লতির নিখোঁজ হওয়ার খবর দেশের প্রধান একটি দৈনিক পত্রিকার প্রথম পাতায় গুরুত্ব সহকারে প্রচারিত হলে নগরবাসীর ভেতরে চিত্তচাঞ্চল্য দেখা দেয়। তাদের নানা ধরনের আলােচনার বিষয়-সূচিতে উঠে আসে মালতির নাম। না, ভুল বলা হলাে, মালতি নয়- সুজাতার নাম। এক নিভৃত মফস্বলের মৃতপ্রায় এক যাত্রাদলের এই শিল্পী- পােশাকী নাম যার সুজাতা, আর আসল নাম মালতি নগরবাসীর মনােযােগ আকর্ষণ করার এই সৌভাগ্য অর্জন করে এক তরুণ। লেখকের কল্যাণে। অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ও হৃদয়গ্রাহী ভাষায় লেখা তার নিবন্ধটি বহুলপ্রচারিত দৈনিকটির প্রথম পাতায় বক্স আইটেমের মর্যাদা পায়, সেই সঙ্গে ছাপা হয় একজন খ্যাতিমান রিপাের্টারের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। নগরবাসীর কেউ-কেউ একে নিতান্তই অপ্রয়ােজনীয় সংবাদ হিসেবে বর্ণনা করে সংশ্লিষ্ট রিপাের্টার, লেখক ও দৈনিকটির উদ্দেশ্য আবিষ্কারে মনােযােগী হন; এবং এই বলে বিজ্ঞজনােচিত মতামত পেশ করেন যে, ঘটনাটির সঙ্গে সরকারদলীয় এমপি-পুত্রের সংশ্লিষ্টতার কারণেই খবরটি এত গুরুত্বসহকারে ছাপা হয়েছে, আর এতে করে পত্রিকাটির অব্যাহত সরকার-বিরােধী প্রচারণায় সুবিধা হয়েছে। কেউ-কেউ এমনও বলেন যে, একটি খবরের যদি বাণিজ্যিক বা রাজনৈতিক মূল্য না থাকে তাহলে সেটি কখনাে প্রথম পাতায় বক্স আইটেমের মর্যাদা পায় না। কিন্তু এইসব ছিদ্রান্বেষী ও জ্ঞানী সমালােচকদের বাইরে লাখ-লাখ পাঠক খবরটি পড়ে বিমূঢ় ও বিষন্ন হন, তাদের আলােচনায় সুজাতার প্রতি মমতা ও সহানুভূতি ঝরে পড়ে, এবং এই সমবেদনাটুকু প্রকাশ করতে পেরে তারা তৃপ্তি লাভ করেন। অতঃপর সারাদিন পর মনে এক আনন্দ-বেদনার মিশ্রণ নিয়ে তারা ঘুমােতে যান এবং নির্বিঘ্নে ঘুমিয়েও পড়েন।