ইতিহাস একটি জাতির দর্পণ। ইতিহাস সংরক্ষণের গুরুভার সেই জাতির বােস্বামহলের কাধে অর্পিত থাকে। ইতিহাসের মাধ্যমেই একটি জাতির পরিচয় নির্ণীত হয়। নিকটইতিহাসে প্রাচ্যবিদরা অ্যাকাডেমিক ধাচ অবলম্বন করে উম্মাহর ইতিহাস কলঙ্কিত করার সর্বাত্মক প্রয়াস চালিয়ে গেছে। আমাদের চলমান সময় নিয়েও আমরা অত্যন্ত উদবিগ্ন। নিকট-অতীতের ইতিহাসের পাশাপাশি বর্তমান আবহের ইতিহাসকেও যদি আমরা পূর্ণ সততা ও সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে বিশুদ্ধ দলিল-প্রমাণ ও সর্বাধিক তথ্যের আলােকে সংরক্ষণ করতে না পারি, তাহলে আগামী প্রজন্মের হাতে ইতিহাস বলতে শুধু প্রাচ্যবিদদের বিষমাখা কলমের কালি পেছাবে; এ কথা খুলে বলতে হয় না।

বিশেষ করে আফগানিস্তানের ইতিহাস প্রাচ্যবিদদের বিষাক্ত লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। পশ্চিমাবিশ্ব তাদের দাজ্জালি মিডিয়ার মাধ্যমে আফগানিস্তানের তাওহিদি মুসলমানদের সন্ত্রাসী প্রমাণে উঠেপড়ে লেগে আছে। আগামী দিন যখন এসব তথ্য-প্রমাণ নিয়ে কোনাে ইতিহাস গবেষক আফগানিস্তানের ইতিহাস রচনা করবেন, তখন সেখান থেকে উঠে আসা দুর্গন্ধযুক্ত পুথিমালা মুসলিম যুবকদের মন-মগজ আফগানদের ব্যাপারে বিদ্বেষী। করে তুলবে, এটাই স্বাভাবিক।

এই উদবেগ ও উৎকণ্ঠা থেকেই ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে আমি প্রতি রবিবারে জরবে মুমিন পত্রিকায় আফগানিস্তানের ইতিহাস নিয়ে লিখতে শুরু করি। শুরুতে উদ্দেশ্য ছিল, আফগানিস্তানের বিগত দুই দশক নিয়েই শুধু লিখব, যেখানে মৌলিকভাবে স্থান পাবে সােভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে আফগান মুজাহিদদের ১০ বছরব্যাপী চলা অসম যুদ্ধের বর্ণনা এবং তালেবানদের উত্থান ও তৎপরবর্তী সময়ের বিস্তারিত আলােচনা; কিন্তু কয়েকটি কলাম লেখার পর আমার মনে হলাে, আফগান ইতিহাসের প্রত্যেকটি যুগ ও অধ্যায় একটি অপরটির সঙ্গে ওতপ্রােতভাবে জড়িয়ে আছে। বিচ্ছিন্নভাবে দুয়েকটি দশকের ইতিহাস লিখে আফগানজাতিকে উপস্থাপন করা ঠিক হবে না। যদিও অন্যান্য জাতির সমসময়িক ইতিহাসও তাদের সুদূর অতীতের সঙ্গে যুক্ত থাকে; কিন্তু আফগানজাতি ও আফগানিস্তানের ইতিহাস বিগত ১ হাজার বছর ধরে প্রতিটি যুগকে এত নিবিড়ভাবে যুক্ত করেছে যে, পৃথকভাবে আপনি কোনাে একটি যুগকে উপস্থাপন করতে পারবেন না। এ জন্য আল্লাহর ওপর ভরসা করে সিদ্ধান্ত নিই, ধীরে ধীরে হলেও আফগানিস্তানের প্রাপ্ত সব ইতিহাস থেকে বিশুদ্ধ বর্ণনাগুলাে একত্রিত করে 'আফগানজাতির সম্পূর্ণ ইতিহাস তুলে ধরার সর্বোচ্চ প্রয়াস চালাব, ইনশাআল্লাহ।