চারদিকে গাঢ় অন্ধকার। মাথার উপর জ্বলছে কতগুলো ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র আলােকণা। পায়ের নিচে মাটি, অথচ উপরে অন্তহীন শূন্যতা। কতদূর এই মাটির পৃথিবী তার সীমানা জানা নেই। চোখ আছে তবু দেখা যায় না কিছুই। এক সময় সূর্যশেখর আকাশে উঠে এল। এখন একে অপরকে দেখতে পাচ্ছে। সংজ্ঞাহীন কত আবেগ-অনুভূতি, মনজুড়ে কত প্রশ্ন; কিন্তু প্রকাশের ভাষা নেই। স্বাদ-গন্ধের বিচারে যাবতীয় বস্তু খাবার হিসেবে বেছে নেয় তারা। খিদের তাড়নায় তারা মানুষের মাংস খেতেও কসুর করে না। সাধের ঘর বলতে কিছু নেই, নেই কোনাে সভ্যতার আলাে। বৈরী প্রতিবেশে মানুষের মধ্যে শুরু হলো অস্তিত্বের লড়াই। কোথাও শত্রুপক্ষ | জন্তু-জানােয়ার, আবার কোথাও মানুষ স্বয়ং। শুরু হলাে দলবদ্ধভাবে বাঁচার পরিকল্পনা। খাওয়া আর ঘুম ছাড়াও তারা কিছু করতে চায়। অস্তিত্ব রক্ষায় তারা যেমন শক্তিশালী হতে চায়, তেমনি স্বপ্ন দেখে আরামপ্রদ ও অধিকতর সুবিধাজনক জীবনযাপনের। শুরু হলাে বুদ্ধিগত শক্তির অনাড়ম্বর পদযাত্রা। একটু একটু করে জ্বলতে শুরু করল চিন্তা-চেতনার আধেক ফুরসৎ। এক সময় সে দাবি করল নিজের | পরিচয়। হয়ে উঠল রহস্যময় জীবনের অভিযাত্রী। | রাতের আকাশে চাঁদ দেখে যে মানুষের বিস্ময়ের অন্ত ছিল না, সে মানুষই চাঁদের পিঠে দাঁড়িয়ে বুক ফুলিয়ে বলছে 'আমি বিজয়ী অভিযাত্রী' । সে তার বিস্ময়ের পৃথিবীর অন্তহীন সীমারেখায় মুড়িয়ে দিয়েছে স্যাটেলাইট কুণ্ডলী। দূর বিস্ময়কর মহাকাশের সাথে প্রতিদিন চলছে মিত্রের মত কুশল বিনিময়। সে দিনের তীর বল্লম আজকের লক্ষ্যভেদী ব্যালাস্টিক মিসাইল। চেতনার এক একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপে আজ কোটি হৃদয়ের সম্মিলন। সে আদিম গুহাবাসী কল্পনা করতেও ভয় পেয়েছিল যাকে, সে হলাে আজকের সভ্যতা, আজকের প্রযুক্তির ঐশ্বর্য, আজকের এই আত্মসত্তার উন্মোচন। | প্রশ্ন হলাে অন্ধকার গুহায় কে জ্বালালাে সভ্যতার বাতি? কে বানালাে মর্মর পাথরের মনােরমা প্রাসাদ, গগনচুম্বী অট্টালিকা? উত্তর একটাই- ছাত্রশক্তি; উত্তর একটাই- ছাত্রসত্তা।