সুরমার টালমাটাল ঢেউ আর নেই। সুরমা এ অঞ্চলের কৃষকের মুখে হাসি ফোটায় আবার দুঃখও নিয়ে আসে। পানি শুকিয়ে গেলে কৃষকের দুঃখের সীমা থাকে না। তখন ফলন ভালাে হয় না। কৃষকরা টাকার অভাবে জমিতে সেচ দিতে পারে না। ফলে, সময়মত কৃষিঋণও পরিশোধ হয় না তাদের। আবার বর্ষার মওসুমে বন্যায় নষ্ট হয় ফসল। এভাবে কোনাে রকমে টিকে আছে সুরমা পাড়ে অসংখ্য মানুষ। সিলেট সদর থানার পশ্চিম সীমান্তের একটি গ্রাম ধনপুর। ধনপুর গ্রাম থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমমুখী বাঁকা নদী ছিল আদি সুরমা। এর পাড়েই রয়েছে প্রায় একশ' বাড়ি। একটি বাড়ির মালিক আবুল হােসেন। কথা হলাে তার সঙ্গে। তিনি বলেন, “বারিষা মাসে আমরার বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে। নৌকা ছাড়া বার (বাহির) হওয়ার উপায় থাকে না। বন্যা অইলে নিজেরার লগে (সঙ্গে) বাইচ্চা কাইচ্চারাও (ছেলেমেয়েরা) উপাস থাকে। তার সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বর্ষাকালে নদীর পানিতে চারদিকে তলিয়ে যায়। দেখা দেয় মারাত্মক বন্যা। বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে। তখন খাবার যােগাড় করা তাদের পক্ষে কঠিন। রান্না করতে হয় উপুড় চুলাতে। নৌকায় বসেই প্রাকৃতিক কাজ সারতে হয়। ঘরের মধ্যে ঢুকে সাপ, কেঁচো, ব্যাঙ। ১৯৯৩ সালের বন্যায় তাদের বাড়ি-ঘর ছাড়তে হয়েছে। তারা আশ্রয় নিয়েছে ত্রাণ | শিবিরে। বন্যার পানিতে টিউবওয়েল ডুবে যায়। তখন পুকুর, খাল, নালা কোনাে | কিছুই আন্দাজ করা যায় না। তারা এই নােংরা পানি পান করে। ডায়রিয়া কিংবা পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয় অধিকাংশ মানুষ। পানিবাহিত বিভিন্ন জীবাণুতে নষ্ট হয় এ অঞ্চলের পরিবেশ। বাঁচার তাগিদে বহু লােক ভিটেমাটি বিক্রি করে গ্রাম ছাড়ছে।