কবি পরিচয়ের বাইরে জীবনানন্দ দাশের ঔপন্যাসিক অভিধা নতুন কিন্তু অসঙ্গত কী? ঔপন্যাসিক হিসেবে জীবনানন্দকে পাঠ করার প্রয়াস থেকেই এই গ্রন্থ। উপন্যাসে তিনি জীবন সম্পর্কে কিছু অমীমাংসিত প্রশ্ন এবং মৌলিক জিজ্ঞাসার অবতারণা করেছেন, যা সত্যি কৌত‚হল উদ্দীপক এবং দার্শনিকতায় উত্তীর্ণ। তাঁর উপন্যাসে সম্পূর্ণ বিরল, ব্যতিক্রমধর্মী ভাবনার উপস্থিতি দেখে অনুরাগী পাঠক বিস্মিত হবেন। খুঁজে পাবেন নতুন এক জীবনানন্দকে। মনে হবে, তিনি শতাব্দীর বিস্ময়কর ভাবুক এবং অ্যাথনোগ্রাফিক পর্যবেক্ষক। শতাব্দীর মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে অতি দূর ইতিহাস এবং অনাগত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে তিনি ঠিকই টের পেয়েছিলেন আধুনিকতা এবং বিশ্বায়নের করুণ পরিণতির ঘোর ধূসরতা। কথাকে কাব্য, কাব্যকে শিল্প, শিল্পের অধিক বিস্ময়কর ছিল জীবনানন্দের জীবন। উপনিবেশিত কলকাতায়, ইংরেজ আনুকূল্যে যে মধ্যবিত্তশ্রেণির বিকাশ হয়েছে, সেই শ্রেণিতে তিনি প্রবেশ করতে পারেন নি। তাঁর কাছে ‘কলকাতা শহরটা যেন একটা নিরেট কলের রাজ্য। কলকাতা শহরে ‘টাকা খরচ করে যে-আনন্দটুকু পাওয়া যায়, তার ভেতরে টাকার গন্ধ ষোলআনা আছে, প্রাণে ইশারার খন্ডাংশও নেই’ এই নিষ্প্রাণ কলকাতায় নিষ্ঠুর বাস্তবতায় জীবনানন্দের ব্যক্তি-জীবন ছিল পর্যুদস্ত, প্রাণহীন। জীবনানন্দ দাশ তাঁর উপন্যাসে ব্যক্তি-মানুষকে ব্যর্থ, অসফল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন উপনিবেশিক সমাজ বাস্তবতার পটভূমিতে।
জীবন-জীবনের মতোই অগোছালো, এলোমেলো। গুছিয়ে গাছিয়ে, পূর্ব পরিকল্পনা নিয়ে হয়তো অনেক কাজই করা যায়, জীবন যাপন করা হয় না। মানব জীবনের এই নিরীক্ষা-সমীক্ষাই করতে চেয়েছেন জীবনানন্দ দাশ তাঁর উপন্যাসে। জীবনানন্দ যে বস্তবতার মুখোমুখি হয়েছিলেন, কবিতায় তা প্রকাশ করতে পারছিলেন না। তার জন্য দরকার হয়েছিল উপন্যাসের মতো বৃহৎ পরিসর। সময়ের বাস্তবতা এমনভাবে তার জীবনের উপর চেপে বসেছিল, কিছুতেই তিনি সেই রূঢ় বস্তবতাকে এড়াতে পারছিলেন না। তাই আত্মজীবনই হয়ে উঠেছে তাঁর কথকথার অনিবার্য পথ। ব্যক্তি-জীবনের পরিসরকে ব্যবহার করতে গিয়েই স্মৃতি ও চেতনায় তাঁকে ভর করতে হয়েছে। নায়ক-নায়িকার নাম যা-ই হোক না কেন, স্বভাবে ও জীবনভাষ্যে তারা জীবনানন্দেরই আত্মপ্রকৃতি হয়ে দাঁড়ায়। বেকার, বিপর্যস্ত, বিপন্ন, উৎকণ্ঠিত অথচ সৌন্দর্য সৃষ্টিতে ব্যস্ত। কারুবাসনার কারণে সংসার ‘ছাই-কালি মাখা’। তাঁর উপন্যাসের চরিত্ররা চাকরির খোঁজে কলকাতায় যায় কিন্তু চাকরি পায় না। দমবন্ধ মেসে-বোর্ডিংয়ে থাকে, টিঊশনি করে, ব্যর্থ হয়ে গ্রামে ফিরে আসে, আবার যায় কলকাতায়। তবু তাদের বেকারত্ব, দারিদ্র্য ঘুচে না। এভাবেই নিঃশেষিত হয় জীবন। জীবনানন্দের মতো আর কোনো বাঙালি ঔপন্যাসিক এমন করে নিজেকে খুলে মেলে ধরেননি নিজের লেখায়। জীবনানন্দের উপন্যাস সে অর্থে তার আত্মদপণ, ব্যক্তিসত্তার অবাধ উন্মোচন। জীবনানন্দের অনুরাগী পাঠক এই গ্রন্থে নতুন এক জীবনানন্দকে খুঁজে পাবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।
আহমেদ মাওলা এর জীবনানন্দ দাশের উপন্যাস এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 510.00 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। jibonannondo-das-er-uponas by Ahmed Maolais now available in boiferry for only 510.00 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.