সমরেশ দেবনাথ বাংলা ভাষার মূলধারার প্রধান কবিদের মধ্যে একজন। ইতােমধ্যে বহু স্মরণীয় পংক্তি তিনি বাঙালি পাঠকদের উপহার দিয়েছেন। আজ তার খ্যাতি বাংলা-ভারত ছাড়িয়ে সমগ্র ইউরােপ-আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়েছে। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে সমরেশ দেবনাথ রচিত ‘ভূমিপুত্র কাব্য গ্রন্থটি বিরাট পাঠক প্রিয়তা অর্জন করে। কবীর চৌধুরী, শামসুর রাহমান, বিনয় মজুমদার, চিন্ময় গুহ, নির্মলেন্দু গুণ, উৎপলকুমার বসু, আহমদ ছফা, ওমর আলী, ড. আরেফিন সিদ্দিক, ড, তরুণ মুখােপাধ্যায়, ড. সৌমিত্র শেখর, ড. রাণা গুপ্ত, দেবারতি মিত্র, সুকুমার বড়ুয়া, ড. রহমান হাবিব, যুবক অনার্য, রেহানুল হকের মতাে যশস্বী কবি-লেখকগণ তার ওপর লিখেছেন। দেবনাথের শ্রেষ্ঠ কবিতা, কবিতাসমগ্র উভয় বাংলা থেকে প্রকাশিত হয়েছে। জাতীয় অধ্যাপক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক কবীর চৌধুরী লিখেছেন নাটক 'সমরেশ কোথায়। বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও অধ্যাপক ড. তরুণ মুখোপাধ্যায় লিখেছেন 'সমরেশ দেবনাথ: জলরঙ জীবনের কবি’ প্রবন্ধগ্রন্থ। ভারতীয় সমালোচক ও প্রাবন্ধিক ড. রাণা গুপ্ত ইংরেজিতে লিখেছেন ‘A New Voice in World Poetry. তার কাব্যগ্রন্থ 'পরমাণু কবিতা' দর্শনখচিত রূপ নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে। নির্দ্বিধায় বলা যায়, চল্লিশ বছরের বাংলা কাব্যের ইতিহাসে এটা একটি বিস্ময়কর ও গুরুত্বপূর্ণ কাব্যগ্রন্থ। এই গ্রন্থের মাধ্যমে কবি বাংলা কবিতার ভাষা, বিষয়, শৈলী ও বক্তব্যকে পাল্টে দিলেন। সমাজ ও সময় পরিবর্তনের চিহ্নগুলি তাঁর কবিতায় তীব্রভাবে দৃশ্যমান। এ গ্রন্থ। অবশ্যই নবরস, ব্যঞ্জনা, দর্শন ও চিন্তার গভীরতায় এবং চূড়ান্ত নান্দনিকতায় ঋদ্ধ। তিনি ২০০৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারভাঙ্গা হলে সহযাত্রীর সংবর্ধনা পান। ২০১৫ সালে দ্বারভাঙ্গা হলে সম্মাননা লাভ। মাতৃভাষা ছাড়া ইংরেজি, জার্মান, ফরাসি, সংস্কৃত, স্প্যানিশ, নরওয়েজীয়ান, লাতিন, সুইডিশ, অসমীয়া ভাষাতে তাঁর দখল রয়েছে। তার সম্পাদিত পত্রিকা- বৈরান (সাহিত্যপত্র), World Poetry, ভূমিকন্যা। ১৯৯২ সালে রুদ্র স্মৃতি পুরস্কার লাভ করেছেন। ২০০১ সালে মানবিক চেতনা পুরস্কার লাভ (ভূমিপুত্র কাব্যগ্রন্থের জন্য)। এরপর জীবনানন্দ পুরস্কার লাভ। তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থ, নেপথ্যের ক্যাকটাস, কৃষ্ণপক্ষের কোকিল, হাতের কাহিনী, বৃক্ষের সংসারে একা, শহর কোন মানচিত্র তৈরি করে না, ভূমিপুত্র, জলরঙ জীবন, মহাকালের কবিতা, মৃতনগরীর শােকগাথা, মৃত্তিকাকন্যা, আমার গন্তব্য, ন্যে কোন চিকার নেই, নিম ও তাপযন্ত্র, পরমাণু কবিতা, এ মাটিতে পা রাখবেন না ইত্যাদি। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে- বাণী প্রবচন উদ্ধতি বীজরহস্য, ফিনল্যান্ডের কবিতা। তিনি সম্পাদনা করেছেন, বিশ্বের প্রেমের। কবিতা, ডেরেক ওয়ালকটের কবিতা দুই বাংলার শ্রেষ্ঠ প্রতিবাদী কবিতা, এই সময়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা, বাংলাদেশের কবি ও কবিতা। তার প্রবন্ধ গ্রন্থসমূহ: বর্তমান বিশ্বের কবিতা, New Trends in World Poetry, কবিতার গভীরে, প্রবন্ধ সংগ্রহ-১, বাংলাদেশের রাজকন্যা সুচিত্রা সেন। তাঁর রচিত ছােট নাটক বঙ্গবন্ধুর ছায়া এবং গল্পগ্রন্থ, শ্রেণী বৈষ্যমের গল্প । তার ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ- Bhumiputra and Other Poems, Myth and Earth, The Art of Kissing, The Ape Man, Micro Poems, তাঁর একমাত্র প্রহসন গ্রন্থের নাম- ছাগল উৎপাদন কেন্দ্র, ইউরােপ ভ্রমণ তার ভ্রমন গ্রন্থ। ১৯৯৯ সালে কলকাতার দূরদর্শনে রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুবার্ষিকীতে সুবীর মণ্ডল রবীন্দ্রনাথ ও গােপাল' কবিতাটি আবৃত্তি করেন। ২০০১ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাহিত্যানুষ্ঠানে পাঠ করেন ‘শহর কোন মানচিত্র তৈরি করে না' কবিতাটি সম্পাদনা করেছেন- Modern Poems form Asia, ২০০১ সালে গ্রামে ফেরা। কবিতাটি প্রকাশের পর বিশিষ্ট লেখক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান কবিতাটি পাঠ করে বিশেষ প্রশংসা করেন। ২০০১ সালে কলকাতা থেকে জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়ের উদ্যোগে বের হয় ‘স্বপ্নসঙ্গী' নামে বাংলা কবিতার ক্যাসেট- এতে সমরেশ দেবনাথের ‘প্রকৃত কবিতা' গৃহীত হয়। তিনি ২০১১ সালে নরওয়ের রাজধানী অসলােতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব কবি সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে যােগদান করেন। ২০১৪ সালে আবার অসলােয় বিশ্ব কবি সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে যােগদান করেন। একই সাথে প্যারিস (ফ্রান্স) গমন করেন এবং স্যেন নদীর তীরে অনুষ্ঠিত কবি সম্মেলনে যােগদান করেন। ইউরােপ থেকে ফেরার পর ঢাকায় সংবর্ধনা লাভ । ২০১৭ সালে গ্রীসের রাজধানী এথেন্সে গমন করেন, ২০১৮ সালে যান রােমে । এর ফলে তাঁর আন্তজার্তিক দৃষ্টি স্পষ্ট হয়। বর্তমানে তিনি ভূমিকন্যার সম্পাদক, বিশ্ব কল্যাণ রাষ্ট্র আন্দোলনের চেয়ারম্যান, কবিতা। একাডেমীর মহা-পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৭ সালে ইউরােপীয় পােয়েট্রি প্রাইজ লাভ' ২০১৭ সালে আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন স্বর্ণপদক লাভ। এরপর কবিতার জন্য বিদেশ থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। জন্ম: ৩ সেপ্টেম্বর ১৯৫৪, ডুবাইল, টাঙ্গাইল।