Loading...
আবদুর রশীদ ওয়াসেকপুরী
লেখকের জীবনী
আবদুর রশীদ ওয়াসেকপুরী (Abdur Rashid Wasequpuri)

কবি আবদুর রশীদ ওয়াসেকপুরী পঞ্চাশ দশক থেকে যে ক'জন প্রথম শ্রেণির কবি নিলস লিখে আসছেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য। আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে নানান | অসংগতি, নানান বৈপরিত্য, ধর্মীয় গোঁড়ামী ও সাম্প্রদায়িকতা তিনি তাঁর লেখায় সাধারণ ভঙ্গীতে এবং ব্যঁঙ্গ-বিদ্রপে তুলে ধরে সমাজকে | সমাজের আদর্শিক রূপ নিয়ে বেঁচে থাকার ও ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে স্বার্থ হাসিলের অপপ্রচেষ্টা প্রতিহত করার; মানুষে মানুষে দোভেদ দূর করণের প্রাণান্তর চেষ্টা সুস্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলেন। তিনি একাধারে কবি, সাহিত্যিক ও সম্পাদক ছিলেন। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী এ কবি ছিলেন সম্পূর্ণ প্রচার-বিমুখ মানুষের জীবনের অসংগতি ও অসাম্যতার বিরুদ্ধে চলতে চলতে এক সময় তিনি নিজেই যেন সমাজের বৈষম্যের বেড়াজালে আটকে পড়েন। তবুও অতি প্রত্যয়ী এই কৰি কখনে মাথা নোয়াননি অপশক্তির কাছে। জীবদ্দশায় অতি তেজী, আহুবলে বলীয়ান অথচ অভিমান এ কবি প্রতিনিয়তই তথাকথিত সমাজপতি, ধনপতি ও বিশেষ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর রোষানলে আহত ও সাময়িক বাঁধাপ্রাপ্ত হন। দরিদ্র্য যেমন তাঁকে অফুরন্ত শক্তি যুগিয়েছে আর্তের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হওয়ার, তেমনি দারিদ্র্যের কারণেই তিনি তাঁর সাহিত্য কর্ম সাধারণ মানুষের কাছে আরো বেশি করে তুলে ধরতে পারেন নি। যার কারণে তাঁর অনেক সাহিত্য কর্মই পাণ্ডুলিপি হয়ে উইপোকার খাদ্য হয়েছে। যে কয়েকটি বই বিভিন্ন সময়ে বেরিয়ে ছিল বেশ কিছু তার পুনঃমুদ্রণের অভাবে কালের গহ্বরে হারিয়ে যায়। তাঁর বর্তমানে পুনঃমুদ্রিত বই 'অলি-গলি শতপথ', “আমির সওদাগর', 'এই দেশ, এই মানুষেরা', 'বান', 'একটি অবৈধ রাতের কাহিনি, 'যেহেতু', একটি দীর তিনটি ধারা ইত্যাদি সামগ্রিকভাবে সমাজের অসহায়, পীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের কণ্ঠস্বরের মুদ্রিত রূপ। কবি আবদুর রশীদ ওয়াসেকপুরীর লেখার অনন্য আরেকটি মাত্রা নারী ও প্রকৃতি। তাঁর লিখনীতে প্রকৃতি ও নারী প্রেম আর ভালােবাসায় নিবিড়ভাবে আবদ্ধ। তথাকথিত আধুনিক সমাজে কিছু | শ্রেণির কাছে নারী হাতের খেলার পুতুল। অথচ সে নারীই সমাজের জীবনী শক্তি যােগায় স্নেহ-মমতায় যা তাঁর আমির সওদাগর কাব্যগ্রন্থে খুঁজে পাওয়া যায়। একটি জীবন ভেঙ্গে যেয়েও আবার নতুন আঙ্গীকে জীবনের প্রচলিত দর্শনেই গড়ে উঠে। সমাজের সাতকাহনে জীবন থেমে থাকে না। তাঁর একটি অবৈধ রাতের কাহিনি-তে আমরা আরাে দেখতে পাই যে, সময়কে থমকে যেমনি দেয়া যায় না, তেমনি জীবনের ও গতি ঘামবার নয়- এঁকেবেঁকে সমাজের প্রচলিত গঞ্জি বাইরে যেয়েও তা আবার সমাজের মধ্য দিয়েই সমান। আমাদের এই সমাজ সত্যিই অতি স্থিতিস্থাপক। তাঁর উল্লেখযােগ্য উপন্যাস 'বান সম্পূর্ণরূপে নােয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় প্রকাশতি প্রথম গ্রন্থ। এটি বাংলাসাহিত্যের একটি অমূল্য সম্পদ 'যেহেতু কাব্যগ্রন্থটিতে কৰি ব্যঙ্গ-স্ক্রিপের মাধ্যমে সমাজের অসঙ্গতি, কিছু মুখােশধারী স্বার্থান্বেষী মানুষের স্বরূপ উন্মোচন করেন। যা পরবর্তীতে ঐ কায়েমী গােষ্ঠীর গাত্রদাহ হয়ে উঠে। 'অলি-গলি শতপথ’ যদিও তাঁর প্রথম জীবনের লেখা তথাপি 'এ গ্রন্থে কবি অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে নাগরিক জীবনের খুঁটিনাটি বিষয়গুলাে পরিপূর্ণভাবে তুলে ধরেছেন। তাঁর এই লেখায় তিনি সুস্পষ্টরূপে চিত্রায়িত করেন যে, জীবন বিচিত্র ও অপ্রতিরােধ্য। কবি তাঁর ‘এই দেশ, এই মানুপ্পো’ কাব্যগ্রন্থে জীবনের বহুমাত্রিক আবেদন এবং নারী ও প্রকৃতি প্রেমের স্বাক্ষর রেখেছেন।