ভূমিকা বাংলাদেশ এবং ভারতের মেঘালয়ে মূলত গারো আদিবাসীদের বসবাস। নিজে গারো আদিবাসী তাই গারো আদিবাসী নিয়ে জানার একটি কৌতুহল থেকে গারো সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার ও জানার একটা আগ্রহ তৈরী হয়। আর এ কৌতুহল থেকেই কিছু কিছু বই সংগ্রহ করে পড়ার সময় লক্ষ্য করলাম, গারোদের যে ইতিহাস তা ভিন্নরকম এবং খুবই বিচিত্র ও অনেক সমৃদ্ধ মনে হয়েছে আমার কাছে। গারোদের জীবন যাত্রা, চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য, সামাজিক জীবন, আচার, রীতি, প্রথা সবকিছুর মধ্যে অন্যরকম বৈচিত্রতা রয়েছে যা ভিন্নরকম ও আর্কষনীয়। প্রাতিষ্ঠানিক কোন বইয়ে গারো সম্পর্কে বিস্তারিত তেমন কোন লেখা পাওয়া যায় না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বইয়ে গারো সম্পর্কে যে কয়েক লাইন পাওয়া যায় তা অনেক ক্ষেত্রেই গারোদের বাস্তব জীবন চিত্রের সাথে মিলেনা বললেই চলে এবং অল্প কয়েক লাইন মাত্র। নিজের কাছেই বইগুলো পড়তে পড়তে গারোদের অন্তত নিজের আদি ইতিহাস, উৎপত্তি এবং সামাজিক রীতি নীতি, দলগত বৈচিত্রতা, গোত্রগত বিভিন্ন নিয়ম কানুন কেমন ছিল, নিজের শিকড় কোথায় হতে পারে এ সম্পর্কে জানার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব রয়েছে বলে আমি ব্যাক্তিগতভাবে মনে করি। বর্তমান যুগে শিক্ষিত বা আধুনিক যুগের প্রজন্মদের নিজেদের (গারোদের) শিকড় সম্পর্কে কিছু পরিষ্কার ধারনা লাভের জন্য, জাতির ঐতিহ্য, কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে রক্ষা করার জন্য, যেন সবাই মিলে সচেতন হতে পারি এবং সমাজে আমাদের ঐতিহ্যকে লালন পালন করে, বৈচিত্রময় জীবনকে ধরে রাখতে পারি তার জন্য নিজেদের উৎপত্তি, বিকাশ, সামাজিক রীতি জানা খুবই গুরুত্বর্পূণ। গারো আদিবাসীরা ৯৮% (গারো উইকিপিডিয়া) খৃষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হলেও সামাজিক কৃষ্টি কালচার, সামাজিক রীতিনীতি গারোদের নিজস্ব স্বকীয়তা যে রয়েছে সেটাকেই অনুসরন করে চলেছে এখনো। নিজের কথা বিবেচনা করেই ধারনা করতে পারি, গারো ছেলেমেয়েরা বেশীরভাগই গারোদের উৎপত্তি সম্পর্কে জানেইনা বা জানার আগ্রহও তেমন নেই, কারন সেই তথ্য সহজলভ্য নয়। সব কিছু মূখে মূখে শুনেই আসছি আমি এতদিন, দু একটা যে বই সংগ্রহ করেছি সেগুলোও সর্ম্পূণ তথ্য পাওয়া বেশ কঠিন। এ বিষয়গুলো চিন্তা করে আমি শ্রী অঞ্জন জ্যোতি এর লেখা একটি গবেষনামূলক বই যার নাম “ঈঐঅঘএওঘএ ঝঞঅঞটঝ ঙঋ ডঙগঊঘ ওঘ গঅঞজওখওঘঊঅখ এঅজঙ ঝঙঈওঊঞণ” সংগ্রহ করেছি। এখানে গারো আদিবাসী গারোদের উৎপত্তি, সমাজ ব্যবস্থা, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, বিবাহ প্রথা ও মাতৃসূত্রীয় প্রথা ৮ সম্পর্কিত যে তথ্য উপাত্ত উল্লেখিত আছে (প্রথম চেপ্টারে) তা নিজের মত করে সবার কাছে সহজ ভাষায় অনুবাদ করে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি মাত্র। এ গবেষনাটি ২০১০ সালে একটি বিশ^বিদ্যালয়ের (গৌহাতি বিশ^বিদ্যালয়, ভারত) অধীনে পিএইচডি ডিগ্রী করার জন্য লেখক ও গবেষক শ্রী অঞ্জন জ্যোতি গবেষনা করেন এবং তা প্রকাশ করেন। আমি হুবহু অনুবাদ করিনি তবে তথ্যগুলো নিজের মত করে দিতে চেষ্টা করেছি। ইংরেজী থেকে বাংলা করার কারনে কিছু শব্দগুলোর বানান এবং উচ্চারণে অনেক ধরনের ক্রুটি বিচ্যুটি থাকবেই কারন আমিও নির্ভুলভাবে তথ্য উপাত্ত সম্পর্কে তেমন জানিনা, আমার অনেক অজ্ঞতা ও সিমাবদ্ধতা রয়েছে আমি নিজেই স্বীকার করি। স্থানের নাম, গোষ্ঠীর বিভক্তির নাম, গোত্রের নাম এগুলোর ক্ষেত্রে বানানের ভুল থাকতে পারে যেমন স শ ক খ ত ঠ থ চ ছ বর্ণগুলোর লেখ্য বা উচ্চারনে ভুল থাকতে পারে এবং থাকবে। তাছাড়া একার, ইকার এসব ব্যবহারের ক্ষেত্রেও বেশ ভুল থাকতে পারে যেমন- নকপান্থে-নকপান্থি, যোগী-জোগি, গুপা-গোপা, কুচ-কোচ, মিত্তে-মিত্তি ইত্যাদি কোনটা আসলে সঠিক আমিও দ্বিধা দ্বন্ধে থাকায় কোনটা সঠিক বানান বা শব্দ, তা নির্ভুল ভাবে তুলে আনতে না পারার জন্য পাঠকদের কাছে আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। এই বইয়ের তথ্য এর পাশাপাশি প্লেফেয়ারের বই থেকেও কিছু তথ্য উপাত্ত তুলে ধরেছি যা এই বইয়ে ছিল এবং গারোদের লেখক ও গবেষক শ্রদ্ধেয় সুভাষ জেংচাম এর বাংলাদেশের গারো আদিবাসী নামক বই থেকেও স্থানের নাম, বানান, গারো দলের নামের সাথে মিল আছে কিনা দেখার চেষ্টা করেছি। যেমন উনার বইয়ে গারো আদিবাসীর ১৩ টি বিভিন্ন সামাজিক কাঠামোগত দলের কথা উল্লেখ আছে, তবে শ্রী অঞ্জন জ্যোতি এর লেখা গবেষনামূলক বই যার নাম “ঈঐঅঘএওঘএ ঝঞঅঞটঝ ঙঋ ডঙগঊঘ ওঘ গঅঞজওখওঘঊঅখ এঅজঙ ঝঙঈওঊঞণ” এখানে ১২টি দলের কথা বলা আছে। শ্রদ্ধেয় লেখক ও গবেষক সুভাষ জেংচাম এর বইয়ে উল্লেখিত সেই ১৩ টি হলো ১) আওয়ে ২) আবেং ৩) আত্তং ৪) রুগা ৫) চিবক ৬) চিসক ৭) দোয়াল ৮) মাচ্চি ৯) কচ্চু ১০) মাত্তাবেং ১১) গারা গানচিং ১২) মেগাম ১৩) আতিয়াগ্রা। এই ১৩ নম্বর আতিয়াগ্রার গোত্রের উল্লেখ আমি যে বইটি সংগ্রহ করেছি সেখানে তার বর্ননা নেই। তাছাড়া আরেকটি বিষয় লক্ষনীয় যে, বিভিন্ন বইয়ে বিভিন্ন ধরনের তথ্য উপাত্ত রয়েছে, যা একটি বইয়ের সাথে আরেকটি বইয়ের তথ্য উপাত্তের সাথে অনেক কিছুই ভিন্নতা রয়েছে। যেহেতু গারোদের কোন কিছুই আদিযুগ থেকে লিখিত আকারে সংগৃহীত কোন ইতিহাসই ছিলনা, শুধু মূখে মূখে সংগৃহীত ছিল তার জন্যই হয়তোবা স্থান ও ব্যক্তিভেদে এমন তথ্যের ভিন্নতা রয়েছে। গারোদের কৃষ্টি কালচার, সামাজিক কাঠামো, রীতিনীতি অনেক বৈচিত্রময়, সমৃদ্ধ এবং আকর্ষনীয়, অন্যদের সাথে তুলনা করলে সর্ম্পূন ভিন্ন ধরনের। গারো গারোদের উৎপত্তি, সমাজ ব্যবস্থা, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, বিবাহ প্রথা ও মাতৃসূত্রীয় প্রথা ৯ লোক-কাহিনী শুনলে শিউরে উঠার মত অনেক কাহিনী রয়েছে যা থেকে অনেক কিছু জানার, বুঝার এবং শিখার রয়েছে অথচ আমরা গারো ছেলেমেয়ে কয়জনইবা তা জানি, একদম জানেনা বললে ভুল হবেনা। এখানে গারো সম্পর্কিত নেতিবাচক বিষয়গুলোও রয়েছে এবং থাকতেই পারে সব ইতিবাচক হবে এমন ভাবাটা স্বাভাবিক না। তাই গারো সম্পর্কিত সামান্যতম তথ্য উপাত্ত তুলে ধরার জন্যই আমি নিজের মত করে আরেকজনের গবেষনা থেকে বাংলাই অনুবাদ করে, জানানোর একটা প্রয়াস হাতে নিলাম মাত্র। এখানে যে ইতিহাস, উৎপত্তি, সামাজিক কাঠামোগত বিষয়গুলো তুলে ধরেছি তা কিছুটা হলেও নিজের শিকড় সম্পর্কে জানবে ও বুঝবে বলে আমি বিশ^াস করি। বর্তমানে গ্রাম থেকে শহরে এমনকি রাজধানীতেও ৩/৪ টি ওয়ানগালা উৎসব পালন, আরো বেশী গারো কৃষ্টি কালচারকে জানার, চর্চা করার জন্য যে আগ্রহ ও সুযোগ তৈরী হয়েছে এবং হচ্ছে তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। নিজের জাতিকে -গারো- কে নিয়ে চিন্তা করার চেতনা যাদের কাছ থেকে জেনেছি, নাম নাহয় মনে মনে রেখে দিলাম, তাদেরকে অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার জীবন সঙ্গী, মা ও ছোট বোন বিশেষ করে তার উৎসাহদাতা। মার কাছ থেকে যে দু একটা গল্প শুনতাম সেগুলো মিলিয়ে দেখারও একটা প্রচেষ্টা ছিল মাত্র। গারো আদিবাসীর বৈচিত্রময় জীবন সুন্দর থাকুক, আনন্দে থাকুক, ঐতিহ্যময়তা আরো প্রচারিত ও প্রসারিত হোক তা মনেপ্রাণে চাই। আবারও বলি বই এ লিপিবদ্ধ ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে পাঠকদের কাছে সবিনয় অনুরোধ থাকলো। লীনা জাম্বিল
লীনা জাম্বিল এর গারোদের উৎপত্তি, সমাজ ব্যবস্থা, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, বিবাহ প্রথা ও মাতৃসূত্রীয় প্রথা এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 160.00 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Garoder Utpotti Somaj Bebostha Kristhi Sangskriti Bibaho Protha O Matrisutriyo Protha by Lena Zambilis now available in boiferry for only 160.00 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.