কবি ও সাংবাদিক শরীফা বুলবুলের জন্ম ১৫ জানুয়ারি চট্টগ্রামের চন্দনাইশে। ১৯৭০ সালের ২৫ ডিসেম্বর বাবা নুরুচ্ছফা চৌধুরীর প্রতিষ্ঠিত ‘বলাকা প্রেস’র স্মৃতি ধরে রাখতেই সাহিত্যপত্রিকা ‘মাসিক বলাকা’ সম্পাদনার কাজ শুরু করেন। ১৯৯৪ সাল থেকে মাসিক বলাকা প্রকাশনের ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠা করেন প্রকাশনা সংস্থা বলাকা প্রকাশন’। মূলত আশি দশকে বাবার অনুপ্রেরণায় স্কুলজীবনেই তিনি শুরু করেন ছড়া ও কবিতা লেখা। পাশাপাশি লিখেছেন ছােটগল্প। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে লিখতেন সাম্প্রদায়িকতাবিরােধী সাহসী প্রবন্ধ ও নারীচেতনার কলাম। চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদীতে ‘প্রতিধ্বনি প্রতিদিন', চট্টলচিত্রে ‘অন্তর্পাঠ এবং নাঈমুল ইসলাম খান সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘কাগজ ম্যাগাজিনে লিখতেন নারী চেতনা ও সমাজভাবনার কলাম। তবে প্রকৃত স্বাধীনতাকামী নারীর কণ্ঠস্বর দৃঢ় হয়ে আছে মূলত তাঁর কবিতায়। কবি হিসেবে তাঁর স্বাতন্ত্র এখানেই, আন্দোলনকারী নারীবাদীদের চিৎকার ও ঘণা কবিতায় স্লোগানের মতাে ব্যবহার করেননি তিনি। বরং নম্র গলায় বলেছেন নিপীড়িত, প্রতারিত নারীর বিষাদ ও অভিমানের কথা। তার ভাষ্যে মিশে আছে নতুন দৃষ্টিকোণ নিয়ে গড়ে ওঠা গভীর স্পর্শকাতর এক নারীজীবন। তা হয়ে যায়নি মােটাদাগের কোনাে ইশতেহার। সেই বােধ থেকে সমাজে সীমাহীন উপেক্ষা ও বঞ্চনার চাবুকে ক্ষতবিক্ষত হওয়া নারীর পাশে মমতার হাত রেখেছেন তিনি। শরীফা বুলবুল প্রকৃত অর্থে ধারন করেছেন সৃজনশীল অফুরন্ত এক মানবিক সত্তাকে। তার প্রকাশিত ৮টি কাব্যগ্রন্থ, ৫টি সম্পাদিত গ্রন্থ এবং মুক্তিভিত্তিক বই ‘বীরাঙ্গনা নয় মুক্তিযােদ্ধা ও ‘অপারেশন ১৯৭১' মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির অন্যন্য দৃষ্টান্ত। তবে কবিকে সবচেয়ে বেশি আলােড়িত ও উদ্বুদ্ধ করেছে। প্রথাবিরােধী লেখক গবেষক হুমায়ুন আজাদের দর্শন ও সমাজভাবনা। দীর্ঘ সময় ধরেই এই লেখকের ভাবনাকে লিপিবদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন। সেই প্রয়াসেরই অংশ সাক্ষাৎকারভিত্তিক গ্রন্থ ‘হুমায়ুন আজাদ: এই বাঙলার সক্রেটিস’ ও ‘মুক্তিযুদ্ধ ভাষা আন্দোলনের অবধারিত পরিণতি: হুমায়ুন আজাদ।