রােকেয়া মান্নান-এর জন্ম বিংশ শতাব্দীর উষালগ্নে, ১৯০০ খৃষ্টাব্দে। ১৯৭৭ সনে তিনি এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যান । দীর্ঘ প্রায় আট দশকব্যাপী জীবনে তিনি লাভ করেছেন সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার বিচিত্র ও মর্মস্পর্শী অভিজ্ঞতা। ঘর-সংসারের সীমিত অঙ্গণে নিরন্তর জীবন | যুদ্ধে নিরত থেকেও যারা বিশাল ও বিপুল জীবনকে অন্তরঙ্গ আলােতে দেখতে পান, বেগম রােকেয়া মান্নান সেই শাশ্বতী নারীদের অন্যতমা । স্মৃতি-কুসুম তার বিচিত্র ও মর্মস্পর্শী জীবনালেখ্য, সহজ সরল ভাষায় আকর্ষণীয় | শৈলীতে রচিত আত্মকথা। তিনি ঐতিহ্যবাহী সম্রান্ত বাঙ্গালি মুসলমান মধ্যবিত্ত বংশের সন্তান ও ঘরণী । সেকালে রেওয়াজ অনুযায়ী শৈশবে, মাত্র আট বছর বয়সেই তার পরিণয় ঘটে জনাব আবদুল মান্নান ওয়ার্সীর সঙ্গে, কর্মজীবনে যিনি ব্রিটিশ ভারতের বঙ্গীয় শিক্ষা সার্ভিসের সদস্য হিসাবে ১৯২০, '৩০ ও '৪০-এর দশকে বিভিন্ন সরকারী স্কুলের শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন । যুগান্তকারী নানা পালাবদল রােকেয়া মান্নান-এর জীবন ও সংসারে রেখেছে বিপুল অভিঘাত । তার শৈশব থেকে মধ্য বয়স কাটে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনাধীন উপমহাদেশে । পরিণত বয়সে তিনি দেখেন নব-সৃষ্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রে মধ্যবিত্ত বাঙ্গালি জীবনের সংঘাতময় বিবর্তন । ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বাঙ্গালির ঐতিহাসিক বিজয় ও স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় দেখার সৌভাগ্য তাঁর হয়। জীবনের শেষ ছয় বছর তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে দিন কাটান । রােকেয়া মান্নান রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে নেত্রী বা অগ্রণী কর্মীর ভূমিকা নেননি। মূলত তাঁর জগত ছিল। কন্যা, বধূ ও মাতার জগত, পিতামহী, মাতামহীর বিচিত্র নিবিড় পৃথিবী । যুগে যুগে বিশ্বে যে নারীরা ঘর-সংসারের মূল চালিকাশক্তি হিসাবে বিকশিত মানব জীবনের ভিত্ তৈরি করেন, তিনি ছিলেন তাঁদেরই এক অনন্য প্রতিনিধি।