এটা ১৯৫৪ সাল। ইভান তুর্গেনিভের মৃত্যু হয়েছে আজ থেকে একাত্তর বছর পূর্বে। তার একসপ্ততিতম মৃত্যু-তিথি উদযাপিত হয়ে গেছে তাঁর দেশে-সােভিয়েত রাশিয়ায়। রাশিয়া তথা পশ্চিম ইউরােপের ক্রান্তিকালে তার আবির্ভাব। তাঁর সাহিত্য-সাধনার শিক্ষানবিশি শুরু হয় স্বেচ্ছাচারী জার প্রথম নিকোলাসের আমলে-ভূমিদাস প্রথার তামসী যুগে। ফ্রাঙ্কো-প্রুসীয় যুদ্ধ আর সর্বহারার প্রথম সরকার প্যারি কমিউন তারই কালের ঘটনা। উনিশ শতকের শেষভাগে যখন রাশিয়ায় ভূমিদাস প্রথা-উচ্ছেদ আন্দোলনের ঝড়বয়ে যায়, যখন দিকে দিকে বিপ্লবী গণতন্ত্র তার বিজয় ঘােষণা করছিল, তখন তার সৃজনী প্রতিভার মহত্তম বিকাশ ঘটেছিল।শিল্পী তার যুগেরই সন্তান। যুগধর্মই তার ধর্ম, আবার যুগ পার হয়ে যুগাতীতকে বরণ করে আনাও তার কাজ। এখানে তুর্গেনিভ ছিলেন সেই জাতের শিল্পী-জাত-শিল্পী। তিনি নিজের যুগকে মূর্ত করে তুলেছিলেন তার রচনায়-আবার অনাগত যুগের আগমনী গেয়েছিলেন। বাস্তবতা ছিল তার উপজীব্য। কলমের আঁচড়ে তাকে তিনি ফুটিয়ে তুলেছিলেন। পুশকিন, লারমান্তভ আর গােগােল যে জারতন্ত্র-তথা সামন্ত এবং আমলাতন্ত্রের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘােষণা করেছিলেন, তারই হকদার ওয়ারিশ ছিলেন তিনি। জাতীয় সাহিত্য গঠনে তাঁর দান তাে অতুলন। | তিনি সাহিত্যের আসরে এসেছিলেন তাঁর খেলােয়াড়ের রেখাচিত্র' নিয়ে। ভূমিদাসপ্রথার নিগড়ে আবদ্ধ গ্রামেরই সে পাঁচালি। আসামাত্রই কীর্তির ঘােরানাে সিঁড়ির প্রথম ধাপে উঠে এলেন। এবার শনৈ শনৈ চলল আরােহণ। রুদিন আর বনেদিঘর আর একটু এগিয়ে দিলে আরােহণীর ধাপে ধাপে। সে তাে বনেদি ঘরানার ভাঙা বনিয়াদের কাহিনি। উদারচেতা বুদ্ধিজীবীর ফৌত হবার মর্মন্তুদ ইতিহাস। তাদের সব আছে, নেই বাস্তববােধ-নেই কর্মশক্তি। তিনি ঘােষণা করলেন, জাতীয়তাবােধ ছাড়া শিল্প সৃষ্টি হতে পারে না, থাকতে পারে না তাতে সত্য, জীবন-কিছুই থাকতে পারে না।