এক ছিল রাজোকা তিন মাস হয় তার স্বামী নিখোঁজ। বেঁচে আছে না মরে গিয়েছে জানে মরিয়ম। লাশ পাওয়া যায় নাই। কোনাে চিহ্ন পাওয়া যায় নাই। সাথের মানুষরা বলতে পারে নাই কিছু। মরিয়ম এখনো ভাড়া ঘরেই আছে। লাশ পাওয়া যায় নাই। তাই আশা ছাড়তে মন চায় না। সারাক্ষণই মনে হয় এই বুঝি লোকটা ফিরে আসবে। এই বুঝি ভোর। গলায় ডাক দেবে কই রে আমার মায়েরা কই? মরিয়মের স্বামী সুন্দর আলী। লালমনিরহাটের তিস্তার পার থেকে সাভারে এসে তাকে নিয়ে ঘর বেঁধেছিল সুন্দর আলি। সাহেবদের মতাে চেহারা বলেই মা-বাবা নাম দিয়েছিল সুন্দর। কালকোলা মােটাসােটা গােলগাল মরিয়মকে নিজে পছন্দ করে বিয়ে করেছিল সুন্দর। মায়ের কান্না, বাপের হুমকিধমকি তাকে বিয়ের সিদ্ধান্ত থেকে সরাতে পারেনি। অগত্যা রাজি হয়েছিল তার বাবা-মা। নয় ক্লাস পর্যন্ত পড়া সুন্দর আলির স্ত্রী এক অক্ষরও পড়তে জানত না। বিয়ের কয়েক দিন পরেই তাকে নিয়ে ঢাকা চলে আসে। প্রথমে মিরপুর তারপরে সাভারে। সাত বছর হয় বিয়ে হয়েছে মরিয়মের। দুই মেয়ে হয়েছে। বড় মেয়ে রাজাকার বয়স হয়। ছােট মেয়ে বাজেকার বয়স তিন। পেটের মধ্যে যেটা বেড়ে ওঠে সেও চার মাসের। এত তাড়াতাড়ি আবার সন্তান নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না সুন্দরের। আসলে সুন্দর আর সন্তানই চায়নি। বলেছে, দুই মেয়ে আছে। আবার কিসের জন্য বাচ্চা চাও তুমি? মরিয়মের ছেলের খুব শখ। ছেলে যে হবে এমন নিশ্চয়তা নেই জেনেও আকার বাচ্চা নিয়েছে সে। সুন্দর মরিয়মের আকুতি দেখে রাজি হয়েছে। ছয় বছরের রাজোকা দেখতে একেবারে তার মায়ের মতাে। মাথা ভরা চুল। ডাগর ডাগর মায়াভরা দুই চোখ। গায়ের রং কালাে। বাজেকা তার বাপের রং-চেহারা পেয়েছে। মরিয়ম ব্রাজোকার রং নিয়ে আফসােস করলে সুন্দর আলি খুব রাগ করত। সে বলত, আমার মেয়ে পড়ালেখা করে... সংক্ষিপ্ত