা এছাড়াও নদীয়া, বীরভূম ও মালদহ জেলার অংশ বিশেষ। ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে মুর্শিদাবাদ জেলা থেকেই প্রকাশিত হয় শ্যামধন মুখােপাধ্যায় রচিত মুরশিছাবাদের ইতিহাস' যা ছিল মুর্শিদাবাদের প্রথম ইতিহাস গ্রন্থ তথা সারা বাংলার প্রথম আঞ্চলিক ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ। এ গ্রন্থে নবাবী আমলের পাশাপাশি মুর্শিদাবাদ নগরের ও জেলার স্থান-সন্নিবেশ ও উৎপন্ন দ্রব্যাদিরও পরিচয় দেওয়া হয়। তারপর প্রায় অর্ধ-শতাব্দী ধরে মুর্শিদাবাদের ইতিহাস-চর্চা মূলতঃ নবাবী আমলকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। এ সময়কালের মধ্যে একে একে প্রকাশিত হয় মুর্শিদাবাদ বিষয়ক অনেক গ্রন্থ, যেমন—কালীপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'বাংলার ইতিহাস (নবাবী আমল), নিখিলনাথ রায়ের ‘মুর্শিদাবাদ কাহিনী' এবং 'মুর্শিদাবাদের ইতিহাস (প্রথম খণ্ড), পূর্ণচন্দ্র মজুমদারের 'Masud of Murshidabad’ মেজর জে.এইচ. টুল ওয়াশের ‘A History of Murshidabad | District (Bengal) ইত্যাদি।