মােহাম্মদ শরীফ হােসেন একজনই ছিলেন। জীবন প্রদীপের সব আলাে উজাড় করে দিয়ে তিনি চলে গেলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের সেরা ছাত্র ইতিহাসের পৃষ্ঠা | জুড়ে নিজের ছবি এঁকে তিনি তার আলাের পৃথিবীতে, তিনি তার অন্তর উজাড় করা মানবকল্যাণের পুষ্পিত বৃক্ষের সবুজ রবে, তিনি তার জ্ঞান শিখার ফর্সা আলােয় জীবন দিয়ে মৃত্যুকে জয় করলেন। ইস্ত্রিবিহীন সাদা পাজামা পাঞ্জাবী পরে জং ধরা সাইকেল চালিয়ে স্বপ্ন নির্মাণের পথে ছুটেছেন শরীফ হােসেন। নিজে খড়কুটো সংগ্রহ করে স্বপ্নের বাসা নির্মাণ করেছেন, আবার স্বপ্নহীন মানুষের হৃদয়ের ক্যানভাসে রঙ চড়িয়ে স্বপ্নকে | জাগিয়ে তুলেছেন। উপমহাদেশের পাঠাগার আন্দোলন, মানবকল্যাণের লংমার্চের গল্প ইতিহাসের স্বর্ণালী অধ্যায়ে হীরক উজ্জ্বল দ্যুতি ছড়াচ্ছে। যশাের শহরের খড়কি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেও শরীফ হােসেন বালক বয়সেই চেতনায় শান দিয়েছেন। পরিপূর্ণ মানুষ হওয়ার জন্যে একের পর এক মানবকল্যাণের উপাখ্যান সৃষ্টি করে প্রগতির চাকাকে সামনে ঘুরিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার চাকরিকে প্রত্যাখ্যান করে নাড়ি পােতা গ্রামে ফিরে এসেছেন। কৃষকদের জন্যে, এতিমদের জন্যে, অসহায় দুস্থ মহিলাদের জন্যে বিদেশের টাকায় নয়, নিজের টাকায় বন্ধু বান্ধব ভক্ত অনুরাগীদের সহায়তায় গড়ে তুলেছেন একের পর এক রূপকথার গল্পের মতাে আধুনিক ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে | শরীফ হােসেনের আলােয় উদ্ভাসিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ বাঁচতে শিখেছে। মফস্বলের শ্যামল ছায়ায় তিনি বসবাস করেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ধারায় নিজেকে সম্পৃক্ত রেখে একের পর এক ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। রাজনীতি, মানবকল্যাণ, পাঠাগার আন্দোলন, জীবনযাপন, ভদ্রতা নম্রতা, বিনয়, প্রেম ভালবাসা, মায়া মমতার চাদরে নিজেকে জড়িয়ে শরীফ হােসেন গত ৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ যশােরকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন। রেখে গেছেন তার কীর্তি। যে কীর্তি সাক্ষ দেয়, তিনি একজনই ছিলেন শরীফ | হােসেন।