ভারত জয়ের পর ইংরাজগণ তাদের প্রাচ্য সাম্রাজ্যের রাজধানী কলকাতায় স্থাপন করায় বাঙালী হিন্দুরা বহু দিক দিয়ে লাভবান হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের চাকুরী গ্রহণ করে তাদের অনেকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে— দেশবিদেশে বহু বাঙালী উপনিবেশ গড়ে ওঠে। আবার প্রদেশ পুনর্বিন্যাসের ফলে বাংলার সীমান্ত বহু দূর পর্যন্ত প্রসারিত হওয়ায় প্রতিবেশী অঞ্চলগুলির উপর প্রভাব বিস্তারের সুযােগ ঘটে। মুষ্টিমেয় ইংরাজ সিভিলিয়ান এসে সরকার পরিচালনা করতেন, কিন্তু সমগ্র শাসনযন্ত্র ছিল বাঙালী কর্মচারীদের করতলগত । এই অভূতপূর্ব প্রভাবের ফলে বিদেশী শাসনের বিরুদ্ধে পরাধীন জাতির স্বাভাবিক বিদ্রোহ প্রবণতা বহুকাল স্তিমিত থাকলেও বর্তমান শতাব্দীর প্রথম ভাগে সশস্ত্র বিপ্লবের আকারে আত্মপ্রকাশ করে। ঠিক সেই সময়ে প্রশাসনিক প্রয়ােজনে পূর্ববঙ্গ ও আসাম নিয়ে বাংলাবিচ্ছিন্ন এক স্বতন্ত্র প্রদেশ গঠন করায় বিদ্রোহ গণ-আন্দোলনে পরিণত হয়। তার ফলে ইংরাজ শাসকগণ পূর্ব বিভাগ রদ করে, কিন্তু দ্বিখণ্ডিত বাংলা ত্রিখণ্ডিত হয়ে বাঙালী হিন্দুর সম্মুখে এক অভিশাপ হয়ে দেখা দেয়! সদ্যসৃষ্ট আসাম এবং বিহার-উড়িষ্যা প্রদেশ দুটিতে তাদের পূর্ব প্রভাব জলবুদ্বুদের মত শূন্যে মিলিয়ে যায় এবং নিজ গৃহে তারা হয়ে পড়ে পরবাসী। সমুদ্র মন্থনের ফলে হলাহল উঠল যথেষ্ট, অমৃত বিন্দুমাত্রও নয়! কিন্তু এমন কোন মহেশ্বর ছিলেন না যিনি সেই বিষ কণ্ঠে ধারণ করে বাঙালীর প্রাণ বাঁচান। পূর্ববঙ্গের সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের চাপে তাদের জীবন যখন দুর্বিসহ হয়ে উঠছিল নেতারা তখন অন্ধকারের মধ্যে হাতড়ে বেড়াচ্ছিলেন। সেই গুরুভারের তলায় তাদের ঐতিহ্য, কৃষ্টি, ঐশ্বৰ্য সবই নির্মমভাবে নিষ্পেষিত হচ্ছিল, কিন্তু তারা প্রতিকারের কোন পথ খুঁজে পাচ্ছিল না। তৃতীয় এখানকার এক যুবরাজ লঙ্কাদ্বীপে গিয়ে সেখানে ভারতীয় উপনিবেশের সূত্রপাত করেন। আবার ষষ্ঠ শতাব্দীতে গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর গৌড় এক স্বতন্ত্র রাজ্যে পরিণত হােলে কনৌজের সঙ্গে যে নিরবিচ্ছিন্ন সংগ্রামের সূত্রপাত হয় সেই সময়ে কিছু সংখ্যক গৌড় যােদ্ধা আশ্রয়ের জন্য চীন সমুদ্রের উপকূলে গিয়ে দ্বিতীয় এক উপনিবেশ স্থাপন করে।