শক্তিশালী ড্রইং, রঙের সুমিত ব্যবহার এবং সমাজচেতনায় উদ্দীপিত দৃষ্টিভঙ্গি মুর্তজা বশীরকে দিয়েছে স্বাতন্ত্র্য। বহু মাধ্যমে তিনি কাজ করেছেন, যেমন ছাপচিত্র, জলরং, তেলরং, মিশ্র মাধ্যম। তেলরঙেই তাঁর সিদ্ধি সমধিক। তিনি অনেকগুলো সিরিজের শিল্পী : দেয়াল, শহীদ-শিরোনাম, পাখা, রমণী, কলেমা তৈয়বা। প্রতিটিই স্বতন্ত্রে উজ্জ্বল, বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। তাঁর রমণী-চিত্রমালায় বাঙালি নারীর আনন্দ-বেদনা, কোমলতা-দৃঢ়তা, স্বভাবসৌন্দর্য ও চর্চিত বৈশিষ্ট্য - এসবের সমন্বয় ঘটেছে।
চিত্রশিল্পের ভুবনে এই দৃপ্ত পদচারণার পাশাপাশি তিনি নিরলস সাহিত্যসাধনা করে চলেছেন। সাহিত্যের সকল শাখায় তাঁর সহজ বিচরণ।
তাঁর একাধিক কাব্যগ্রন্থ এবং উপন্যাস পাঠক ও সমালোচকের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। সম্প্রতি বাংলার ইতিহাস নিয়ে গবেষণামূলক গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন তিনি।
মুর্তজা বশীর দীর্ঘদিন ধরে নানা পত্রিকায় শিল্পকলা ও স্মৃতিকথা সম্পর্কে প্রবন্ধ ও নিবন্ধ লিখে চলেছেন। এসব প্রবন্ধ, নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারের সংখ্যা নিতান্ত কম নয়। এসব রচনায় একদিকে প্রকাশ পেয়েছে তাঁর সাহিত্যবোধ ও সাহিত্যরুচি, অন্যদিকে তিনি ছাত্রাবস্থা থেকে যে-অঙ্গীকারের চেতনায় আন্দোলিত হয়ে বৃহত্তর সৃজনভুবনে প্রবেশ করেছিলেন তা খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে উঠে এসেছে। যৌবনের প্রারম্ভে তিনি বামপন্থা ও সমতাভিত্তিক সমাজনির্মাণের যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা তাঁর সৃজন-উদ্যান ও চেতনায় নানাভাবে ছাপ ফেলেছে। তাঁর প্রবন্ধে জিজ্ঞাসা আছে - মননের ঔজ্জ্বল্যেও দীপ্ত এইসব রচনা। স্বাদু গদ্যের কুশলতা তাঁকে স্বাতন্ত্র্যে চিহ্নিত করেছে। এছাড়া পঠন-পাঠন এবং সাহিত্য ও শিল্পের নানা দিগন্তের উন্মোচন আমাদের অভিজ্ঞতার দিগন্তকে বিস্তৃত করে। চিত্রশিল্পে বিচরণে তিনি কোন পরিপ্রেক্ষিত ও দৃষ্টিভঙ্গিকে ধারণ করে হয়ে উঠেছেন এদেশের একজন শীর্ষ ও প্রথিতযশা শিল্পী তা তাঁর কয়েকটি রচনা পাঠে উপলব্ধি করা যায়। তাঁর খ্যাতনামা পিতা ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ সম্পর্কে তিনি স্মৃতিচারণ করেছেন। এই স্মৃতিতে তাঁর পিতার পাণ্ডিত্য, ব্যক্তিস্বরূপ দ্যুতিময় হয়ে ফুটে উঠেছে। এছাড়া তাঁর শিক্ষক জয়নুল আবেদিন, শিল্পী কামরুল হাসান এবং বন্ধু শিল্পী আমিনুল ইসলাম, শিল্পী সোমনাথ হোর, শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী, শিল্পী রশিদ চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পীর শিল্পসাধনা ও সৃজন নিয়ে তিনি আলোকপাত করেছেন। এঁদের সম্পর্কে আলোচনাকালে মুর্তজা বশীর এদেশের শিল্প-আন্দোলন ও তাঁদের সকলের প্রয়াসে সমাজ, দেশ ও ঐতিহ্যিক প্রবাহ কীভাবে হয়ে উঠেছে বিশেষ উদ্দীপন বিভাবে দীপ্ত সে-কথাও তিনি বিশ্লেষণ করেছেন। যদিও দু-একটি প্রবন্ধে বা বিশ্লেষণে একই ব্যক্তি সম্পর্কে আলোচনাকালে যৎসামান্য পুনরাবৃত্তি আছে তবুও এসব বিশ্লেষণে আমরা এই খ্যাতনামা শিল্পীদের শিল্প-উৎকর্ষ সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জন করি। মুর্তজা বশীরের বন্ধুবৃত্ত বিরাট। এই বন্ধুজনের মধ্যে অনেকেই সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব : ফয়েজ আহমদ ফয়েজ, পরিতোষ সেন, শামসুর রাহমান, হাসনাত আবদুল হাই, সাঈদ আহমেদ। তিনি এঁদের কথাও লিখেছেন।
মুর্তজা বশীর বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই একুশে নিয়ে তাঁর স্মৃতি, অনুভব-অনুভূতি ও বিশ্লেষণ প্রকাশ পেয়েছে কয়েকটি রচনায়।আমরা তাঁর লেখা থেকে নির্বাচিত কিছু প্রবন্ধ ও স্মৃতি প্রকাশ করতে পেরে আনন্দিত বোধ করছি।
আশা করি পাঠক শিল্পী মুর্তজা বশীরের বৈচিত্র্যময় ও বহুকৌণিক এই রচনাগুচ্ছ থেকে বৃহত্তর এক ভুবনের সাক্ষাৎলাভ করবেন।
মুর্তজা বশীর এর আমার জীবন ও অন্যান্য এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 472.50 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Amar Jibon O Onnano by Mortaza Bashiris now available in boiferry for only 472.50 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.