ইসলামের ইতিহাসে ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। হারিয়ে যাওয়া ইসলামী খেলাফতের সোনালি যুগ ফিরিয়ে আনেন তিনি। তাই তাঁকে বলা হয় ইসলামের পঞ্চম খলিফা ও দ্বিতীয় ওমর। তিনি ছিলেন ওমর ফারুক (রা.)-এর নাতি। তাঁর পিতার নাম আবদুল আজিজ। দাদার নাম মারওয়ান। মাতার নাম লায়লা বিনতে আসেম। তিনি হিজরি ৬১ সনে মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন। চাচা আবদুল মালেক ইবনে মারওয়ান তাঁকে দামেস্কের শাসক নিযুক্ত করেন এবং স্বীয় কন্যা ফাতেমাকে তাঁর কাছে বিয়ে দেন। অতঃপর হিজরি ৯৯ সনে সুলায়মান ইবনে আবদুল মালেকের পর উমাইয়া খিলাফতের খলিফা নিযুক্ত হন। তিনি দুই বছর পাঁচ মাস কয়েক দিন খিলাফতের আসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। হিজরি ১০১ সনে ২৫ রজব খাদ্যে মিশ্রিত বিষক্রিয়ায় ৪০ বছর বয়সে হিমসের ‘দীরে সায়মান’ নামক স্থানে ইন্তেকাল করেন। তাঁর শাসনামলে জাকাত, ফিতরা গ্রহণ করার মতো অভাবী লোক ছিল না। তিনি ছিলেন একজন আবেদ পরহেজগার, সত্যবাদী ও সচ্চরিত্রবান। তিনি তাঁর শাসনামলের সর্বশেষ সময়ে যে ভাষণ দেন তা হলো—
হে মানবমণ্ডলী! তোমাদের উদ্দেশ্যহীন সৃষ্টি করা হয়নি। আর এমনিতেই তোমাদের ছেড়ে দেওয়া হবে না। অবশ্যই তোমাদের পুনরুত্থিত হতে হবে। তখন আল্লাহ তোমাদের কৃতকার্যের ফায়সালা করবেন। সেদিন ওই ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যে ব্যক্তি পার্থিব জীবনে আল্লাহর রহমত থেকে দূরে রয়েছে—যে রহমত সব কিছু বেষ্টন করে আছে। ওই ব্যক্তি জান্নাত থেকেও বঞ্চিত থাকবে—যে জান্নাত আসমান ও জমিনসমান বিস্তৃত।
হে মানবমণ্ডলী! জেনে রেখো, পরকালের নিরাপত্তা ওই ব্যক্তির জন্য যে আজ তথা দুনিয়ায় আল্লাহকে ভয় করে এবং পরকালের অজস্রের বিনিময়ে স্বল্প, স্থায়ীর বিনিময়ে অস্থায়ী বস্তু বিক্রি করে দেয়। তোমরা কি দেখছ না যে অবশ্যই তোমরা জন্মেছ ধ্বংসশীলদের ঔরসে। আর তোমাদের পরে অনাগতরা তোমাদের প্রতিনিধিত্ব করবে, এমনকি তাদেরও সর্বোত্তম উত্তরাধিকারীদের দিকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। অতঃপর তোমরা প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর কাছে তাকে বিদায় দিচ্ছ, যে তার হায়াত শেষ করেছে এবং মৃত্যু এসে গেছে। অতঃপর তোমরা তাকে বালিশ ও বিছানাপত্র ছাড়াই মাটির গর্তে লুকিয়ে রাখো। সেখানে থাকে না তার কোনো উপায়-উপকরণ ও বন্ধু-বান্ধব। সব কিছু থেকে সে থাকে বিচ্ছিন্ন। সে হবে হিসাবের ও বিচারের মুখোমুখি। পার্থিব জীবনে রেখে যাওয়া সম্পদের প্রতি সে হবে অমুখাপেক্ষী। মুখাপেক্ষী হবে কেবল পার্থিব জীবনে প্রেরিত নেক আমলের প্রতি। আল্লাহর শপথ! আমি এ উপদেশ শুধু তোমাদের দিচ্ছি না। বরং আমার নিজের জন্য দিচ্ছি। আমি জানি না যে আমার মধ্যে যে পরিমাণ গুনাহ রয়েছে তার চেয়ে বেশি তোমাদের কারো মধ্যে রয়েছে। অর্থাৎ তোমাদের চেয়ে আমার গুনাহই বেশি। অতএব, আমি আমার ও তোমাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। আর এখনই তোমাদের কোনো প্রয়োজন আমার কাছে পৌঁছলে যা সমাধা করার সামর্থ্য আমার আছে, আমি অবশ্যই তা সমাধা করব। আর তোমাদের যে কারো হাত আমার ও আমার আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে থাকবে, যাতে আমাদের ও তোমাদের জীবনযাপন সমমানের হয়ে যায় এবং ছোট-বড়, উঁচু-নিচুর কোনো পার্থক্য না থাকে।
আল্লাহর শপথ! আমি যদি এর চেয়ে ব্যতিক্রম সুখ-শান্তি ও স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করতাম, তা হলে আমার জিহ্বা তা সহজভাবে ব্যক্ত করতে সক্ষম হতো। আর তা অর্জন করার উপায়-উপকরণও জানা ছিল। কিন্তু আমি তা করিনি। কারণ, আল্লাহর পক্ষ থেকে কথা বলে—এমন কিতাব (কোরআন) ও ইনসাফপূর্ণ আদর্শ (হাদিস) আমার সামনে উপস্থিত। এগুলোর মধ্যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্যের আদেশ ও পাপাচার থেকে দূরে থাকার কথা বলা হয়েছে।
এই ভাষণ দেওয়ার কিছুদিন পর তিনি ইন্তেকাল করেন। এটি ছিল তাঁর জীবনের শেষ ভাষণ। (ইকদুল ফরিদ, ইবনে আবদে রাব্বিহি)
আল্লাহ তাআলা তাঁকে জান্নাতের উচ্চ মর্যাদা দান করুন।
ড. নূর মোহাম্মদ মল্লিক এর খলিফা ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 75.00 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Khalifa Amor Ibne Abdul Aziz by Dr. Nur Mohammad Mollikis now available in boiferry for only 75.00 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.